এনআরসি-তে জায়গা হয়নি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির ভাইপো জিয়াউদ্দিন আলি আহমেদের। —নিজস্ব চিত্র।
স্বস্তিতে নেই শুভদীপ চৌধুরী। জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি)-র খসড়া তালিকায় নাম নেই তাঁর। অথচ শুভদীপের সন্তানদের নাম রয়েছে। শুভদীপ না হয় দেশের সাধারণ নাগরিক। কিন্তু এই তালিকায় ঠাঁই পাননি দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলি আহমেদের ভাইপোও। বিস্ময়ের আরও বাকি রয়েছে। জাতীয় নাগরিকপঞ্জির খসড়া তালিকায় নাম রয়েছে স্বাধীন রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনকারী জঙ্গি আলফা নেতা পরেশ বরুয়ার!
এমন অসংখ্য ফাঁকফোকর নিয়েই সোমবার প্রকাশিত হয়েছে অসমের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি। ফলে খুবই আতান্তরে পড়েছেন তালিকা থেকে বাদ পড়া ৪০ লক্ষেরও বেশি মানুষ।
নাগরিকপঞ্জির এই তালিকা নিয়ে দেশ জুড়ে আপাতত বিতর্কে তুঙ্গে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করতে ছাড়েননি বিরোধীরা। হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে সুপ্রিম কোর্টকেও। মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত জানিয়ে দিয়েছে, তালিকা সংক্রান্ত যাবতীয় দাবিদাওয়া মেটাতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা জানাতে হবে সরকারকে।
এনআরসি-তে ওঠেনি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলি আহমেদের ভাইপো জিয়াউদ্দিন আলি আহমেদের নাম। দেখুন ভিডিয়ো
তবে সর্বোচ্চ আদালতের পদক্ষের সত্ত্বেও দুশ্চিন্তা কাটছে না শুভদীপ চৌধুরীর মতো নাগরিকদের। যাঁরা আদতে অসমের বাসিন্দা হলেও কর্মসূত্রে বা অন্যান্য কারণে ভিন্ রাজ্যে রয়েছেন। শুভদীপের দাদা জানিয়েছেন, জানুয়ারিতে প্রকাশিত প্রথম তালিকায় তাঁর মা-বাবার নাম থাকলেও সোমবারের দ্বিতীয় তালিকায় জায়গা হয়নি তাঁর ছেলে শুভদীপের। শুভদীপ ছাড়াও তাঁর দাদা-বৌদি বা ভাইপো-ভাইঝির নাম ঢোকেনি এতে। সব দেখেশুনে শুভদীপের প্রশ্ন, “এটাই কি নির্ভুল এনআরসি? যেমন তালিকার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল আমাদের?”
আরও পড়ুন
রাজীবের চুক্তির জন্যই অসমে এই সঙ্কট, অমিতের মন্তব্যে তুলকালাম রাজ্যসভায়
আশ্বাস দিয়েছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। যাঁদের নাম তালিকায় নেই, তাঁদেরকে আতঙ্কিত না হতে আর্জি জানিয়েছেন তিনি। তালিকা প্রকাশের পর শান্তি বজার রাখার আবেদন জানিয়ে সর্বানন্দ বলেছেন, “এনআরসি একটি জাতীয় কার্যক্রম। সমাজের সব স্তরের মানুষজনের কাছে অনুরোধ করব, যাতে তাঁরা কোনও রকম উস্কানিমূলক মন্তব্য না করেন।’’
আরও পড়ুন
খসড়া নাগরিকপঞ্জির ভিত্তিতে কোনও পদক্ষেপ করা যাবে না, জানাল সুপ্রিম কোর্ট
মুখ্যমন্ত্রীর এই আশ্বাসের পরেও স্বস্তি পাননি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলি আহমেদের ভাইপো জিয়াউদ্দিন আলি আহমেদ। কামরূপ জেলার রঙ্গিয়া শহরের বাসিন্দা লেফটেন্যান্ট একরামুদ্দিন আলি আহমেদের ছেলে জিয়াউদ্দিন বলেন, “প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির ভাইপো হলেও এনআরসি-তে আমার নাম নেই। আমার বাবার নাম এই তালিকায় না দেখেও চিন্তা হচ্ছে।”
এই তালিকা থেকে যাঁদের নাম বাদ পড়েছে তাঁদের প্রত্যেককেই লিখিত অভিযোগ জানানোর সুযোগ দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন রেজিস্ট্রার জেনারেল অ্যান্ড সেনসাস কমিশনার শৈলেশ। তিনি জানিয়েছেন, তালিকায় যাঁদের নাম বাদ পড়েছে তাঁদের প্রত্যেকের কাছে চিঠি পাঠানো হবে।
তবে তাতে কি সত্যি-সত্যিই তালিকায় নাম উঠবে, সুপ্রিম কোর্টের এ দিনের নির্দেশের পরেও তা নিয়ে সংশয় কাটছে না শুভদীপের মতো নাগরিকদের।