পাথরের বদলে অস্ত্র পড়াশোনা, সাহায্যে সেনা

বাহিনীর বিরুদ্ধে ছাত্রীদের পাথুরে ক্ষোভের ছবি নজর কেড়েছিল তামাম দুনিয়ার। গোটা উপত্যকায় সেনার বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগ তুলে পথে নামতে দেখা যায় যুবকদের।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৭ ০৪:২২
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

পাথর ছুড়ে নয়, প়ড়াশোনা করেই সকলের নজর কাড়তে চান ওঁরা! কাশ্মীরের এই পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়িয়েছে সেনাবাহিনী।

Advertisement

ক’দিন আগেই কাশ্মীরের রাস্তায় পাথর হাতে দেখা গিয়েছে ওঁদের সহপাঠীদের। বাহিনীর বিরুদ্ধে ছাত্রীদের পাথুরে ক্ষোভের ছবি নজর কেড়েছিল তামাম দুনিয়ার। গোটা উপত্যকায় সেনার বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগ তুলে পথে নামতে দেখা যায় যুবকদের। কিন্তু গত তিন বছর ধরে সেই সেনা-তত্ত্বাবধানেই আইআইটি-জয়েন্টে সাফল্যের চাবিকাঠি খুঁজে পাচ্ছেন উপত্যকার ছাত্র-ছাত্রীদের একাংশ। চলতি বছরে সফল হওয়া এমনই একটি দলকে আজ সংবর্ধনা দিলেন খোদ সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়ত। পরে পড়ুয়াদের আলাদা করে সংবর্ধনা দেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহও।

স্বপ্ন দেখিয়েছে অবশ্যই বিহারে আনন্দকুমারের তৈরি ‘সুপার-৩০’। বিহারের ওই পাঠশালার ত্রিশ জনের প্রত্যেকেই এ বারও আইআইটিতে স্থান পেয়েছেন। সেই রেকর্ডকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলার জন্য ক্রমশ কিন্তু গতি বাড়াচ্ছে কাশ্মীরের ‘সুপার-৪০’। এ বছর যে ৩৫ জন পরীক্ষায় বসেন, তাঁদের মধ্যে ২৪ জন জেইই-মেনস পাশ করেছেন। এই ২৪ জনের মধ্যে জেইই অ্যাডভান্স পরীক্ষায় সফল হয়ে ৯ জন জায়গা করে নিয়েছেন আইআইটিতে। ১৫ জন পড়বেন এনআইটিগুলিতে। আর বাকি এগারো জন জম্মু-কাশ্মীর রাজ্য জয়েন্ট তালিকায় স্থান পেয়েছেন বলে জানিয়েছে সেনা। অথচ, সাফল্যের এই ভিত্তিপ্রস্তর গড়া হয়েছে মাত্র তিন বছর আগে। কাশ্মীরের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে গোটা দেশের পড়ুয়াদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে সে জন্য আইআইটি-জয়েন্টের কোচিং দিতে এগিয়ে এসেছিল ভারতীয় সেনা ও ‘সেন্টার ফর সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড লিডারশিপ’। অর্থ সাহায্য আসে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের সামাজিক দায়বদ্ধতা খাত থেকে। বাকিটা ইতিহাস।

Advertisement

ক’দিন আগে কাশ্মীরে শান্তি ফেরাতে ক়ড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে বিতর্ক তৈরি করেছিলেন সেনাপ্রধান। আজকের এই অনুষ্ঠান তাই সেনা তথা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে কাশ্মীরের জনতার কাছে পৌঁছনোর একটি প্রচেষ্টা হিসেবেই দেখছেন রাজনীতিকরা।

অনুষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশে রাওয়ত বলেন, ‘‘কাশ্মীরে অশান্তির জন্য প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। সেনা-জঙ্গির এই ছবি বদলাতে হবে। কাশ্মীরকে পুনরায় ভূস্বর্গ বানাতে দায়বদ্ধ কেন্দ্র। তোমাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো পরে জেলাশাসক হবে। আমিও চাই তোমরা ভবিষ্যতে প্রশাসনিক কর্তা হিসেবে কাশ্মীরের সেবা করো।’’ নিখাত নামে এক ছাত্রের চোখে অবশ্য ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন। জয়েন্টে পাশ করা এক ছাত্রী চিকিৎসক হয়ে কাজ করতে চান উপত্যকার মানুষের উন্নতিতে।

গত তিন বছর ধরে বন্দুক ছেড়ে চক-ডাস্টার ধরেছেন মেজর জেনারেল আর পি কালিথা। তাঁর কথায়, ‘‘উপত্যকার ছাত্র-ছাত্রীরা খুব মেধাবী। যদি সুযোগ দেওয়া যায় তাহলে এখানকার ছাত্র-ছাত্রীরা দেশের অন্য প্রান্তের যে কোনও পড়ুয়াকে টেক্কা দিতে পারবে।’’ পরিসংখ্যানও তাই বলছে। শুরুতে ৩০ জন হলেও চলতি বছরে সেনা তত্ত্বাবধানে আইআইটি-জয়েন্টের জন্য প্রশিক্ষণ নেবেন ৪০ জন। আগামী বছর ৫০ জন পড়ুয়া।

এত সবের মধ্যেও কোথাও একটা চোরা ভয় বা আশঙ্কা কিন্তু পিছু ছাড়ে না এঁদের। টিভি ক্যামেরা ফোকাস ফেলতেই অনেকেরই মুখ নীচু। ক্যামেরায় সোজাসুজি তাকাতে আপত্তি। অসুবিধে রয়েছে সম্পূর্ণ পরিচয় দিতেও। অনুষ্ঠানে সংবাদমাধ্যমের প্রবেশ নিয়েও কড়াকড়ি ছিল চূড়ান্ত পর্যায়ের। এক ছাত্রের স্বগতোক্তি, ‘‘দিল্লির সরকারের কাছ থেকে পুরস্কার পাওয়ার ছবি টিভিতে দেখে বাড়িতে হামলা হোক এটা চাই না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন