জমি তৈরিতে মোদীর আগেই বিহারে অমিত

দিল্লিতে গোহারা হয়েছেন। এ বার বিহারে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া অমিত শাহ। বিহারে বিধান পরিষদে সদ্য পাওয়া জয় বেশ কিছুটা অক্সিজেন জুগিয়েছে দলকে। সেই হাওয়ায় এ বার পটনা দখলের লক্ষ্যে ঝাঁপানোর জন্য দলকে তৈরি করতে চাইছেন বিজেপি সভাপতি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৫ ০৩:১৯
Share:

দিল্লিতে গোহারা হয়েছেন। এ বার বিহারে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া অমিত শাহ। বিহারে বিধান পরিষদে সদ্য পাওয়া জয় বেশ কিছুটা অক্সিজেন জুগিয়েছে দলকে। সেই হাওয়ায় এ বার পটনা দখলের লক্ষ্যে ঝাঁপানোর জন্য দলকে তৈরি করতে চাইছেন বিজেপি সভাপতি। আগামী ২৫ তারিখ মুজফ্ফরপুরে প্রচার যুদ্ধ শুরু করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর সেই জনসভার আগেই জমি তৈরি করতে ১৭ তারিখ বিহারে যাচ্ছেন অমিত।

Advertisement

জমি তৈরির কাজটা অবশ্য দিল্লি থেকেই শুরু করে দিয়েছেন বিজেপি সভাপতি। এখানে আজ দিনভর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। ললিত-কাণ্ড থেকে শুরু করে ব্যপম কেলেঙ্কারি— একের পর এক ধাক্কায় দল বিপর্যস্ত। এ দিনের আলোচনায় অমিত সেই প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাননি বটে। তবে চাপটা পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন দলের নেতা-কর্মীদের সামনে। তিনি জানিয়ে দেন, বিরোধী দল ও সংবাদমাধ্যম এই সব ‘ছোট ছোট’ ঘটনা নিয়ে প্রচার করলেও এ সব নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের বিচলিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। এ সব সামাল দিতে দলের নেতৃত্ব যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। কিন্তু দলের এখন লক্ষ্য হল বিহারে ক্ষমতা দখল করা। গোটা দেশে যে ১০ কোটি সদস্য হয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে নিয়ে একটি শক্তিশালী সংগঠন তৈরি করা।

অমিতের এ-ও দাবি, বিহার বিধান পরিষদের ভোটের ফলেই স্পষ্ট, জনতা পরিবারের হাওয়া বেরিয়ে গিয়েছে। বিধান পরিষদের সেমিফাইনালে জেতার পর বিজেপি
এ বার বিধানসভার ফাইনালেও জয়লাভ করবে।

Advertisement

বিধান পরিষদের ভোটে অবশ্য সামগ্রিক ভাবে জনতার রায় হয় না। ফল প্রকাশের পর প্রত্যাশিত ভাবেই নীতীশ কুমার এ কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু বিজেপি নেতা শত্রুঘ্ন সিন্হাও আজ সেই একই কথা বলে অস্বস্তি বাড়িয়েছেন দলের। নিজে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হতে চান শত্রুঘ্ন। কিন্তু আজ নিজেকে সেই দৌড়ের বাইরে রাখার কথা বলে দলের নেতৃত্বের উপরেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, দলের উচিত ছিল বিহারে যোগ্য কোনও নেতাকে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হিসেবে তুলে ধরা। কিন্তু এখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। বিধান পরিষদের ফলে কারও জয় বা পরাজয় হয়নি। ফলে তা নিয়ে এত মাতামাতি করার কিছু নেই।

কিন্তু দলের এই সব বিক্ষুব্ধ সুরকে খুব একটা আমল দিতে চাইছেন না বিজেপি সভাপতি। বিহার দখলে নিজের কৌশল মতোই এগোচ্ছেন তিনি। ক’দিন আগেই তিনি ওবিসি রাজনীতির তাস খেলা শুরু করেছেন। যা নিয়ে এখন দিল্লি থেকে পটনার রাজনীতি সরগরম। এ বার মোদীর সভার আগে নিজে বিহার যাচ্ছেন অমিত। তিনি কী করবেন সেখানে? বিহারের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ভূপেন্দ্র যাদব বলেন, ‘‘সেখানে সব জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন সভাপতি। দলের নেতারা বাড়ি-বাড়ি গিয়ে মোদীর বার্তা পৌঁছে দেবেন।’’

শত্রুঘ্নর মতো কিছু বিরুদ্ধ-কণ্ঠকে বাদ দিলে বিজেপি নেতাদের বড় অংশই মনে করছেন, বিপক্ষ শিবির বিধান পরিষদের ফলকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করলেও আসলে এরও যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির প্রধান, সদস্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন ওয়ার্ডের সদস্যরা ভোট দেন এই নির্বাচনে। তাঁরাও আম জনতারই প্রতিনিধি। অন্তত এর থেকে একটি ইঙ্গিত অবশ্যই পাওয়া যায়।

প্রধানমন্ত্রী যে মুজফ্ফরপুর থেকে প্রচার শুরু করছেন, সেটি উত্তর বিহারের প্রবেশ স্থল। ফলে ভৌগোলিক দিক থেকেও এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঁঝি ও পাপ্পু যাদবের মধ্যেও আজ বৈঠক হয়েছে। বিজেপির সঙ্গে তাঁদের পরোক্ষ সমঝোতা থাকলেও মোদী-অমিত রাজ্যে আসার আগে দর হাঁকছেন তাঁরা। বিহার সফরে এ সবও সামলাতে হবে অমিতকে। বিধান পরিষদের ধাঁচে পটনার কুর্সি দখলই তাঁর পাখির চোখ।

পটনায় মাওবাদী যোগ

নরেন্দ্র মোদীর সফরের আগে পটনার রামকৃষ্ণনগরের একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকের সঙ্গে জঙ্গি গোষ্ঠী পিএলএফআইয়ের যোগ আছে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ওই বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করতে এনএসজি-র সাহায্য নিয়েছিল বিহার প্রশাসন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, ওই বাড়িটিতে স্থানীয় কিছু যুবককে দামি গাড়ি চেপে যাতায়াত করতে দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। এক সন্দেহভাজন জঙ্গি ধরা পড়াতেও গোয়েন্দারা ওই বিষয়ে কিছু সূত্র পান বলে মন্ত্রক সূত্রে খবর। পিএলএফআই সিপিআই (মাওবাদী) থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া একটি গোষ্ঠী। তবে প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে বিষয়টি নিয়ে ঝুঁকি নিতে চায় না কেন্দ্র। তাই অন্য জঙ্গি গোষ্ঠীর জড়িত থাকার সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন