‘অর্জুন দেখে যা রে বাবা, তুই ভারতীয়’

বিদেশি তকমা নিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার ছ’বছর পর প্রমাণ হয়েছে, অর্জুন নমঃশূদ্র প্রকৃতই ভারতীয়। এনআরসির খসড়ায় নাম উঠেছে পরিবারের সকলের। মা, স্ত্রী, তিন ছেলে, এক মেয়ে — বাদ পড়েননি কেউই।

Advertisement

উত্তমকুমার সাহা

শিলচর শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৫৫
Share:

ডি-ভোটার সংক্রান্ত এক অনুষ্ঠানে অর্জুনের মা আকলদেবী। শিলচরে। নিজস্ব চিত্র

বিদেশি তকমা নিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার ছ’বছর পর প্রমাণ হয়েছে, অর্জুন নমঃশূদ্র প্রকৃতই ভারতীয়। এনআরসির খসড়ায় নাম উঠেছে পরিবারের সকলের। মা, স্ত্রী, তিন ছেলে, এক মেয়ে — বাদ পড়েননি কেউই।

Advertisement

এনআরসি প্রক্রিয়া শুরু হতেই উদ্বেগে ছিলেন অসমের কাছাড় জেলার হরিটিকরের অর্জুনের পরিবার। সত্তরোর্ধ্ব মা আকলবালা থেকে সাত বছরের ছেলে, সবারই চিন্তা ছিল, ‘নাম উঠবে তো আমাদের!’ আতঙ্কে ছিলেন তাঁরা, তাঁদেরও যদি বিদেশি বলে দেয়। ১৯৭১ সালের আগের কত নথি ঘরে! সরকার জমি দিয়েছে ১৯৫০-’৫১ সালে। সেই জমির দলিলের পর আর কী লাগে! দফায় দফায় ভোট দিয়েছেন। রয়েছে সে সব কাগজপত্রও। তবু আশ্বস্ত হতে পারছিলেন না আকলবালা। এত নথি থাকার পরেও তো ২০১২ সালে অর্জুনকে ডি-ভোটারের নোটিস পাঠিয়েছিল ফরেনার্স ট্রাইবুনাল। ছোটাছুটি করেও কূলকিনারা না পেয়ে হতাশায় আত্মঘাতী হন চার সন্তানের বাবা।

৩০ জুলাই এনআরসির খসড়া প্রকাশের দিনেই সেবাকেন্দ্রে ছুটে গিয়েছিলেন আকলদেবী। সেবাকেন্দ্রের কর্মীরা অবশ্য আগেই দেখে নিয়েছিল, অর্জুনের পরিবারের ছ’জনেরই নাম উঠেছে। মুহূর্তের জন্য উত্কণ্ঠামুক্ত দেখাল বৃদ্ধাকে। পরক্ষণেই হাউহাউ করে কেঁদে উঠেছিলেন, ‘‘অর্জুন...অর্জুন রে...।’’ বৃদ্ধার কান্নায় স্থির থাকতে পারেননি সেবাকেন্দ্রের নিরাপত্তায় মোতায়েন আধা সামরিক জওয়ানরাও। অর্জুন...অর্জুন বলে বৃদ্ধার ডাকাডাকিতে এক জওয়ান এগিয়ে এসে বাড়ান সান্ত্বনার হাত। তাঁর হাত ধরেই বৃদ্ধা বলতে থাকেন, ‘‘অর্জুন দেখে যা রে বাবা, তুই ভারতীয়।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: ৪২ বছর রেলে চাকরি, ‘ভারতীয়’ প্রমাণ দিতে কলকাতায় নথি খুঁজে হয়রান অসমের নবকুমার

দিনমজুর অর্জুনই ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। সংসারে টানাটানি থাকলেও শান্তি ছিল। ডি-ভোটারের নোটিস পেয়ে থানা আর আদালতে ছুটে দিশাহারা হয়ে পড়েন তিনি। মামলার খরচ জোগাতে গরু-বাছুর বিক্রি করেন। এর পরও নথিপত্র দেখানোর সুযোগ পাননি। শুধু তারিখ আর তারিখ। দিশাহারা হয়ে মৃত্যুকেই বেছে নেন। সেই থেকে মা আকলদেবী চেয়েচিন্তেই ক্ষুন্নিবৃত্তি করেন। স্ত্রী অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। ছোট ছেলেটি তাঁর সঙ্গেই থাকে। ১৪ বছর বয়সি বড় ছেলে এক দোকান কর্মচারী। অন্য ছেলেমেয়ে দু’টিও লোকের বাড়িতে গরু চরায়।কেউ তাঁদের খবর রাখেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন