জোরদার যুদ্ধের প্রহর গুনছে সব পক্ষ

রাত পোহালেই জন্মদিন বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণীর। কিন্তু কাল সেই জন্মদিনের কোনও উৎসব হচ্ছে না। তাঁর মেয়ে প্রতিভা স্থির করেছেন, আডবাণীর জন্মদিনের উৎসব তাঁরা পালন করবেন আরও দু’ সপ্তাহ পরে। এ মাসের শেষ নাগাদ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৫ ০৪:২৬
Share:

রাত পোহালেই জন্মদিন বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণীর। কিন্তু কাল সেই জন্মদিনের কোনও উৎসব হচ্ছে না। তাঁর মেয়ে প্রতিভা স্থির করেছেন, আডবাণীর জন্মদিনের উৎসব তাঁরা পালন করবেন আরও দু’ সপ্তাহ পরে। এ মাসের শেষ নাগাদ।

Advertisement

কেন?

পরিবারের তরফে তার কোনও ব্যাখ্যা অবশ্য মেলেনি। কিন্তু অনেকেই মনে করছেন, এর মূল কারণ, কাল বিহার ভোটের ফলপ্রকাশ। যদি ঘটনাচক্রে কাল ভোটের ফল বিজেপির অনুকূলে না-যায় এবং দেখা যায় যে আডবাণী তাঁর জন্মদিনের উৎসব পালন করছেন, তা হলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে। দিনভর এটা নিয়েই আলোচনা হবে নানা স্তরে। এমনিতেই নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের উত্থানে দলের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে কোণঠাসা আডবাণী। তার উপর যদি বিহারের মহা-গুরুত্বপূর্ণ ভোটে মোদী-অমিত শাহের মুখ পুড়িয়ে দল হেরে যাওয়ার দিন ধুমধাম করে উৎসব হয়, তা হলে যে কী হতে পারে, সেটা বিজেপির অনেকে আলোচনাই করতে চাইছেন না প্রকাশ্যে!

Advertisement

প্রায় এক মাস ধরে চলা বিহারের পাঁচ দফার নির্বাচনের শেষ দিনে একের পর এক বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল দেখে আতঙ্কে দুই শিবিরই। অধিকাংশ বুথ ফেরত সমীক্ষাই বলছে, লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডি। তবে শেষ হাসিটা হাসতে পারেন লালু-নীতীশ। এমনকী একটি সমীক্ষা তো লালু-নীতীশকে অনায়াসে সরকার গড়ার পূর্বাভাসও দিয়েছে। কিন্তু সেটির প্রচার কতটা বাস্তবোচিত হবে, তা নিয়ে ধন্ধে থেকে শেষ পর্যন্ত আর সেটি প্রচারই করেনি টেলিভিশন চ্যানেলটি। বুথ ফেরত সমীক্ষায় অবশ্য অন্য মতও দেখা গিয়েছে। একটি সমীক্ষা বিজেপি-জোটকে সরাসরি সরকার গড়ার অবস্থায় দেখিয়েছে। আর একটি সমীক্ষায় লড়াই সমানে-সমানে দেখালেও জানিয়েছে, কোনও রকমে সরকার গড়ার মতো আসন জুটে যাবে বিজেপি জোটের কপালে।

এক-একটি সমীক্ষায় যখন এক-এক রকম ফল বেরোচ্ছে, তখন রাত পোহালে বাস্তব পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, তা নিয়েই উদ্বেগ সব শিবিরে। দিল্লিতে গত কাল রাতে অরুণ জেটলির নৈশভোজ হোক বা আজ প্রকাশ জাভড়েকরের দীপাবলি মিলন মায় শনিবার দিনভরের যে কোনও সরকারি অনুষ্ঠান — সর্বত্রই এক আলোচনা। কোন বুথ ফেরত সমীক্ষা মিলবে? রাতভর তাই উৎকণ্ঠায় সব শিবির।

আর্থিক সংস্কারের কথা বলে আজ শ্রীনগরে গিয়ে প্যাকেজ ঘোষণা করে মোদী যতই বোঝানোর চেষ্টা করুন, বিহারের হার-জিতের আঁচ তাঁর গায়ে পড়বে না। কিন্তু ঘটনা হল, এ বারের বিহার ভোটে বিজেপির তুরুপের তাস ছিলেন মোদীই। বিজেপি শিবিরের বহু প্রথম সারির নেতাই সে কথা মেনে নিচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, মহাজোট শিবিরে নীতীশ কুমার মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হলেও বিজেপির মুখ ছিলেন মোদীই। রবিবারের ফল বিজেপির অনুকূলে গেলে দলের নেতারা হইহই করে প্রচারে নামবেন যে, এটি মোদী-জাদু! আর যদি হার হয় বিজেপির? সেখানে হাজারো যুক্তি সাজানো হলেও তোলা হবে না মোদীর নাম! ঠিক যে ভাবে অতীতে কংগ্রেস জিতলে সনিয়া-রাহুল গাঁধীর জয়ধ্বনি দেওয়া হতো।

হারলে দায় পড়ত দলের ঘাড়ে!

জেডিইউ নেতারা ভোটে জেতা নিয়ে প্রকাশ্যে খুব বেশি মন্তব্য না করলেও আশাবাদী যে, বিহারে আটকে যাবে মোদী-হাওয়া। শুধু নীতীশের হাত ধরে আসা উন্নয়ন নয়। বিজেপির সাম্প্রতিক একাধিক সিদ্ধান্ত এবং প্রচারে নেমে কিছু নেতার বক্তব্য বিহারবাসী ভাল ভাবে নেননি বলেও মনে করছেন জেডিইউ নেতারা। তাঁদের দাবি, বিহার ভোটের ফল নীতীশের অনুকূলে গেলে তিনি অনেকটাই মোদীর উচ্চতায় উঠে যাবেন। এই নেতাদের বক্তব্য, লোকসভা ভোটে মোদী-হাওয়ার মুখে বিহারে কার্যত উড়ে গিয়েছিল নীতীশের দল। তার পর ফের ঘুরে দাঁড়ানো শুধু নয়, বিহারে মোদী-হাওয়াকে রুখে দিলে জাতীয় রাজনীতিতে অনেকটাই বাড়বে নীতীশের গুরুত্ব। যদিও বাস্তবে কী হবে, তা নিয়ে সংশয়ে তাঁরা। বিহারের একাধিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে নীতীশের জোটসঙ্গী লালু প্রসাদের দল আরজেডি-র আসন সংখ্যা তুলনায় অনেক বেশি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে দড়ি টানাটানির আশঙ্কা করছেন তাঁরা। যদিও আজ স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে অধিকাংশ বুথ ফেরত সমীক্ষা উড়িয়ে আরজেডি-প্রধান বলেছেন, মহাজোটই সরকার গড়বে এবং আরজেডি বেশি আসন পেলেও নীতীশই হবেন মুখ্যমন্ত্রী।

আর যদি নীতীশ-লালু-কংগ্রেসের মহাজোট ক্ষমতায় না আসতে পারে? সে ক্ষেত্রে নীতীশের অবস্থা নিয়ে বেশ সংশয়ে অনেকেই। কারণ, বিজেপি হারলে সেই অর্থে মোদী বা অমিত শাহের এই মুহূর্তে বড় কিছু হারানোর নেই। অতীতে লালুর একাধিক বার উত্থান-পতন হয়েছে। মুখ থুবড়ে পড়েও ফের
উঠে দাঁড়িয়েছেন লালু। কিন্তু নীতীশ? হেরে গেলে জেডিইউ-প্রধানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়ে যাবে বলে মনে করছেন তাঁর দলেরই বহু নেতা। দীর্ঘ দিন ধরে বিজেপির সঙ্গে ঘর করে তাদের সঙ্গ ছাড়ার ফল ভুগেছেন লোকসভা ভোটে। পরিস্থিতি বুঝে বিজেপিকে ঠেকাতে একদা মহাশত্রু লালুর হাত ধরেছেন। এমনকী কংগ্রেসেরও হাত ধরেছেন বিহারের গদি দখলে রাখতে। কিন্তু তার পরেও যদি ভোট বৈতরণী পার না করতে পারেন, তা হলে নীতীশ কী করে ফের ঘুরে দাঁড়াবেন, সেটা নিয়েই চিন্তায় তাঁর দলের
বহু নেতা।

বিজেপি শিবির অবশ্য জয় নিয়ে চূড়ান্ত আশাবাদী। বিজেপি নেতাদের নিজস্ব যুক্তিও তৈরি। তাদের মতে, বিহার জয়ের সবচেয়ে বড় অঙ্ক হল তিনটি। এক, মোদীর ক্যারিশমা। দুই, তিন কোটির বেশি যুবক যাঁরা উন্নয়ন চান। মোদীর সভায় যুব সম্প্রদায়ের ভিড়ই ছিল বেশি। জাত-পাতের ঊর্ধ্বে উঠে এই যুবরাই সব থেকে বেশি ভোট দিয়েছে বিজেপিকে। আর তিন, মহিলাদের সমর্থন। ভোট প্রচারে লালুর ‘জঙ্গলরাজের’ বিরুদ্ধে ভরপুর প্রচার করেছে বিজেপি। সেই সময়ের কথা মনে করিয়ে দেওয়ায় মহিলাদের সিংহ ভাগেরই সমর্থন মহাজোটের পরিবর্তে বিজেপি-মুখী হবে বলে দাবি দলের নেতাদের।

ঘটনা হল, বিজেপি নেতারাও অনেকেই মানছেন যে, বিহার ভোটে তাঁদের দল খুব অঙ্ক কষে জাত-পাতের তাস খেলেছে। জাত-পাতের ভিত্তিতে আসন বণ্টন তো আছেই, ভোটের শেষ লগ্নে মেরুকরণের রাজনীতিও করেছে দল। বিজেপির এক প্রথম সারির কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের তাস খেলার পাশাপাশি জাতপাতের হিসেবও করেছি আমরা। মহাজোট শুধু মাত্র লালুর যাদব ও মুসলমান এবং নীতীশের কুর্মি ভোটের ভিত্তিতে প্রচার করেছে। এদের বাদ দিয়ে বাকি সব শ্রেণির ভোটে থাবা বসানোর চেষ্টা করেছি আমরা।’’

অপেক্ষা আর কয়েক ঘণ্টার। যাবতীয় প্রত্যাশা, আশা-আশঙ্কার অবসান হবে ভোটবাক্স খুললেই। উত্তর মিলবে সব প্রশ্নের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement