ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির যুবরাজ শেখ মহম্মদ বিন জায়েদ আল নাহায়েন।
জঙ্গি পছন্দের তালিকায় ছ’নম্বরে থাকা (ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট অব ইকনমিক্স অ্যান্ড পিস-এর সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী) ভারত এ বার সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে মৌলবাদ এবং জঙ্গি দমনের ক্ষেত্রে একটি নতুন সমঝোতা সড়ক তৈরি করতে চলেছে। আজ সন্ধ্যায় ভারতে প্রথম বারের জন্য পা দিলেন সে দেশের যুবরাজ শেখ মহম্মদ বিন জায়েদ আল নাহায়েন। তাঁর দু’দিনের নয়াদিল্লি এবং মুম্বই সফরে বাণিজ্যের পাশাপাশি অগ্রাধিকার পেতে চলেছে সন্ত্রাসবাদ দমনের প্রশ্নে যৌথ সমন্বয়ের রূপরেখা তৈরি।
প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসার পর থেকেই আরব আমির শাহীকে পাখির চোখ হিসাবে দেখে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ইন্দিরা গাঁধীর পর কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী যে গুরুত্ব দেননি আবু ধাবিকে, সেটাই এ বার দিয়েছেন মোদী। ৩৪ বছর পর প্রথম কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে গত বছর অগস্টে আবু ধাবি সফরে গিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, আরব দেশের মাঝেই লুকিয়ে রয়েছে ‘মিনি ইন্ডিয়া’। সে দেশে বিনিয়োগ ও রফতানি বাড়ানো, আরব দেশ থেকে বিনিয়োগ ভারতে টানা, শক্তিক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানো এবং জঙ্গি কার্যকলাপের মোকাবিলার জন্য তখনই যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছিল দু’দেশ। সংযুক্ত আরবআমির শাহির যুবরাজের চলতি সফরে সেই পথনির্দেশিকা সামনে রেখে আরও নতুন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করার কৌশল নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিদেশমন্ত্রক।
আরও পড়ুন- ভারতের তথ্য ওড়াল ‘সিট’, ধাক্কা পঠানকোট তদন্তে
বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ আজ বলেছেন, ‘‘আবু ধাবির সঙ্গে সামগ্রিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে নতুন নতুন ক্ষেত্রে তৈরি করতে চলেছে ভারত।’’ কী রয়েছে এই ‘নতুন’ ক্ষেত্রগুলিতে? বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্রের ব্যাখ্যায়, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতের মাটিতে নতুন উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানো, মৌলবাদী শক্তিকে শনাক্ত করে তাদের মধ্যে থেকে মৌলবাদের দর্শনকে উপড়ে ফেলার চেষ্টা— এগুলি অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে। পাশাপাশি, অসামরিক পরমাণু শক্তিক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব বাড়ানো, শক্তিক্ষেত্রে নতুন কিছু চুক্তি করার মতো বিষয়গুলিও রয়েছে।’’ ২০০৩ সালে এনডিএ জমানাতেই ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি সই হয়। কিন্তু সেটি আজকের দিনে তামাদি হয়ে গিয়েছে বলে দাবি করছে সাউথ ব্লক। তাকে বর্তমান সময়ের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার মতো করে সংস্কার করতে চলেছে দুই দেশ। সাইবার স্পেসে নজরদারির প্রশ্নে দু’দেশ কী ভাবে আরও এগোতে পারে কথা হবে তা নিয়েও। আইএস-এর সন্ত্রাস-আতঙ্ককে মোকাবিলা করার প্রশ্নে এর আগে পশ্চিম এশিয়া, বাংলাদেশ, ব্রিটেন, ফ্রান্স— সর্বত্রই নিরাপত্তা সমন্বয়ের বিষয়টিতে জোর দিয়েছেন মোদী। ফ্রান্স এবং পশ্চিমের দেশগুলির কাছ থেকে এ ব্যাপারে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা, পেশাদারি দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ ও গোয়েন্দা তথ্য আদানপ্রদানের মতো বিষয়গুলি বাড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে। এ বার সেই তালিকায় আবু ধাবিকেও জুড়তে চাইছে সাউথ ব্লক। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে আমেরিকাও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলে বরাবর। নয়াদিল্লি–আবু ধাবি জোট বাঁধার পিছনে ওয়াশিংটনের দৌত্যও পরোক্ষভাবে সক্রিয় বলেই মনে করা হচ্ছে। সন্ধ্যায় এসে পৌছানোর পর বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আল নাহায়েন। আগামিকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ছাড়াও রয়েছে তাঁর সম্মানে রাষ্ট্রপতির দেওয়া মধ্যাহ্নভোজসভা। অন্তত ১২টি চুক্তিপত্রে সই হওয়ার কথাও রয়েছে দু’দেশের মধ্যে। পরশু, অর্থাৎ ১২ তারিখ তিনি যাবেন মুম্বইয়ে। সেখানে মুম্বই স্টক এক্সচেঞ্জ-এ যাওয়ার পাশাপাশি দু’দেশের শিল্পকর্তাদের মধ্যে আলোচনা হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমার ফলে সব ক্ষেত্রেই বহুজাতিক তেল সংস্থাগুলিতে শুরু হয়েছে ছাঁটাই। যার আঁচ এসে পড়েছে সেখানে কর্মরত ভারতীয় পেশাদারদের উপর। এই বিষয়টি নিয়েও আরব আমির শাহির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করবেন ভারতীয় কর্তারা। আরব আমিরশাহিতে কর্মরত ভারতীয় পেশাদার ও কর্মীদের যাতে সমস্যায় পড়তে না হয় সেই বিষয়টি নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা হবে বলে জানা গিয়েছে।