মুক্ত মধুবালা, ভুল স্বীকার করল পুলিশ

তাঁর স্বামী রমাকান্ত মণ্ডল দীর্ঘদিন গত হয়েছেন। ফলে মূক ও বধির মেয়ে ফুলমালাকে নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছিলেন মধুবালা। ২০১৬ সালের এপ্রিলে হঠাৎ পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে কোকরাঝাড় ডিটেনশন শিবিরে পাঠিয়ে দেয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৯ ০৩:০০
Share:

মধুবালা। —নিজস্ব চিত্র।

নাম বিভ্রাট ধরা পড়ার পরেও পিঠ বাঁচাতে পুলিশ যুক্তি সাজিয়েছিল, দু’বার বিয়ে করে মধুবালা ‘দাস’ পদবী বদলে ‘মণ্ডল’ হয়েছেন। কিন্তু নামের অমিল, পদবির অমিল এবং যাঁর নামে আদতে নোটিস এসেছিল সেই মধুমালা দাস অনেক আগেই মারা গিয়েছেন তা জানাজানি হওয়ার পরে খোদ এসপিই তদন্তের দায়িত্ব নেন। শেষ পর্যন্ত তিনি আদালতের কাছে পুলিশের তরফে ভুল স্বীকার করে নিলেন। তিন বছর বিনা দোষে কারাবন্দি থাকার পর আজ মুক্তি পেলেন অসমের চিরাং জেলার বিজনির বাসিন্দা মধুবালা মণ্ডল।

Advertisement

তাঁর স্বামী রমাকান্ত মণ্ডল দীর্ঘদিন গত হয়েছেন। ফলে মূক ও বধির মেয়ে ফুলমালাকে নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছিলেন মধুবালা। ২০১৬ সালের এপ্রিলে হঠাৎ পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে কোকরাঝাড় ডিটেনশন শিবিরে পাঠিয়ে দেয়। জানায়, তিনি বাংলাদেশি। কিন্তু তাঁর নামে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের কোনও নোটিসও আসেনি। মামলা চালাতে গিয়ে জানা যায়, ২০০৮ সালে পুলিশের সীমান্ত শাখা একই গ্রামের বাসিন্দা প্রয়াত মাখন নমঃদাসের স্ত্রী মধুমালা নমঃদাসের নামে সন্দেহজনক নাগরিক হওয়ার রিপোর্ট দিয়েছিল। তার ভিত্তিতে ২০১৬ সালের ৫ মার্চ আদালতের সমন আসে। কিন্তু তার আগেই মধুমালাদেবী ও তাঁদের একমাত্র ছেলের মৃত্যু হয়। তাই শুনানির দিন কেউ হাজির হয়নি। আদালত মধুমালা নমঃদাসকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়। পুলিশ গ্রামে এসে মধুমালার বদলে মধুবালাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়ে দেয়।

পদবি বিভ্রাটে পুলিশের ভুল মানতে রাজি ছিলেন না এসপি সুধাকর সিংহ। তাঁর দাবি ছিল, পুলিশ খোঁজখবর নিয়েই মধুবালাদেবীকে গ্রেফতার করেছে। মধুবালা আগে দাস পদবীর কাউকে বিয়ে করেছিলেন। পরে রমাকান্ত মণ্ডলকে বিয়ে করেন। তাই হয়ত পদবী মেলেনি। বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে শোরগোল হওয়ায় তিনি ফের তদন্ত চালান।

Advertisement

আজ তিনি সুর বদলে বলেন, ‘‘আমি নিজে তদন্ত করে সত্যিটা জানার পরে আদালতকে জানাই। আদালত মধুবালা মণ্ডলকে মুক্ত করতে নির্দেশ দেয়। মধুবালাদেবীকে মুক্ত করা হয়েছে।’’ এই লড়াই যিনি চালিয়েছেন, সেই মানবাধিকার কর্মী অজয় রায় বলেন, ‘‘তদন্তের নামে পুলিশ কী ভাবে নির্দোষদের জীবন নষ্ট করছে, এই ঘটনা তার বড় প্রমাণ।’’

আর বিনা দোষে বন্দি থাকার পর আজ মুক্ত হয়ে মধুবালা দেবী আজ ভগবানকে ধন্যবাদ দেন।তাঁর কথায়, ‘‘আমার বোবা-কালা মেয়ে আর নাতনি এখন আমার ভাইদের আশ্রয়ে আছে। পুলিশ আমার পরিবারটাকে ছারখার করে দিয়েছে।’’ অসম সরকারের কাছে সাহায্যের আর্জি জানিয়েছেন তিনি।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন