National

জিতলে মুখ্যমন্ত্রী ছেলেই, স্নায়ুর লড়াইতে হার মেনে ঘোষণা মুলায়মের

যাদব পরিবারের তুমুল অভ্যন্তরীণ সঙ্ঘাতে ছেলের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন বাবা। ছেলে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। আর বাবা দলের সর্বেসর্বা তথা দেশের প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী। সঙ্ঘাত এত দূর গড়িয়েছিল যে বাবা জানিয়েছিলেন, ছেলে আসন্ন নির্বাচনে দলের তরফে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হচ্ছেন না।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ১৮:৫১
Share:

ছেলের সঙ্গে সঙ্ঘাত আর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলেন না বাবা। —ফাইল চিত্র।

যাদব পরিবারের তুমুল অভ্যন্তরীণ সঙ্ঘাতে ছেলের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন বাবা। ছেলে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। আর বাবা দলের সর্বেসর্বা তথা দেশের প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী। সঙ্ঘাত এত দূর গড়িয়েছিল যে বাবা জানিয়েছিলেন, ছেলে আসন্ন নির্বাচনে দলের তরফে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হচ্ছেন না। কিন্তু অখিলেশ যাদবের ‘অপমানে’ বিদ্রোহের পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গেল মুলায়ম সিংহ যাদবের দলে। ইতিহাস তাঁকে ক্ষমা করবে না— এমন চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি শুনতে হল সমাজবাদী পার্টির (সপা) প্রাণপুরুষকে। দড়ি টানাটানিতে অবশেষে হারই মানতে হল ‘নেতাজি’কে। মুলায়ম সোমবার ঘোষণা করলেন, অখিলেশই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী।

Advertisement

৪০৩টি আসন উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায়। ২২৯ আসন ঝুলিতে ভরে ২০১২ সালে ক্ষমতায় এসেছিল সপা। কিন্তু আগামী বছরের গোড়ায় যে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে গো-বলয়ের হৃদয়পুরে, সে নির্বাচনে ১০০টিরও কম আসন পেতে পারে সপা। মুলায়মকে লেখা চিঠিতে তাঁর ভাই তথা সপার অন্যতম শীর্ষ নেতা রামগোপাল যাদব এমনই আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। রামগোপাল লিখেছেন, সপা যদি ১০০-রও নীচে নেমে যায়, তা হলে তার সব দায় মুলায়মকেই নিতে হবে। মুলায়মের আর এক ভাই তথা উত্তরপ্রদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী শিবপাল সিংহ যাদবের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশের সঙ্ঘাতে যে ভাবে শিবপালের পক্ষ নিচ্ছিলেন মুলায়ম, তার জেরেই সপাকে শোচনীয় পরাজয়ের মুখ দেখতে হবে, এমনই ইঙ্গিত ছিল রামগোপালের। তবে অস্বস্তি শুধু রামগোপালেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ছেলে অখিলেশও নাম না করে বেনজির হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন বাবাকে। অখিলেশ বলেছিলেন, ‘‘ইতিহাস খুব নিষ্ঠুর। সে কাউকে ক্ষমা করে না।’’ স্নায়ুর লড়াই আর চালাতে পারেননি মুলায়ম। দুর্নীতি এবং প্রশাসনিক ক্ষমতার যথেচ্ছ অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে যে শিবপালের বিরুদ্ধে, দলে তারই কর্তৃত্ব স্পষ্ট ভাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সপার তরুণ-তুর্কি মুখ তথা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশের গুরুত্বকে যে ভাবে অস্বীকার করতে শুরু করেছিলেন মুলায়ম, তা আর তিনি চালিয়ে যেতে পারলেন না। দলের অন্দরে ঘনাতে থাকা ক্ষোভের আঁচটা টের পেলেন। টানাপড়েনে আপাতত ইতি টেনে জানিয়ে দিলেন, অখিলেশই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী আসন্ন নির্বাচনেও।

আরও পড়ুন: জেটলির খোঁচা, তালাক তরজা এড়াল কংগ্রেস

Advertisement

সপার অভ্যন্তরীণ সমীকরণে শিবপাল সিংহ যাদব বরাবরই ক্ষমতাশালী। কারণ তিনি ভাইদের মধ্যে মুলায়মের সবচেয়ে প্রিয়। রামগোপাল যাদবের সঙ্গে শিবপালের বিরোধও দীর্ঘ দিনের। কিন্তু মুলায়ম বার বার শিবপালের পক্ষ নেওয়ায়, রামগোপাল পেরে ওঠেননি কোনও কালেই। অখিলেশ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর সমীকরণ বদলেছে। ভাইপো তথা মুখ্যমন্ত্রীকে ছাপিয়ে যাওয়ার যে সব চেষ্টা বিভিন্ন সময়ে কাকা তথা শিবপাল করেছেন, তা অখিলেশ মেনে নেননি। সে লড়াইতে অখিলেশ আর এক কাকা রামগোপালকে শুরু থেকেই পাশে পেয়েছেন। অমর সিংহ নতুন করে সপাতে ফেরার পর দু’পক্ষে বিভাজন বাড়তে থাকে। মুলায়ম আসরে নামেন এবং শিবপালের পক্ষ নেন। কিন্তু তিনি শিবপালের পক্ষ নিলেই সব বিতর্কে ইতি পড়বে বলে মুলায়ম যেমন ভেবেছিলেন, তেমনটা এ বার হয়নি। বরং অখিলেশের অপমানের প্রতিবাদে দলের মধ্যে ক্ষোভ ক্রমশ বেড়েছে। শেষে মুলায়ম মোক্ষম চাল দেওয়ার ঢঙে জানিয়েছিলেন, আসন্ন নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে সপা কাউকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরে লড়বে না। সপা জয়ী হলে, বিধায়করা স্থির করবেন, মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, জানিয়েছিলেন মুলায়ম। কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত হয়েছে। বেনজির ভাবে দলের মধ্যে থেকে হুঁশিয়ারি আসতে শুরু করেছে ‘নেতাজি’র দিকেই। মুলায়ম বুঝে গিয়েছেন, সপার নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব তাঁর হাতে আর নেই। মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের অনুগামীর সংখ্যাও এখন নেহাৎ কম নয়।

মুলায়ম শেষ পর্যন্ত সংঘর্ষবিরতির পথেই হাঁটলেন। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবই ফের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী সপার তরফে, ঘোষণা করলেন মুলায়ম। গত পাঁচ বছরে সরকার সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেছে, এ কথা যদি বলতে হয় নির্বাচনী প্রচারে, তা হলে অখিলেশকে অস্বীকারই বা করেন কী করে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন