অখিলেশ যাদব ও মায়াবতী।— ফাইল চিত্র।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে জোট বাঁধতে চলেছেন অখিলেশ-মায়াবতী। তবে সেই জোটে কংগ্রেসকে সামিল করতে চাইছেন না তাঁরা। জোট নিয়ে আলোচনা করতে শুক্রবারই সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টির শীর্ষ নেতৃত্ব নয়াদিল্লিতে বৈঠক করেন। সেই আলোচনায় এমনটাই উঠে এসেছে বলে অখিলেশের সমাজবাদী পার্টি (এসপি) সূত্রে খবর।
ওই বৈঠকে জোট নিয়ে দু’জনের মধ্যে কথা হয়েছে। তবে আসন ভাগাভাগি নিয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আগামী ১৫ জানুয়ারির পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এসপিএবং মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) নিজেদের মধ্যে আসন সমান ভাবে ভাগ করে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে ওই সূত্রটি জানিয়েছে। অজিত সিংহের রাষ্ট্রীয় লোক দল (আরএলডি) –কে তিনটে আসন দেওয়া হতে পারে। তবে অমেঠী ও রায়বরেলী— এই দুটো আসন কংগ্রেসের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে বলে ওই সূত্রটির দাবি।
কংগ্রেসের সঙ্গে যে জোটে যাবেন না অখিলেশ, ইঙ্গিতটা মিলেছিল মধ্যপ্রদেশে সরকার গঠনের পর। অখিলেশ চেয়েছিলেন, মধ্যপ্রদেশে তাঁর দলের বিধায়ককে কোনও মন্ত্রিত্ব দেওয়া হোক। কিন্তু তা করেনি কংগ্রেস। আর তাতেই নাকি ক্ষুব্ধ হন অখিলেশ। তিনি উষ্মা প্রকাশ করে জানান, মধ্যপ্রদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পৌঁছতে তাঁর দল যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে কংগ্রেসকে। কিন্তু তার পরেও কথা রাখেনি তারা। সপা-র বিধায়ককে মন্ত্রিত্ব না দিয়ে যে কংগ্রেস নিজের ক্ষতিই করল সেই ইঙ্গিতও দেন অখিলেশ। সেই সময় তিনি বলেন, “আমাদের বিধায়ককে মন্ত্রিত্ব না দিয়ে উত্তরপ্রদেশে নিজেদের পথটা পরিষ্কার করে দিল কংগ্রেস।”
কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে উত্তরপ্রদেশে লড়বেন না অখিলেশ-মায়াবতী, এই খবরটা চাউর হতেই পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেয় কংগ্রেস। দলের শীর্ষ নেতা রাজ্যসভার সাংসদ পিএল পুনিয়া জানিয়ে দেন, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস একাই লড়তে প্রস্তুত। তিনি বলেন, “জোটের বিষয়টা গুরুত্বপূর্রণ নয়। আমাদের কর্মীরা প্রস্তুত। আমরা কারও সঙ্গে জোট নিয়ে কথাও বলিনি।”
যখন বিজেপিকে হারাতে মহাজোট তৈরি হচ্ছে, বিজেপি-বিরোধী সব দলগুলি যখন এক জোট হচ্ছে, এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট না করাটা দুর্ভাগ্যজনক বলেই মনে করছেন কংগ্রেস নেতা রাজ বব্বর। তাঁর মতে বিজেপি বিরোধী দলগুলির একসঙ্গে জোট বেঁধেই লড়াই করা উচিত।
আরও পড়ুন: রাফাল নিয়ে নির্দিষ্ট প্রশ্ন ছুড়লেন রাহুল, জবাব এড়িয়ে আবেগকে ঢাল করলেন নির্মলা
আরও পড়ুন: দেশছাড়া হতে হবে না, নাগরিকত্ব নিয়ে সমস্ত অমুসলিমদের আশ্বাস মোদীর
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই জোট যদি হয় তা হলে বিজেপির পক্ষে খুব একটা শুভ সঙ্কেত নয়। এমনিতেই বিধানসভা নির্বাচনে হেরে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল অখিলেশের। মায়াবতীর দলও সে ভাবে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না সে রাজ্যে। বিজেপিকে ধাক্কা দিতে তাই দু’দলই মরিয়া। নিজেদের শক্তিপ্রদর্শন করতে লোকসভা নির্বাচনকেই তাই বেছে নিতে চাইছেন অখিলেশ-মায়া। বিজেপিকে একা ধাক্কা দেওয়া যে সম্ভব নয় সেটা দু’দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ভাল ভাবেই জানেন। তাই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে এ বার পরস্পরের হাত সঙ্গে হাত মেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন অখিলেশ-মায়াবতী।
২০১৭-র বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ৩১২টি আসন পেয়ে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। তাদের মোট প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ৩৯.৬৭ শতাংশ। অন্য দিকে, এসপি পেয়েছিল ৪৭টি আসন। তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ২১.৮২ শতাংশ। বিএসপি পেয়েছিল ১৯টি আসন। তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ২২.২৩ শতাংশ। বিধানসভা ভোটের ফলের দিকে যদি তাকানো যায়, তা হলে দেখা যাবে, এসপি ও বিএসপি-র মোট প্রাপ্ত ভোটের হার ৪৫.০৫ শতাংশ। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের দু’দলের মোট প্রাপ্ত ভোটের হার ৪২.১২। যেখানে বিজেপি একা পেয়েছিল ৪২.৬৩।বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ভাল ফল করলেও গোরক্ষপুর ও ফুলপুর উপনির্বাচনে কিন্তু অখিলেশ-মায়াবতী জোটের কাছে ধরাশায়ী হয় বিজেপি। তাই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লোকসভা নির্বাচনে যদি অখিলেশ-মায়াবতী জোট বাঁধেন তা হলে কিন্তু বিজেপির ক্ষেত্রে চাপ অনেকটাই বাড়বে।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।