শশীকলা পুষ্পা। ছবি: পিটিআই
ভালবাসা, স্নেহ, বিশ্বাসঘাতকতা, ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল। কী নেই? যেন বলিউডের ব্লকবাস্টার।
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা আর তাঁর ঘনিষ্ঠ শশীকলার সম্পর্ক নিয়ে ওয়াকিবহাল দক্ষিণের অলি-গলি। কিন্তু আজ যেটি সংসদে হল, তার নায়িকা সেই শশীকলা নন। জয়ললিতার ঘনিষ্ঠ শশীকলার পদবী নটরাজন। আর আজ সংসদে জয়ললিতার দলের যে শশীকলা কেঁদে ভাসালেন এবং তার পর দল থেকে বহিষ্কৃত হলেন— তিনি শশীকলা পুষ্পা।
এখানেও অবশ্য মশলার কমতি ছিল না। টুঁটি চেপে ধরা, চড়-থাপ্পড়, প্রেম-ভালবাসা, কান্না...। ‘পুষ্পা, আই হেট টিয়ার্স’ সংলাপটুকু যা অনুপস্থিত!
সোমবার রাজ্যসভা বসতেই দলিত-নিগ্রহ নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন পি জে কুরিয়েন। পরিস্থিতি সবে মাত্র খানিক নিয়ন্ত্রণে এনেছেন, তখনই বিস্ফোরণ শশীকলা পুষ্পা-র। নিজের আসন থেকে কান্না জড়ানো গলায় বলতে লাগলেন, ‘‘তামিলনাড়ুতে আমার জীবন নিরাপদ নয়। সরকার কি আমাকে বাঁচাবে? আমার নিরাপত্তা দরকার!’’ সকলে তাজ্জব! তাঁদের আরও তাজ্জব বানিয়ে শশীকলা বলেন, ‘‘যদি কোনও দলের নেতা নিজের সাংসদকে চড় মারেন, তা হলে মানুষের সম্মান কি একটুও অবশিষ্ট থাকে?’’ বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তামিলনাড়ুতে তাঁর দলের প্রবল প্রতিপক্ষ করুণানিধির দলের সাংসদ তিরুচি শিবার সঙ্গে তাঁর প্রবল বাগবিতণ্ডার কথাও কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকেন। ডিএমকে আর কংগ্রেস এ বার পুরোদস্তুর শশীকলার সমর্থনে নেমে পড়ে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই খবর এল, জয়ললিতা তাঁর দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য শশীকলাকে সব পদ থেকে বরখাস্ত করেছেন।
দু’দিন আগেই দিল্লি বিমানবন্দরে তিরুচি শিবার টুঁটি চেপে চারটি থাপ্পড় কষিয়েছিলেন কিন্তু শশীকলাই। তাঁর অভিযোগ ছিল, এক বিমানে শশীকলার সঙ্গে সফর করবেন না বলে শিবা নাকি ‘আম্মা’র সম্পর্কে কুকথা বলেছেন! আর আম্মার অপমান সহ্য করতে না পেরেই নাকি শশীকলা হাত তুলেছেন শিবার গায়ে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফ কর্মীরা কোনও রকমে তাঁদের আলাদা করেন। শশীকলা চেন্নাই ফিরে গেলেও শিবা সে দিন দিল্লিতেই থেকে যান।
এর পরেও আম্মা তবে শশীকলার উপরে রাগলেন কেন?
গোটাটাই দক্ষিণী রাজনীতির চিত্রনাট্য। ওয়াকিবহাল মহলের খবর, ক্ষমতায় আসার পরে জয়ললিতা এখন ডিএমকে ও কংগ্রেস ভাঙিয়ে লোকজন নিজের দলে নিয়ে আসছেন। বদলা নিতে করুণানিধিও জয়ললিতার দলে ভাঙন ধরাতে চাইছেন। দু’বছর আগে স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকে তিরুচি শিবার সঙ্গে এডিএমকে সাংসদ শশীকলার ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় উভয়ের ঘনিষ্ঠতার ছবি ভাইরালও হয়। করুণানিধি-কন্যা কানিমোড়ির সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়ে শশীকলার। কানিমোড়ির জন্মদিনে শুভেচ্ছাও জানান তিনি। এগুলো জয়ললিতার কানে আসতে সতর্ক করা হয় শশীকলাকে। পদত্যাগ করার জন্য তাঁর উপর চাপ বাড়তে থাকে।
কিন্তু শশীকলা চাইছিলেন, পদত্যাগ না করে তাঁকে বহিষ্কার করা হোক। তা হলে তাঁর রাজ্যসভার পদটি টিকে থাকে। সেই সূত্র ধরে করুণানিধি একটি চিত্রনাট্য তৈরি করেন। বিমানবন্দরে সকলের সামনে শিবাকে থাপ্পড় মারাও নাকি সেই চিত্রনাট্যেরই অঙ্গ! রবিবার রাতে জয়ললিতা ফোন করে শশীকলাকে ইস্তফা দিতে বলেন। তার পরেই সংসদে এসে আজ কান্নাকাটি জুড়ে দেন শশীকলা। এত কাণ্ডের পরে শশীকলা যা বলেছেন, তা আরও বিস্ফোরক। তিনি দাবি করেন, ‘‘দলের জন্য এত মেহনত করেছি। তার পরেও জয়ললিতা আমাকে চড় মেরেছেন। আজ বহিষ্কার করলেন, এখন আমি স্বস্তি পেলাম।’’ এর পরেই তিনি ধন্যবাদ জানান সনিয়া ও রাহুল গাঁধীকে— সংসদে তাঁকে সমর্থন করার জন্য। ধন্যবাদ জানান ডিএমকে নেতাদেরও।
তা হলে কি এ বার কংগ্রেস বা ডিএমকে-তে যাচ্ছেন শশীকলা? তাঁর জবাব, ‘‘আগে তো বহিষ্কারের ব্যাপারটা ঠিক করে দেখে নিই! তার পর ভেবে দেখব।’’