স্মৃতি ইরানির তৈরি বিড়ম্বনা ঢাকতে এ বারে কোমর বেঁধে নামল বিজেপি। বিরোধীদের আক্রমণ ভোঁতা করে দিতে তারা ময়দানে নামাল এডিএমকের মতো বন্ধু দলকেও।
সংসদে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতির বিরুদ্ধে অধিকার ভঙ্গের নোটিস এনেছে কংগ্রেস। এর পাল্টা বিজেপিও আজ কংগ্রেসের জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার বিরুদ্ধে অধিকার ভঙ্গের নোটিস দিল। পাশাপাশি জয়ললিতার দল এডিএমকে আজ দিনভর সংসদ অচল রাখল পি চিদম্বরমের ছেলে কার্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে। ফলে আজ রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা নিয়ে বিতর্কে বক্তব্য রাখারই সুযোগ পেলেন না কংগ্রেস সহসভাপতি রাহুল গাঁধী। এখানেই শেষ নয়, বিজেপি ইশরাত জহান কাণ্ডে ইউপিএ জমানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিদম্বরমের ভূমিকা নিয়েও তদন্তের দাবি তুলেছে এ দিন।
হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রের আত্মহত্যা এবং জেএনইউয়ের ঘটনা নিয়ে স্মৃতি ক’দিন আগে নাটকীয় বক্তব্য রেখেছিলেন সংসদে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই ভিডিও সোশ্যাল নেটওয়ার্কে পোস্ট করেন। বিরোধীদের অভিযোগ, স্মৃতির বক্তব্যে বহু অসঙ্গতি রয়েছে। আত্মঘাতী ছাত্র রোহিত ভেমুলার মা ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকও স্মৃতির বক্তব্য খণ্ডন করেছেন। খড়গহস্ত হয়ে উঠেছে বিরোধীরাও। সংসদের দুই সভাতেই তারা স্মৃতির বিরুদ্ধে অধিকার ভঙ্গের নোটিস দিয়েছে। রাজ্যসভা সেটি গ্রহণ করলেও লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন এখনও তা করেননি। স্মৃতি আজই আত্মপক্ষ সমর্থনে যাবতীয় তথ্য স্পিকারের কাছে জমা দিয়েছেন।
বিরোধী আক্রমণ মোকাবিলায় দল ও জোটের সাংসদদের একজোট করেছে বিজেপিও। আজ সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের সামনে সংসদীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু বলেন, স্মৃতি ও বন্দারু দত্তাত্রেয়র বিরুদ্ধে বিরোধীদের কোনও অভিযোগ ধোপে টেকে না। উপস্থিত সাংসদরা হাততালি দিয়ে সেই বক্তব্য সমর্থন করেন। এর পরই বিজেপির ১০ সাংসদ কংগ্রেসের জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার বিরুদ্ধে অধিকার ভঙ্গের নোটিস জমা দেন। অভিযোগ, আত্মঘাতী ছাত্রকে কখনওই ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ বা ‘বর্ণবিদ্বেষী’ বলেননি বন্দারু। কিন্তু জ্যোতিরাদিত্য সে কথা বলে সংসদকে বিভ্রান্ত করেছেন। বিজেপি সূত্রই জানাচ্ছে, নোটিসের বদলে নোটিসই হোক বা অন্যদের দিয়ে সংসদে হট্টগোল বাধানো— কংগ্রেসের উপরে পাল্টা চাপ তৈরি করাই দলের লক্ষ্য।
বিজেপির এই কৌশল নিয়ে কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপসিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘আজ বন্ধু দল এডিএমকে-কে দিয়ে বিজেপি গোটা দিন সংসদ অচল রাখল। বাজেটে মধ্যবিত্তের উপর কোপ পড়া নিয়ে অসন্তোষ, জেএনইউ এবং হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা থেকে নজর ঘোরাতেই এই কৌশল। দিল্লিতে মোদী ও তামিলনাড়ুতে জয়ললিতা ক্ষমতায়। কার্তির বিরুদ্ধে প্রমাণ থাকলে সরকার পদক্ষেপ করুক। এটা চিদম্বরমের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা ছাড়া কিছু নয়।’’
বিজেপির পাল্টা আক্রমণের কৌশলে রাহুল আজ বিতর্কে অংশ নিতে পারেননি সংসদে। কাল দুপুরে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রাখবেন। সেই সময় রাহুল ফের বলার সুযোগ পান কি না, সেটাই দেখার। কংগ্রেসের আক্রমণ ভোঁতা করে দিতে বিজেপির কৌশল কাজে এসেছে অন্য ভাবেও। ডামাডোলের মধ্যে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী রামশঙ্কর কঠেরিয়ার বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে গুছিয়ে প্রতিবাদও জানাতে পারেনি কংগ্রেস।
বৃহস্পতিবার আগরায় খুন হন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতা অরুণ মহাউর। বিরোধীদের দাবি, রবিবার আগরায় ওই নেতার শোকসভায় কঠেরিয়া বলেছিলেন, ‘‘হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং একজোট হয়ে লড়তে হবে। এমন উদাহরণ তৈরি করতে হবে যাতে হত্যাকারীরা ছাড় না পায়।’’ এই মন্তব্যে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় কঠেরিয়া আজ দাবি করেন, ‘‘কাগজে যা ছাপা হয়েছে, তা মিথ্যে। আমি কোনও সম্প্রদায়ের নাম করিনি। শুধু বলেছিলাম, খুনিদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিত। আর বলেছি, নিরাপত্তার স্বার্থে হিন্দুদের একজোট হওয়া উচিত।’’ কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর মন্তব্যের সমালোচনায় আজ লোকসভায় মুখ খোলেন কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খড়্গে, আসাদুদ্দিন ওয়াইসির মতো নেতারা। যদিও বিতর্ক এগোতে পারেনি এডিএমকে সংসদ অচল করে দেওয়ায়। বিরোধীদের প্রতিবাদের পরিসরটি আজ আগাগোড়া দখল করে রাখল বিজেপির দক্ষিণী ‘বন্ধুরা’।