কোথায় মিলবে কথা রাখার কড়ি

ভোটের আগে কল্পতরুর মতো প্রতিশ্রুতি বিলিয়েছিলেন। এ বার তা পূরণের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি অরবিন্দ কেজরীবাল। আম আদমি পার্টির অন্যতম নেতা আশিস খৈতানের দাবি, তিন দিনে প্রতিশ্রুতি পালন করবেন তাঁরা। কিন্তু প্রতিশ্রুতির ধরন ও বহর যে রকম, তাতে এই তিন দিনের সময়সীমা আদৌ বাস্তবসম্মত কি না, সেই প্রশ্ন কিন্তু উঠছে।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৪২
Share:

ভোটের আগে কল্পতরুর মতো প্রতিশ্রুতি বিলিয়েছিলেন। এ বার তা পূরণের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি অরবিন্দ কেজরীবাল।

Advertisement

আম আদমি পার্টির অন্যতম নেতা আশিস খৈতানের দাবি, তিন দিনে প্রতিশ্রুতি পালন করবেন তাঁরা। কিন্তু প্রতিশ্রুতির ধরন ও বহর যে রকম, তাতে এই তিন দিনের সময়সীমা আদৌ বাস্তবসম্মত কি না, সেই প্রশ্ন কিন্তু উঠছে। জন লোকপাল বা দিল্লিকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা এনে দেওয়ার মতো বিষয়গুলো এমনিতেই ‘তিন দিনে’ সমাধানের ব্যাপার নয়। এর সঙ্গে রয়েছে অর্ধেক দামে চব্বিশ ঘণ্টা বিদ্যুৎ, মাসে নিখরচায় পরিবার-পিছু কুড়ি হাজার লিটার জল, ফ্রি ওয়াই-ফাই, দিল্লি জুড়ে ১৫ লক্ষ সিসিটিভি বসানোর মতো হরেক আশ্বাস। আর আছে ৫০০টি ফ্রি-স্কুল, ২০টি ফ্রি-কলেজ, সরকারি হাসপাতালে ৩০ হাজার নতুন বেড, ঠিকা চাকরির বদলে সরকারি ক্ষেত্রে নতুন ৫৫ হাজার নিয়োগ।

কী হবে এই ঝুড়ি ঝুড়ি প্রতিশ্রুতির? আজ থেকেই প্রশ্ন তুলছে বিজেপি। তাদের বক্তব্য, বর্তমানে দিল্লিতে বিদ্যুতের চাহিদা ৬২০০ মেগাওয়াট। চাহিদা মেটাতে দিল্লির নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আপ। কিন্তু পরিবেশগত কারণে কয়লা-নির্ভর কেন্দ্র বানানো অসম্ভব দিল্লিতে। গ্যাস নির্ভর কেন্দ্র নির্মাণ ও চালানোর খরচ বিপুল। উপরন্তু বিদ্যুৎ মাসুলও অর্ধেক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কেজরীবাল।

Advertisement

আপ নেতা রাঘবের ব্যাখ্যা, “সরকারি রিপোর্টই বলছে, বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলি ফি-বছর ৫২ শতাংশ মুনাফা করে। সেই মুনাফা কমাতে হবে। বিভিন্ন সরকারি পরিকাঠামো নামমাত্র মূল্যে ব্যবহার করছিল তারা। এ বার বাণিজ্যিক দরে অর্থ আদায় হবে।” কিন্তু এত ক্ষতি করে কি দিল্লিতে ব্যবসা করতে রাজি হবে সংস্থাগুলি? সেই প্রশ্ন থাকছে। প্রশ্ন রয়েছে জল নিয়েও। বর্তমানে দিল্লির ভূ-গর্ভস্থ জলের যা চিত্র, তাতে মাসে পরিবার-পিছু কুড়ি হাজার লিটার জল বিনামূল্যে সরবরাহ করতে গেলে হরিয়ানার সাহায্য নিতে হবে কেজরীবালকে। কিন্তু বিজেপি শাসিত হরিয়ানা কতটা সাহায্য করবে, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে আপ শিবিরে।

রাজধানীতে মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১৫ লক্ষ সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আপ। প্রতি তিন মিটারে বসার কথা একটি করে ক্যামেরা। একটি সমীক্ষা বলছে, বেজিং ও লন্ডনে সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যা যথাক্রমে ৪ লক্ষ ৭০ হাজার এবং ৪ লক্ষ ২০ হাজার। সেখানে দিল্লিতে ১৫ লক্ষ ক্যামেরা বসাতে খরচ হওয়ার কথা প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ কোটি টাকা। প্রথমত, এই খরচটা দিল্লি সরকারের বর্তমান বার্ষিক আয়ের প্রায় চার গুণ। তার উপর ওই সংখ্যক সিসিটিভি-তে নজরদারি করতেই শুধু চার লক্ষ পুলিশ লাগবে। বর্তমানে দিল্লিতে পুলিশকর্মীর সংখ্যা এক লক্ষের কাছাকাছি। পুলিশে এই বিপুল পরিমাণ নিয়োগ কী ভাবে সম্ভব, সে আর এক প্রশ্ন। তা ছাড়া, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছ থেকে দিল্লি পুলিশের দায়িত্ব হাতে চান কেজরীবাল। শেষ পর্যন্ত তা হলে আরও পাঁচ হাজার কোটি টাকার খরচ এসে পড়বে।

নতুন স্কুল-কলেজ হাসপাতালের শয্যার জন্য হেসেখেলে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ এখনই দেখা যাচ্ছে। ৫৫ হাজার সরকারি কর্মচারী নিয়োগ, ঠিকা কর্মচারীদের স্থায়ীকরণের আনুমানিক খরচ ধরা হচ্ছে ১৫০০ কোটি। তার উপর রয়েছে সমস্ত অবৈধ কলোনিকে বৈধতা দিয়ে সেখানে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ-জল-পয়ঃপ্রণালী তৈরি, পাঁচ বছরে ৫০০০ নতুন বাস।

এত টাকা আসবে কোথা থেকে?

গত বছর দিল্লি সরকারের বাজেট ছিল ৩৭ হাজার কোটি টাকার। ভ্যাট থেকেই এসেছিল ২২ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এ বার ভ্যাটের হার কমানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়ে রেখেছেন কেজরীবাল। যার অর্থই হল রাজস্বে টান। তবে আপ নেতা রাঘবের দাবি, “দিল্লিকে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব বানিয়ে লগ্নির আকর্ষণীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে আয় বাড়াবে সরকার।”

ভবিষ্যতে যা-ই হোক, ১৪ ফেব্রুয়ারি রামলীলা ময়দানে শপথ গ্রহণের পর থেকেই যুদ্ধটা শুরু হয়ে যাচ্ছে কেজরীবালের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন