Aravalli Controversy

বিপন্ন আরাবল্লি! ‘খনিজের জাদুঘর’ নিয়ে কিসের বিতর্ক? কেন চর্চায় সুপ্রিম কোর্টের রায়? কেনই বা চলছে নাগাড়ে আন্দোলন?

দিল্লি, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং গুজরাতের মধ্য দিয়ে প্রায় ৬৯২ কিলোমিটার এলাকা জু়ড়ে বিস্তৃত প্রাচীন পাহা়ড়শ্রেণি আরাবল্লি গত ২০০ কোটি বছর ধরে উত্তর ভারতের অন্যতম ঢাল হিসাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৫:৩৭
Share:
০১ ২২

আরাবল্লি নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই সেই পাহাড় এবং পাহাড়শ্রেণি নিয়ে বিবৃতি দিল কেন্দ্রের সরকার। আরাবল্লি পাহাড়শ্রেণির নতুন সংজ্ঞা বড় খননকাজের অনুমতি দেবে— তেমন দাবি খারিজ করে কেন্দ্র রবিবার জানিয়েছে, আরাবল্লি অঞ্চলের ৯০ শতাংশই ‘সুরক্ষিত’ থাকবে। ওই অঞ্চলে নতুন খনির ইজারা স্থগিত করার উপর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেরও উল্লেখ করেছে কেন্দ্র।

০২ ২২

দিল্লি, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং গুজরাতের মধ্য দিয়ে প্রায় ৬৯২ কিলোমিটার এলাকা জু়ড়ে বিস্তৃত প্রাচীন পাহা়ড়শ্রেণি আরাবল্লি গত ২০০ কোটি বছর ধরে উত্তর ভারতের অন্যতম ঢাল হিসাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

Advertisement
০৩ ২২

থর মরুভূমি থেকে উড়ে আসা বালি এবং ধূলিকণাকে রুখে দেয় এই অনুচ্চ পাহাড়গুলি। দিল্লির বায়ুদূষণ কমাতেও সাহায্য করে। সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যের ৩৭টি জেলার বহু সম্প্রদায়ের প্রয়োজনীয় জ্বালানি কাঠ, পশুখাদ্য, ভেষজ গাছ আসে আরাবল্লির বনভূমি থেকে।

০৪ ২২

ভূগর্ভের জল পূরণ করতে, মাটির ক্ষয় রুখতে, মরুকরণ নিবারণে, ধুলো-বালির ঝড় আটকে দিতে, বন্যপ্রাণীর আবাস এবং যাতায়াতের পথ হিসাবে, ক্ষুদ্র জলবায়ু পরিমণ্ডল ধরে রাখতে আরাবল্লি পাহাড়শ্রেণি অপরিহার্য। ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘পরিবেশগত মেরুদণ্ড’ হিসাবে কাজ করে আরাবল্লি। এই কারণে অতীতের নানা সমীক্ষা ২০ ফুট উচ্চতার পাহাড়, সেগুলির ঢালু অংশ এবং আনুষঙ্গিক ভূখণ্ডকেও আরাবল্লি পাহাড়শ্রেণির বলে ধার্য করে এসেছে।

০৫ ২২

আরাবল্লিতে অবৈধ খনির দীর্ঘমেয়াদি মামলার শুনানি চলাকালীন সুপ্রিম কোর্ট ২০২৪ সালের মে মাসে পাহাড়শ্রেণির ‘অভিন্ন সংজ্ঞা’ সুপারিশ করার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছিল। কারণ, খনির অনুমতি দেওয়ার সময় বিভিন্ন রাজ্য অসঙ্গতিপূর্ণ মানদণ্ড অনুসরণ করছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল।

০৬ ২২

পরিবেশ মন্ত্রকের সচিবের সভাপতিত্বে এবং রাজস্থান, হরিয়ানা, গুজরাত ও দিল্লির প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি দেখে যে, আরাবল্লির জন্য আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত সংজ্ঞা রয়েছে শুধুমাত্র রাজস্থানের, যা তারা ২০০৬ সাল থেকে অনুসরণ করে আসছে।

০৭ ২২

সূত্রের খবর, বাকি তিনটি রাজ্যই রাজস্থানের এই সংজ্ঞা গ্রহণ করতে সম্মত হয়। পাশাপাশি, এটিকে বস্তুনিষ্ঠ এবং স্বচ্ছ করার জন্য অতিরিক্ত সুরক্ষাব্যবস্থাও গ্রহণ করেছে রাজ্যগুলি।

০৮ ২২

এর পর সম্প্রতি আরাবল্লি নিয়ে কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের প্রস্তাবিত সংজ্ঞায় বলা হয়, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নয়, বরং আশপাশের এলাকার চেয়ে ১০০ মিটার বা তার বেশি উচ্চতার ভূখণ্ডই কেবলমাত্র আরাবল্লি পাহাড় বলে গণ্য হবে। অবৈধ খননকাজ রুখতে এবং পাহাড়শ্রেণিকে সুরক্ষা দিতেই এমন ভাবে আরাবল্লিকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে বলে জানায় কেন্দ্র।

০৯ ২২

তাতে সিলমোহর দেয় শীর্ষ আদালত। গত মাসে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, ভূপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ১০০ মিটারের বেশি হলে তবেই সেই পাহাড়কে আরাবল্লি পাহাড়শ্রেণির অংশ বলা যাবে।

১০ ২২

সুপ্রিম কোর্ট আরাবল্লির সুরক্ষার জন্য সুস্থায়ী খননের নিয়মবিধি বিষয়ক একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা (ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান ফর সাসটেনেবল মাইনিং) তৈরি করারও নির্দেশ দিয়েছে, যা চূড়ান্ত হওয়ার আগে ‘খনিজের জাদুঘর’ আরাবল্লিতে খননের নতুন ইজারা দেওয়া হবে না।

১১ ২২

তবে অনেকের মতে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর প্রশ্নের মুখে পড়েছে আরাবল্লির বেশির ভাগ পাহাড়ের অস্তিত্ব। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে এত দিন আরাবল্লি বলতে যে সব পাহাড়কে বোঝানো হত, তার বেশির ভাগই আর পাহাড় বলে গণ্য হবে না।

১২ ২২

অনেকেই দাবি করেছেন, এত দিন যে ভূখণ্ড আরাবল্লি পাহাড়শ্রেণি বলে গণ্য হয়ে এসেছে, তার ৯০ শতাংশই আর পরিবেশ সংরক্ষণ বিধির অধীনে সুরক্ষাযোগ্য থাকবে না। ১২ হাজারেরও বেশি পাহাড়ের মধ্যে মাত্র হাজারখানেক আদালতের শর্ত পূর্ণ করতে পারবে।

১৩ ২২

ফলে সে সব এলাকায় সহজেই খননকাজ চালানো যাবে। নির্বিচারে গড়ে তোলা যাবে পর্যটন এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক নির্মাণ। তেমনটাই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকে। অথচ পরিবেশ সুরক্ষার নিরিখে ছোট পাহাড়, ঝোপ-গুল্মে ঘেরা জমির গুরুত্ব কিছুমাত্র কম নয়।

১৪ ২২

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতার পরিমাপ না করে আশপাশের এলাকা থেকে উচ্চতার পরিমাপও ভূগোলের প্রচলিত প্রথার বাইরে। রাজস্থান, গুজরাত, হরিয়ানা, দিল্লি— নানা রাজ্য নানা ভাবে আরাবল্লিকে সংজ্ঞায়িত করত। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, প্রশাসনিক জটিলতা এড়াতে গিয়ে যে সংজ্ঞা নির্মাণ করা হচ্ছে, তা অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ। একটি এলাকার প্রাকৃতিক সম্পদ, জীবসম্পদ এবং বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করতে গেলে সার্বিক ভাবেই সেটিকে দেখতে হবে।

১৫ ২২

সুপ্রিম কোর্টের সেই রায়ের পর থেকেই আন্দোলন শুরু হয় বিভিন্ন রাজ্যে। আরাবল্লিকে বাঁচাতে সমাজমাধ্যমেও শুরু হয়েছে প্রতিবাদ। গ্রামবাসী, আইনজীবী থেকে শুরু করে রাজনীতিক কিংবা পরিবেশকর্মী— অনেকেই সরব হয়েছেন।

১৬ ২২

‘পিপল ফর আরাবল্লি’ নামে এক মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা নীলম অহলুওয়ালিয়া সেই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তে আমরা গভীর ভাবে হতাশ। এই রায় আরাবল্লির জন্য মৃত্যুদণ্ডের শামিল।’’

১৭ ২২

‘স্ট্যান্ড উইথ নেচার’ মঞ্চের তরফে লোকেশ ভিওয়ানিও বলেন, ‘‘এই রায় বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল, জলের জোগান, দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হতে পারে। আমরা দাবি করছি, সরকার ৬৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ আরাবল্লি পাহাড়শ্রেণিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত অঞ্চল’ ঘোষণা করুক। এই এলাকায় সব ধরনের খননকাজ অবিলম্বে বন্ধ করা হোক।’’

১৮ ২২

আরাবল্লি নিয়ে পরিবেশকর্মী-সহ অনেক পক্ষ উদ্বেগ প্রকাশের পর কেন্দ্র রবিবার জানায়, আরাবল্লি পাহাড়শ্রেণির ৯০ শতাংশকে সুরক্ষিত রাখা হবে। খনি সংক্রান্ত উদ্বেগও খারিজ করেছে কেন্দ্র।

১৯ ২২

সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদিত কাঠামো আরাবল্লি পাহাড়শ্রেণিকে শক্তিশালী সুরক্ষা প্রদান করবে এবং একটি বিস্তৃত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত নতুন খনির ইজারাও স্থগিত রাখবে।

২০ ২২

কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব জানিয়েছেন, শীর্ষ আদালতের অনুমোদিত সংজ্ঞা আরাবল্লির ৯০ শতাংশেরও বেশি এলাকাকে ‘সুরক্ষিত এলাকা’র আওতায় আনবে। আরাবল্লি অঞ্চলের সুরক্ষার ক্ষেত্রে ‘কোনও ছাড় দেওয়া হয়নি’ বলেও জানিয়েছেন তিনি। পরিবেশমন্ত্রীর দাবি, পুরো বিষয়টি নিয়ে ‘মিথ্যা’ খবর ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

২১ ২২

সমাজমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্ট করে ভূপেন্দ্র লিখেছেন, ‘‘আরাবল্লির মোট ১.৪৪ লক্ষ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে খনির কাজ কেবল ০.১৯ শতাংশ এলাকায় হতে পারে। বাকি সমগ্র আরাবল্লি সংরক্ষিত এবং সুরক্ষিত।’’

২২ ২২

সরকার আরও জানিয়েছে, আরাবল্লির জন্য প্রাথমিক হুমকি হল, অবৈধ এবং অনিয়ন্ত্রিত খনন। এই সমস্যা মোকাবিলায় আরও শক্তিশালী পর্যবেক্ষণ ড্রোন এবং নজরদারির মতো প্রযুক্তি ব্যবহারের সুপারিশ করেছে কেন্দ্র।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement