ক্যালেন্ডার হাতে মেয়েরা। নিজস্ব চিত্র
কারও স্বামীকে ধরে নিয়ে গিয়েছে বাহিনী। কারও ভাই বা বাবা বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন। আর খোঁজ মেলেনি তাঁদের। কাশ্মীরে জঙ্গিদের সঙ্গে বাহিনীর লড়াইয়ের সময়ে তৈরি এমন শত শত কাহিনির জেরে তৈরি হয়েছে ‘হাফ-উইডো’ শব্দবন্ধ। ওই মহিলাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো অনুমান করতে পারেন তাঁদের স্বামী আর বেঁচে নেই। কিন্তু স্বামীর দেহ বা অন্য কোনও প্রমাণ হাতে পাননি তাঁরা। এ বার তেমনই স্বজনহারা মহিলারা প্রকাশ করলেন এক অভিনব ক্যালেন্ডার।
‘অ্যাসোসিয়েশন অব পেরেন্টস অব ডিসাপিয়্যারড পার্সনস’-এর (এপিডিপি) উদ্যোগে তৈরি এই ক্যালেন্ডারে রয়েছে ১২ জন এমনই হারিয়ে যাওয়া মানুষের ছবি। সঙ্গের পাতায় লাল রঙে চিহ্নিত রয়েছে তাঁদের হারিয়ে যাওয়ার তারিখ।
১৯৯০-এর দশকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন পরভীনা আহঙ্গারের ছেলে। তাঁরই উদ্যোগে তৈরি হয়েছে স্বজনহারা মহিলাদের সংগঠন এপিডিপি। বছর পঁয়ষট্টির পরভীনার বক্তব্য, ‘‘এই ক্যালেন্ডারের দিকে তাকালে অন্তত হারানো স্বজনের জন্য অপেক্ষা করার, লড়াই চালিয়ে যাওয়ার শক্তি পাওয়া যাবে।’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘মৃতের তাও সমাধি থাকে। কিন্তু নিখোঁজ মানুষের জন্য ঠিক ভাবে শোকপালনও করা যায় না। তাঁরা প্রতি মুহূর্তে আমাদের বেদনার মধ্যে বেঁচে থাকেন।’’ পুরনো, ঝাপসা হয়ে আসা কিছু ছবি থেকে ক্যালেন্ডারের ছবিগুলি এঁকেছেন কাশ্মীরের প্রথম সারির শিল্পী সুহেল নকশবন্দী। বলছেন, ‘‘ঝাপসা ছবি থেকে স্পষ্ট চিত্র ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে অনেক বিষয় কল্পনা করতে হয়েছে। সেইসঙ্গে বারবার মনে হয়েছে এত মানুষ কোথায় হারিয়ে গেলেন?’’ মানবাধিকার কর্মীদের দাবি, ১৯৮৯ সালে কাশ্মীরে জঙ্গিদের কার্যকলাপ শুরু হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত কেবল বাহিনীর হেফাজত থেকেই ‘অদৃশ্য’ হয়ে গিয়েছেন ৮ হাজার মানুষ।
একটি মানবাধিকার সংগঠনের শীর্ষ কর্তা খুররম পারভেজের বক্তব্য, ‘‘সরকার এই নিখোঁজদের খোঁজ পাওয়ার কোনও চেষ্টাই করে না। অনেক ক্ষেত্রেই বছরের পর বছর ধরে মামলা চলছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হলেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।’’
রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের উপদেষ্টা কে বিজয় কুমারের বক্তব্য, ‘‘এই বিষয় নিয়ে তদন্তের জন্য জম্মু-কাশ্মীরে নির্দিষ্ট দফতর আছে। বহু ক্ষেত্রে তদন্ত হয়েছে।’’