রাফাল যুদ্ধবিমানের দামই বলে ফেললেন অরুণ জেটলি!—ছবি পিটিআই
বলা যাবে না, বলা যাবে না বলতে বলতে কি রাফাল যুদ্ধবিমানের দামই বলে ফেললেন অরুণ জেটলি!
রাহুল গাঁধী এতদিন অভিযোগ তুলছিলেন, ইউপিএ-সরকার যে রাফাল যুদ্ধবিমান একেকটি ৫২৬ কোটি টাকা দিয়ে কিনছিল, নরেন্দ্র মোদী সরকার সেই বিমানই ১৬০০ কোটি টাকা দিয়ে কিনছে। আজ লোকসভায় রাফাল বিতর্কে জেটলি বলেন, ‘‘রাফাল চুক্তির মূল্য ৫৮ হাজার কোটি টাকা।’’ এর পরেই জেটলির মন্তব্যকে লুফে নিয়ে রাহুল গাঁধী বলেন, ‘‘জেটলি নিজেই প্রশ্ন তুলছেন, ১৬০০ কোটি টাকার কথা কোথা থেকে আসছে? উনি নিজেই বলছেন, ৩৬টি বিমান কিনতে ৫৮ হাজার কোটি টাকার চুক্তি। আপনারা ৫০ হাজারকে ৩৬ হাজার দিয়ে ভাগ করুন। কত পেলেন?’’
সহজ পাটিগণিতে ৫৮ হাজারকে ৩৬ দিয়ে ভাগ করলে উত্তর আসে, ১৬১১-র কিছু বেশি। রাহুলের এই প্রশ্নে অস্বস্তিতে পড়লেও আজ সুপ্রিম কোর্টের রায়কে হাতিয়ার করে রাফাল-চুক্তিতে যৌথ সংসদীয় কমিটি বা জেপিসির দাবি খারিজ করার চেষ্টা করেছেন জেটলি। সুপ্রিম কোর্ট গত ১৪ ডিসেম্বর রাফাল-চুক্তিতে তদন্তের দাবি খারিজ করে দেয়। জেটলির কটাক্ষ, ‘‘রাফাল-চুক্তিতে তদন্তের দরকার নেই বলে সুপ্রিম কোর্ট সন্তুষ্ট হলেও, ভোটের রাজনীতিতে কংগ্রেস সন্তুষ্ট হতে পারছে না।’’ রাহুল পাল্টা বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট কখনও বলেনি যে জেপিসি-র প্রয়োজন নেই। শীর্ষ আদালত শুধু জানিয়েছে, বিষয়টি তাদের আওতার বাইবে।’’
ঘটনাচক্রে, এ দিনই জেটলির দুই প্রাক্তন সহকর্মী, যশবন্ত সিনহা ও অরুণ শৌরি আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণকে সঙ্গে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে রাফাল মামলার পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, মোদী সরকার বন্ধ খামে শীর্ষ আদালতকে ভুল তথ্য দিয়েছে। তার ভিত্তিতেই কোর্ট রায় দিয়েছে। তাঁদের মতে, রায়ে বলা ছিল, সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি ও সিএজি রাফাল-চুক্তি খতিয়ে দেখছে। যা বাস্তব নয়। সরকারও এ বিষয়ে আগেই সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে, রায়ে ব্যকরণগত ত্রুটি রয়েছে। সরকারের হলফনামায় বলা ছিল, সংসদীয় কমিটি, সিএজি এমন চুক্তি খতিয়ে দেখে। আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, কমিটি, সিএজি তা দেখছে। ফলে রায়ের পুনর্বিবেচনা করতে প্রকাশ্য এজলাসে এ বিষয়ে শুনানি হোক।
আরও পড়ুন: ‘২০ মিনিট একা নরেন্দ্র মোদীর মুখোমুখি হতে চাই’
জেটলির যুক্তি, জেপিসি কোনও তদন্ত করতে পারে না। তাঁর দাবি, সুপ্রিম কোর্ট রাফালের দাম নিয়েও সন্তুষ্ট। ইউপিএ-সরকারের আমলে অস্ত্র ছাড়া শুধুমাত্র বিমানের যে দাম ঠিক হয়, মোদী জমানায় তার ভিত্তিতেই দর কষাকষি হয়েছে। রাহুলের যুক্তি, রাফালের আদতে দাম যে ৫৬০ কোটি টাকা ছিল, জেটলি তা-ও মেনে নিয়েছেন। মোদী সরকার সেটাই বাড়িয়ে ১৬০০ কোটি টাকার উপরে নিয়ে গিয়েছেন।
জানি না, জানি না বলতে বলতে অনিল অম্বানীর রিলায়্যান্স সংস্থা রাফাল নির্মাতা দাসোর থেকে কত টাকার বরাত পেয়েছেন, আজ তা-ও জানিয়ে জেটলি বলেন, ‘‘বলা হচ্ছে, ১ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি। ৩০ হাজার কোটি টাকার বরাত। বস্তুত, ওই সংস্থা ৫৮ হাজার কোটি টাকার চুক্তিতে দাসোর থেকে মাত্র ৮০০ কোটি টাকার বরাত পাবে।’’