Jaipur Literature Festival

Kashmir Crisis: জন্ম থেকে শান্তি দেখিনি, সেখানে কি ধর্মের বিভাজন মানায়? প্রশ্ন কাশ্মীরি তরুণ শিল্পীর

রাজনৈতিক তাপ কাশ্মীরের সংস্কৃতির উপরেও প্রভাব ফেলেছে। উপত্যকার লোকগান গেয়ে সে কথা মনে করান শিল্পী আলি সইফুদ্দিন।

Advertisement

সুচন্দ্রা ঘটক

জয়পুর শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২২ ১৫:২৯
Share:

আলি সইফুদ্দিন। নিজস্ব চিত্র।

বয়স ৩০। নাম আলি সইফুদ্দিন। শ্রীনগরে বাড়ি। সেখানেই বাস। সেখানেই কাজ। জন্মে থেকে কখনও শান্তি দেখেননি কাশ্মীর উপত্যকায়। নিজের অঞ্চলে শান্তি ফিরে পেতে চান। কাশ্মীরের সম্মান ফেরাতে চান। স্বাধীন চিন্তা নিয়ে বেড়ে ওঠা দেখতে চান উপত্যকার শিশুদের। তাই বলে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের সঙ্গে যা ঘটেছে, তাকে সমর্থন করেন না।

ধর্মের উপরে অঞ্চল। সকলেই কাশ্মীরের মানুষ। সকলে মিলে কাশ্মীরে থাকবেন। জয়পুরের সাহিত্য উৎসবে যোগ দিতে এসে এমনই ভাবনা প্রকাশ করলেন তরুণ গায়ক। গানও গাইলেন দেশ-বিদেশের অতিথিদের সেই সমাগমে। কী গান? মূলত কাশ্মীরের গান। সে কাশ্মীরে মুসলমান আছেন, পণ্ডিতেরাও আছেন। ধর্মের ঊর্ধ্বে গিয়ে উপত্যকার কথা তুলে আনা তাঁর গানের লক্ষ্য। যবে থেকে মন দিয়েছেন গানে, সে কাজই করে চলেছেন রাত-দিন। বলেন, ‘‘’৯২ সালে জন্মেছি। তার পর থেকে এক দিনের জন্যও শান্তি দেখিনি আমাদের অঞ্চলে। সেখানে কি ধর্মের বিভাজন মানায়?’’

কিন্তু গান কেন? তাঁর অঞ্চলের সংস্কৃতিতে সঙ্গীত সাধনার জায়গা আছে কতটুকু? আলি এই প্রশ্নের সঙ্গে পরিচিত। প্রস্তুত। এই লড়াইটিও লড়তে হয় তাঁকে। বক্তব্য, ‘‘অনেকে অনেক কিছু বলবেন। কিন্তু সব তো মানলে চলবে না। যেমন হিজাব চাপিয়ে দিলেই পরে থাকা যাবে না, তেমন সুর বন্ধ করতে চাইলেও তা করা যাবে না। সঙ্গীত রয়েছে উপত্যকার শিরায় শিরায়। তা দিয়েই উপত্যকার বাসিন্দাদের নতুন করে সতেজ করে তোলা যায়।’’

Advertisement

তার মানে কি ঝিমিয়ে পড়েছে উপত্যকা? নড়ে বসেন আলি। নরম কণ্ঠে মনে করান, ঝিমিয়ে পড়ার ‘সৌভাগ্য’ নেই। বলেন, ‘‘আমি দিল্লিতে লেখাপড়ার জন্য গিয়েছি। ভারতের অন্য জায়গাতেও গিয়েছি। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের যে সব গল্প সকলের মুখে মুখে ঘোরে, তা জানি। ভগৎ সিংহদের শ্রদ্ধা করি। আর কাশ্মীরে ফিরলে দেখি, তেমন পরিস্থিতি এখনও বহাল। আমাদের আশপাশে এমন স্বাধীনতা সংগ্রামীরাই বাস করেন এখনও। এত বছরেও পরিস্থিতি বদলায়নি। তাই কাশ্মীরের গান গাই। আমার প্রিয় কবি হাবা খাতুনের গান আছে ‘সোলহামা’। সকল কাশ্মীরি চেনেন। তিনি কাশ্মীরের বীর শাসকদের গল্প বলেছেন সেই কবিতায়। এখন আর সে সব দিন নেই। নিজেদের লোক আর শীর্ষ আসনে নেই। এ এক দুঃখের গান। সেই গান আমিও গাই।’’

ক্লান্তি এসেছে। লড়াইয়ের ক্লান্তি নয়। না পাওয়ার ক্লান্তি। মনে করান আলি। আর সে কারণেই সঙ্গীত। নিজেদের একটু সতেজ রাখতে সাহায্য করে। বলেন, ‘‘আমি কিন্তু মূলত নিজের জন্যই গান গাই। আর আমার গান থেকে আরও কারও মন ভাল হলে আনন্দ পাই।’’

Advertisement

আঞ্চলিক বহু লোকগান নিজের মতো করে ফিরিয়ে আনছেন আলি। তিনি মনে করেন, এত দিনের রাজনৈতিক তাপ এই অঞ্চলের সংস্কৃতির উপরেও প্রভাব ফেলেছে। অনেকেই এখন আর সে ভাবে মনে রাখেন না কাশ্মীরের সংস্কৃতির নানা দিক। গণহত্যা, লড়াই, হিংসাই হয়ে দাঁড়িয়েছে উপত্যকার বর্তমান পরিচয়। কিন্তু এর আগের কাশ্মীর একেবারে আলাদা। সেই সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে না পারলে শান্তিই বা ফিরবে কী করে, প্রশ্ন তোলেন আলি। বলেন, ‘‘সঙ্গীতের মধ্যে যেমন সংস্কৃতির উদ্‌যাপন রয়েছে, তেমনই রয়েছে আগামীর আশা। তাই ভুলতে বসা কিছু লোকগান ফিরিয়ে এনে আমি ভূত আর ভবিষ্যতের মধ্যে সেতু গড়ার চেষ্টা করছি।’’

আলি দেখেছেন, এই সময়ের কাশ্মীরি তরুণ সমাজ নিজেদের সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতন নন। এত হিংসার মাঝে তাঁরা সুযোগও পাননি প্রাচীন কাশ্মীরি সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার। তবে তাঁরা কিসের জন্য লড়বেন? কোন কাশ্মীরে নিজেদের ঐতিহ্য তুলে ধরবেন? কেনই বা স্বতন্ত্র কাশ্মীর চাইবেন? এমনই সব প্রশ্ন ঘুরপাক খায় তরুণ শিল্পীর মনে। তাই কখনও কাশ্মীরি সুফিয়ানা, কখনও ছাক্করের মতো লোকগীতি শোনান নিজের উপত্যকার তরুণ-তরুণীদের। প্রবীণ কাশ্মীরিদের সঙ্গে সেই সুরই মজবুত করবে তরুণ সমাজের সম্পর্ক, বিশ্বাস আলির। ‘জয়পুর লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল’ এসে তেমনই একটি গান শোনান আলি।

তবে শুধুই যে কাশ্মীরের আঞ্চলিক গান শোনান আলি, তেমন নয়। নিজের গানও তৈরি করেন। তার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন ষাটের দশকের প্রতিবাদী সঙ্গীতকারদের থেকে। আমেরিকার লোকশিল্পীদের গান কাশ্মীরে বসে শোনেন। আর নতুন করে প্রতিবাদের সুর বাঁধেন। আর সঙ্গে থাকে গজল। মির্জা গালিব থেকে ফৈয়জ আহমেদ ফৈয়জ— উর্দু কাব্যে বহুমুখী সংস্কৃতির কথা যে আগেও এসেছে বার বার। সে ভাষার কাব্য কত উদার। গান গেয়ে তা-ও মনে করান আলি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন