হাইকোর্ট টপকে এখানে কেন? কানহাইয়ার আর্জি শুনলই না সুপ্রিম কোর্ট

নিম্ন আদালতকে পাশ কাটিয়ে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সভাপতি কানহাইয়া কুমারের জামিনের আবেদন শুনল না সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি জে চেলামেশ্বর ও বিচারপতি অভয়মোহন সাপ্রের বেঞ্চ আজ কানহাইয়ার আইনজীবীদের বলেছেন, পাটিয়ালা হাউস কোর্টে জামিনের আর্জি খারিজ হয়ে যাওয়ার পরে তাঁদের দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন করতে হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:১৭
Share:

জেএনইউতে সাংবাদিক বৈঠকে ছাত্র সংসদের ভাইস প্রেসিডেন্ট শীলা রসিদ। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।

নিম্ন আদালতকে পাশ কাটিয়ে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সভাপতি কানহাইয়া কুমারের জামিনের আবেদন শুনল না সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি জে চেলামেশ্বর ও বিচারপতি অভয়মোহন সাপ্রের বেঞ্চ আজ কানহাইয়ার আইনজীবীদের বলেছেন, পাটিয়ালা হাউস কোর্টে জামিনের আর্জি খারিজ হয়ে যাওয়ার পরে তাঁদের দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন করতে হবে। সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা আর্জি যদি গ্রহণ করা হয় তা হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের আবেদনের বন্যা বয়ে যাবে।

Advertisement

চলতি সপ্তাহে পাটিয়ালা হাউস কোর্টে পরপর দু’দিন বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবারের সমর্থকদের হাতে মার খেয়েছিলেন জেএনইউয়ের শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী এমনকী সাংবাদিকরাও। বুধবার পুলিশি ঘেরাটোপে থাকা সত্ত্বেও আক্রান্ত হন কানহাইয়া। যা দেখে শিউরে উঠে পুলিশ কমিশনারের কাছে রিপোর্ট তলব করে শীর্ষ আদালত। এর পরেই সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে জামিনের আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেন কানহাইয়ার হয়ে মামলা লড়তে আসা সোলি সোরাবজি, রাজু রামচন্দ্রন, রাজীব ধবনের মতো প্রবীণ আইনজীবীরা। এ দিন আদালতে কানহাইয়ার নিরাপত্তা ও পাটিয়ালা হাউস কোর্টের অস্বাভাবিক পরিস্থিতির যুক্তিই দেখান তাঁরা।

বিচারপতিরা বলেন, ওই আদালতের ‘অস্বাভাবিক’ পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁরাও অবহিত। কিন্তু সে ক্ষেত্রে হাইকোর্টে যাওয়া উচিত ছিল। কানহাইয়ার আইনজীবীরা যুক্তি দেন, পাটিয়ালা হাউস কোর্ট ও দিল্লি হাইকোর্ট একই চত্বরে। তাই তাঁরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। সরকারি আইনজীবীরা পাল্টা বলেন, হাইকোর্টে নিরাপত্তার সমস্যা নেই। বিচারপতিরা তখন বলেন, ‘আমরা এমন কোনও বার্তা দিতে চাই না যে, সুপ্রিম কোর্টই একমাত্র নিরাপত্তা দিতে পারে, বাকি আদালত পারে না’।

Advertisement

সরাসরি জামিনের আবেদন শুনতে অস্বীকার করলেও দিল্লি হাইকোর্টে কানহাইয়া-সহ অন্যদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য কেন্দ্র ও দিল্লি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শুধু নির্দেশ নয়, এ বিষয়ে কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল রঞ্জিত কুমারের থেকে রীতিমতো আশ্বাস আদায় করে নিয়েছেন বিচারপতিরা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেই দিল্লি হাইকোর্টের সামনে বিপুল পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আজ আর কানহাইয়ার আবেদনের শুনানি হয়নি। সোমবার ওই শুনানি হতে পারে।

জেএনইউয়ের ঘটনায় মোদী সরকার, বিজেপি-সঙ্ঘ পরিবারের পাশাপাশি আঙুল উঠেছে দিল্লির পুলিশ কমিশনার বি এস বসসীর দিকেও। বুধবার আদালত চত্বরে কানহাইয়াকে মারার ঘটনা বেমালুম অস্বীকার করে গিয়েছিলেন বসসী। কিন্তু কাল রাতে তিহাড় জেলে বুকে ব্যথা অনুভব করেন কানহাইয়া। তাঁকে রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার মেডিক্যাল রিপোর্টে বলা হয়েছে, কানহাইয়ার নাক, উরু-সহ বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আজ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও জানিয়েছে, আদালত চত্বরে পুলিশের সামনেই কানহাইয়ার উপর হামলা সংগঠিত এবং পূর্ব-পরিকল্পিত। তাঁর উপর মানসিক চাপ দেওয়া হয়েছিল বলেও ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, দিল্লি পুলিশ কানহাইয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করার পর থেকেই বসসী বলছেন, তাঁদের হাতে যথেষ্ট প্রমাণ আছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কিছুই পুলিশ পেশ করতে পারেনি! উল্টে অভিযোগ উঠেছে, কানহাইয়া ‘আজাদি’-র পক্ষে স্লোগান দিচ্ছিলেন বলে যে ভিডিও প্রচার করা হচ্ছিল, তা জাল! বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের হাতে আসা একাধিক ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, কানহাইয়া দারিদ্র, অনাহার, জাতপাত, সঙ্ঘের মনুবাদী নীতি, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি থেকে আজাদির (স্বাধীনতা) দাবিতে স্লোগান দিয়েছিলেন। এমনকী তিনি সে দিন পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে তোলা স্লোগানের কড়া নিন্দাও করেছিলেন। আজ জেএনইউ-এর ছাত্র সংগঠন আফজল গুরুর সমর্থনে দেওয়া স্লোগানের নিন্দা করে প্রস্তাবও গ্রহণ করেছে।

কানহাইয়ার প্রতি কড়া হলেও বিজয় চৌহান-সহ যে সব আইনজীবী কোর্ট চত্বরে মারধর করেছিলেন বলে অভিযোগ, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রায় কিছুই করেনি দিল্লি পুলিশ। তাঁদের স্রেফ তলব করা হয়েছে এবং সেই ডাকও উপেক্ষা করেছেন তাঁরা। উল্টে আজ ইন্ডিয়া গেট চত্বরে সেই অভিযুক্ত আইনজীবীদের মিছিলকে নিরাপত্তা দিয়েছে বিরাট পুলিশ বাহিনী!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন