‘ওদের মৃত্যুই আমাদের শান্তি দেবে, ওটাই হবে একমাত্র সান্ত্বনা’

দোষীদের ধরতে জম্মু-কাশ্মীরের পুলিশের গড়িমসির অভিযোগ উঠেছিল প্রথমে। তবে আট জন অভিযুক্তের সকলে এখনও ধরা পড়েনি। তাদের প্রত্যেকের ফাঁসি চান ওই একরত্তির বাবা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীনগর শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:১৯
Share:

সরব: কাঠুয়া ধর্ষণ-কাণ্ডের প্রতিবাদে রাজঘাটের বাইরে বিক্ষোভ। শুক্রবার। ছবি: এএফপি।

ক্ষোভে-রাগে ফুঁসছে দেশ। আর ৫৪ বছরের যাযাবর মানুষটি এখন শুধু চাইছেন, তাঁর মেয়ের ওপর লাগাতার অত্যাচার করা লোকগুলোর চরম শাস্তি। আট বছরের মেয়েটির বাবা তিনি। এ বছরের জানুয়ারিতে তাঁর একরত্তি মেয়েকেই অপহরণ করে কয়েক দিন গণধর্ষণ করা হয়। খুন করে তার দেহ ফেলে রাখা হয়েছিল কাঠুয়ার জঙ্গলে।

Advertisement

দোষীদের ধরতে জম্মু-কাশ্মীরের পুলিশের গড়িমসির অভিযোগ উঠেছিল প্রথমে। তবে আট জন অভিযুক্তের সকলে এখনও ধরা পড়েনি। তাদের প্রত্যেকের ফাঁসি চান ওই একরত্তির বাবা। মেয়ের গণধর্ষণ আর খুন নিয়ে সংবাদমাধ্যমে হইচই শুরু হওয়ায় নিঃশব্দে রিসানা ছেড়েছেন তাঁরা। স্ত্রী, সন্তান আর পোষ্যদের নিয়ে এখন কোথায় রয়েছেন, ফোনে জানাতে চাননি বাবা। শুধু জানালেন, মেয়ের ধর্ষক আর খুনিদের ফাঁসির সাজা দেখার জন্যই বেঁচে আছেন তাঁরা। তাঁর কথায়, ‘‘ওদের মৃত্যুই আমাদের শান্তি দেবে। ওটাই হতে পারে একমাত্র সান্ত্বনা।’’ তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য কাশ্মীরের মানুষকে ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি মেয়েটির বাবা। গোটা ঘটনা সাম্প্রদায়িক তকমা পাওয়ায় প্রবল বিরক্ত তিনি। বলেছেন, ‘‘ধর্মের কী বুঝবে, আমার মেয়ে ডান হাত, বাঁ হাতের তফাত বুঝত না। এতই ছোট ছিল। এতে সম্প্রদায় আসছে কী করে? কোনও হিন্দু পরিবারের মেয়ের সঙ্গে এমন হলেও একই ভাবে রাস্তায় নামতাম আমরা।’’

দোষীদের কঠিন শাস্তি চান মেয়েটির মা-ও। যন্ত্রণায় কুঁকড়ে আছেন। সেই সঙ্গে কাঠুয়ার স্থানীয় বিজেপি নেতাদের আচরণেও স্তম্ভিত তিনি। অভিযুক্তদের আড়াল করা তো বটেই, তাদের সমর্থনে গত মার্চে মিছিল পর্যন্ত করেছেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী চন্দ্রপ্রকাশ গঙ্গা আর চৌধুরি লাল সিংহ। মেয়েটির মায়ের কথায়, ‘‘এ সব দেখে দমবন্ধ হয়ে আসছে আমার। ওরা এটা করছেন কী করে? ওদের বাড়িতেও তো মেয়ে রয়েছে। তাদের সঙ্গে এ রকম কিছু হলে ওঁরা কী করতেন, জানতে ইচ্ছে করছে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: অপরাধীরা ছাড়া পাবে না, দেশের মেয়েরা বিচার পাবেই: মোদী

বিজেপির ওই দুই মন্ত্রীই অবশেষে আজ রাতে ইস্তফা পত্র জমা দিয়েছেন। কাল বিষয়টি নিয়ে দল সিদ্ধান্ত নেবে। প্রবল চাপে মেহবুবা মুফতির সরকারও। অস্বস্তি আরও বেড়েছে মেহবুবার নিজের ভাইয়ের মন্তব্যে। রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী তাসাদুক মুফতি আজই এক সাক্ষাৎকারে বিজেপিকে বিঁধে বলেছেন, ‘‘দেখা যাচ্ছে, বিজেপি আর পি়ডিপি দুই দলই একই অপরাধের সঙ্গী হয়ে গিয়েছে। কাশ্মীরের একটি প্রজন্মকে রক্ত দিয়ে এর দাম চোকাতে হবে।’’

বিষয়টি নিয়ে মেহবুবাকে বিঁধেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। জম্মু-কাশ্মীরে বিজেপি-পিডিপি জোট নিয়ে অনড় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। দোষীদের কঠোর শাস্তির পক্ষে সওয়াল করে জানিয়েছেন, রাজ্যে পিডিপির সঙ্গেই চলবে বিজেপি। এই অবস্থায় কাল রাজ্যের সব মন্ত্রী, বিধায়ক, নেতাদের বৈঠকে ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন