এনআরসি তালিকায় নাম ওঠেনি পরিবারের কারও। ফলে গত কয়েক মাস ধরেই আতঙ্কে ভুগছিলেন বাগান শ্রমিক কৈলাস তাঁতি। নিজের মনে শুধু বিড়বিড় করতেন। শেষ পর্যন্ত আত্মঘাতীই হলেন। হাইলাকান্দি জেলার ধলাই চা বাগানের ছনটিলা ফাঁড়িতে শ্রমিকের কাজ করতেন কৈলাস। মৃতের স্ত্রী অনিতা তাঁতির অভিযোগ, এনআরসি-র খসড়ায় পরিবারের সদস্যদের নাম না থাকায় তাঁর স্বামী আত্মঘাতী হয়েছেন।
আজ সকালে কয়েকজন শ্রমিক বাগানেরই একটি গাছের ডালে তাঁর নিথর দেহটি ঝুলতে দেখেন। বাগান শ্রমিকেরা জানান, খসড়ায় নাম না ওঠায় সব সময় আতঙ্কে থাকতেন কৈলাস। প্রায়ই বলতেন, পুলিশ এসে সবাইকে ধরে নিয়ে গিয়ে জেলে পুরে দেবে। এক সময় উন্মাদের মতো আচরণও করতে শুরু করেন। পুলিশকে জানালে তাঁদেরই পরামর্শে কৈলাসকে কিছুদিন বাড়িতে আটকে রাখাও হয়। গত কয়েকদিন ধরে তাঁর অবস্থার কিছুটা উন্নতি দেখে আর আটকে রাখা হচ্ছিল না। পুলিশ জানায়, আজ সকালে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে বেরিয়ে পড়েন। সামান্য দূরে, বাগানেরই গাছের ডালে আত্মঘাতী হন।
কৈলাসের মৃত্যুতে গোটা বাগান এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বাগান শ্রমিকদের কথায়, এনআরসি-তে নীতি স্থির হয়েছে—আদিবাসী, বাগান শ্রমিকরা বিশেষ সুবিধে পাবেন। ভারতের আদি বাসিন্দা ধরে নিয়ে তাঁদের কাছে ১৯৭১ সালের আগের কাগজ খোঁজা হবে না। এর পরেও দেখা যাচ্ছে, খসড়া এনআরসি-তে বহু বাগান শ্রমিকের নাম নেই। অশিক্ষিত শ্রমিকরা তাতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। প্রশ্নে জেরবার জেলা প্রশাসনের কর্তারা এখন বলছেন, এই কথা উল্লেখ করে পুনরায় আবেদন করলেই তো হতো।
এ দিকে, অসমে এনআরসি প্রক্রিয়া নিয়ে ফের কেন্দ্রকে চিঠি পাঠাল রাষ্ট্রপুঞ্জের ধর্মীয় স্বাধীনতা, সংখ্যালঘু সমস্যা, শ্রেণি ও বর্ণবৈষম্য, বেআইনি বন্দিত্ব সংক্রান্ত ওয়ার্কিং গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এলিনা স্টেনার্ট। এ বারের চিঠিতে খসড়াছুট ধর্মীয় ও ভাষা-সংখ্যালঘুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। পুনরায় আবেদনের জন্য খসড়াছুটদের যথেষ্ট সময় দেওয়ার জন্যও তাঁদের তরফে আবেদন জানানো হয়েছে। ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের ভূমিকা ও বিনা বিচারে বা প্রমাণপত্র থাকার পরেও অনেককে ডি-ভোটার ঘোষণা করা নিয়েও সমালোচনা রয়েছে ৯ পাতার চিঠিটিতে। রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘উদ্বেগ’-এর সমালোচনা করে আসুর বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে প্রক্রিয়াটি চলছে। খামোকা তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চের জটিলতা বাড়ানো অর্থহীন।