মমতার দাবিতেই কোবিন্দকে কড়া চিঠি

গত কাল সকালে কংগ্রেস স্থির করেছিল, রাজধানীতে বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি অভিযানের প্রতিবাদ করা হবে।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৫৩
Share:

ছবি: পিটিআই।

মোদী সরকারের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। কিন্তু সনিয়া গাঁধীর দল তার যে খসড়া তৈরি করেছিল, তাতে কিছুটা নরম অবস্থান নেওয়া হয়েছিল। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায়ের হস্তক্ষেপে সেই খসড়া পরিবর্তন করা হল। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, আজ বিকেলে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের হাতে যে চিঠি তুলে দেওয়া হয়েছে, মমতার পরামর্শে তাতে মোদী সরকারকে সরাসরি আক্রমণ করে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে।

Advertisement

গত কাল সকালে কংগ্রেস স্থির করেছিল, রাজধানীতে বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি অভিযানের প্রতিবাদ করা হবে। শেষ মুহূর্তের আয়োজন। তাই কোনও নেতাকে দিল্লিতে পাঠাতে পারেননি তৃণমূল নেত্রী। তবে আজ সকালেই তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন দিল্লিতে পৌঁছান। সূত্রের খবর, রাজধানীতে পৌঁছেই গুলাম নবি আজাদের কাছ থেকে পাওয়া খসড়াটিতে তিনি দেখেন, চিঠির শেষে লেখা রয়েছে, ‘(নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন সম্পর্কে) রাষ্ট্রপতি যা ভাল মনে করেন, সেটাই করুন।’ এর পরই তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন ডেরেক। মমতার নির্দেশ, এই অংশ বদলে সরাসরি লিখতে হবে ‘আমরা আপনার কাছে আর্জি জানাচ্ছি, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন প্রত্যাহার করতে সরকারকে পরামর্শ দিন।’ শুধু এটাই নয়, চিঠিতে আরও বেশ কিছু পরিবর্তনের প্রস্তাব দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। সম্পূর্ণ নতুন দু’টি লাইন যোগ করার কথা বলেন মমতা। যার একটি হল, ‘দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো রক্ষা করতে আপনার কাছে আর্জি জানানো হচ্ছে, ভারত সরকার যেন কোনও ভাবেই এই কাঠামোকে ধাক্কা না দেয়।’ মমতা প্রস্তাবিত দ্বিতীয় লাইনটি হল, ‘বর্তমান সরকার খোলাখুলি ভাবে বৈষম্যমূলক নীতি নিয়ে চলছে, দেশের সর্বত্র শান্তি এবং সংহতি নষ্ট করছে।’

আরও পড়ুন: মহুয়ার মামলায় নেট-নজরদারি থেকে পিছু হটল আধারও

Advertisement

এর পর বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেন ডেরেক। মমতার প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলি চিঠিতে অন্তর্ভুক্ত করতে বলেন। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে কংগ্রেসের কপিল সিব্বল আপত্তি জানিয়ে বলেন, এটি নেহাতই প্রতীকী চিঠি। এতে সরকারের বর্তমান গতিপথের যে কোনও পরিবর্তন হবে না, সেটা সবাই জানেন। ফলে আইন প্রত্যাহার করতে বলে শেষে ‘লোক হাসানোই’ হবে। ডেরেক পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলেন, যেহেতু বিষয়টি প্রতীকী, সে-হেতু সরকারের এই বৈষম্যমূলক নীতির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির কাছে সর্বাত্মক আক্রমণে যাওয়াটাই জরুরি। তাতেই ঠিক বার্তা যাবে। পশ্চিমবঙ্গে মমতাই সর্বপ্রথম এনআরসি-র বিরুদ্ধে আক্রমণে সরব হয়েছিলেন। পরে অন্য মুখ্যমন্ত্রীরা একে একে যোগ দিচ্ছেন। একই ঘটনা ঘটেছিল নোট-বাতিল এবং জিএসটির সময়। ফলে আজকের চিঠিটি প্রতীকী হলেও তাতে ‘ঝেড়ে কাশতে হবে’। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের যুক্তি মেনে নেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরিও তৃণমূলের যুক্তিতে সমর্থন জানান।

সনিয়া এ দিন শুধু চিঠিটি পাঠ করেছেন। গুলাম নবি সরব হন জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পুলিশ ঢুকে পেটানোর বিষয়টিকে নিয়ে। কিন্তু ডেরেক এনআরসি এবং সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন প্রত্যাহারের আর্জি জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতির সামনে। গোটা বিষয়টিকে নোট-বাতিলের সঙ্গে তুলনা করেছেন। পরে ডেরেক বলেন, ‘‘আমি রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছি, তিন বছর আগে ঠিক এই সময়েই আমরা আপনার পূর্বসূরির কাছে এসেছিলাম। নোট-বাতিলের পরে। সে সময় লড়াইটা ছিল ধনী বনাম দরিদ্রের। আজ মানুষ বাতিলের পরেও লড়াইটা সেই ধনী বনাম দরিদ্রেরই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন