কোমর-জল ঠেলেই সেনা টহল চলছে সীমান্তে

কাঁটা তারের বেড়ার গা ঘেঁষে প্রায় কোমর সমান জল ঠেলে হাঁটছেন এক জওয়ান। পরনে সেনার জংলা পোশাক। হাতে ভারী বন্দুক। পাঁচ দিনের বৃষ্টিতে জম্মুর আখনুর সেক্টর এখন জলের তলায়। কিন্তু তার জন্য ভারতীয় জওয়ানদের রোজকারের টহল কিন্তু থেমে নেই। ঢিল ছোড়া দূরত্বে পাকিস্তানের সীমান্ত। তাই প্রতি চার ঘণ্টা অন্তর নিয়ম করে আখনুরের কানাচক এলাকা টহল দিচ্ছেন জওয়ানরা।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শ্রীনগর শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৫০
Share:

জল ডিঙিয়েই চলছে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে আসার কাজ। রবিবার শ্রীনগরে রয়টার্স ও পিটিআইয়ের তোলা ছবি।

কাঁটা তারের বেড়ার গা ঘেঁষে প্রায় কোমর সমান জল ঠেলে হাঁটছেন এক জওয়ান। পরনে সেনার জংলা পোশাক। হাতে ভারী বন্দুক।

Advertisement

পাঁচ দিনের বৃষ্টিতে জম্মুর আখনুর সেক্টর এখন জলের তলায়। কিন্তু তার জন্য ভারতীয় জওয়ানদের রোজকারের টহল কিন্তু থেমে নেই। ঢিল ছোড়া দূরত্বে পাকিস্তানের সীমান্ত। তাই প্রতি চার ঘণ্টা অন্তর নিয়ম করে আখনুরের কানাচক এলাকা টহল দিচ্ছেন জওয়ানরা। জল, কাদা-মাটির সঙ্গে লড়তে হচ্ছে প্রতি পদে। আছে সাপের ভয়ও। কিন্তু উপায়ও তো নেই। সাপ তাড়াতে সঙ্গে রাখতে হচ্ছে লাঠি। সপ্তাহ খানেক আগে পর্যন্ত এই সব এলাকাতেই সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করে নিয়মিত গোলাগুলি ছুড়েছে পাক সেনা। তাই বন্যার দোহাই দিয়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে চায় না ভারতীয় সেনা।

সীমান্ত চৌকির কোম্পানি কম্যান্ডার রণবীর সিংহ জানালেন, সীমান্তের কাছে এখন প্রায় আট ফুট গভীর জল জমে রয়েছে। কিন্তু এই সুযোগে যদি জঙ্গিরা অনুপ্রবেশ করে, তাই সদা সতর্ক থাকতে হচ্ছে। তাঁর কথায়, “অস্ত্র আর খাবার নিয়ে আমরা উঁচু এলাকায় চলে গিয়েছি। কিন্তু রোজকারের টহল তো আর বন্ধ রাখা যায় না। তাই সব রকম প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমাদের জওয়ানরা নিয়ম করে সীমান্তে নজর রাখছে।” সাম্প্রতিক বন্যায় সীমান্ত এলাকায় বেশ কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও খবর। সীমান্তে ‘জিরো লাইনের’ কাছে বন্যার জলে নষ্ট হয়ে গিয়েছে সেন্সর এবং ক্যামেরা। আর সে জন্য নজরদারি আরও বাড়াতে হয়েছে বলে দাবি রণবীরের।

Advertisement

আপাতত অস্থায়ী ছাউনিতেই ঠাঁই।

আখনুর সেক্টর এখনও জলবন্দি হলেও গোটা জম্মু-কাশ্মীরে বন্যা পরিস্থিতির একটু একটু করে উন্নতি হচ্ছে। তবে আজ সকালের দিকে রাজ্যের বেশ কিছু এলাকায় হাল্কা বৃষ্টি শুরু হওয়ায় রাজ্যবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কিছু ক্ষণের জন্য ব্যাহত হয় সেনার উদ্ধারকাজও। কিন্তু পরে বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় সেনা ফের ত্রাণ বিলি আর উদ্ধারকাজ শুরু করে। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত গোটা রাজ্যে প্রায় দু’লক্ষ মানুষকে সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে সেনা। তবে আজও হেলিকপ্টার থেকে ত্রাণসামগ্রী বিলি করার সময় সেনাকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয় বেশ কিছু জায়গায়। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কপ্টারটি। বিপর্যয় এড়াতে এখন মাটি থেকে বেশ কিছুটা উঁচুতে কপ্টারগুলির ওড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেনা। ঢিল ছোড়ার প্রসঙ্গে সেনার এক অফিসার বলেন, “সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ থাকতেই পারে। আমরা যতটা সম্ভব সাহায্যের চেষ্টা করছি।” আগামী কালও হাল্কা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে গোটা রাজ্যে।

এই পরিস্থিতিতে যে সব জায়গায় জল নামতে শুরু করেছে, আবর্জনা পরিষ্কার করা নিয়ে সেই সব এলাকায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে। রাজধানী শ্রীনগরে যেমন পুরসভার লোকজনদের দেখা মিলছে না বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। ফলে তাঁরা নিজেরাই নোংরা-আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলতে উদ্যোগী হয়েছেন আজ। তবে ওমর আবদুল্লা প্রশাসন ইতিমধ্যেই সরকারি কর্মচারীদের যত দ্রুত সম্ভব কাজে যোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। একটি রেডিও বার্তায় সরকারি কর্মীদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, “নিজেদের বিবেকের ডাকে সাড়া দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজে ফিরুন।”

তবে এর মধ্যে গোটা কাশ্মীর উপত্যকায় ভীষণ ভাবে দাম কমে গিয়েছে মাংসের। রাজধানী শ্রীনগরেই এখন ৫০ টাকা কেজি দরে বিকোচ্ছে মুরগি। এক টানা বৃষ্টি আর বন্যার রেশ কাটার সঙ্গে সঙ্গে বাজারের এই ছবিটা চেনা ঠেকছে না অনেকেরই। তবে এই পরিস্থিতির জন্য রাজ্য জুড়ে বাতিল হওয়া প্রচুর বিয়েকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ভরা বিয়ের মরসুম থাকে গোটা রাজ্যে। কিন্তু বন্যার জেরে ইতিমধ্যেই বাতিল হয়ে গিয়েছে বহু বিয়ে। আর তাই মাংসের দামের ফারাকটা চোখে পড়ছে বলে জানালেন পোলট্রি ব্যবসায়ী আবদুল রহমান। সব্জির দামটা অবশ্য বাড়ছে। তাই মহম্মদ শফি নামে এক বাসিন্দা বললেন, “সব্জির দাম বাড়ন্ত। আপাতত মাংস খাইয়েই পরিবারের সকলকে খুশি রাখতে চাই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন