কেসিআরের উন্নয়ন-তালুকে ছায়া সিঙ্গুরের

বিধায়ক খোদ মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও। যদিও চার বছরে চার বারও আসেননি। তবু গজওয়েলের উন্নয়নের সর্বভূতে বিরাজমান তিনি। অদর্শনেও তাই ক্ষোভ নেই গজওয়েলবাসীর। মামার হয়ে কাজ দেখেন ভাগ্নে তথা পাশের সিদ্দিপেট কেন্দ্রের বিধায়ক, জলসেচমন্ত্রী টি হরিশ রাও।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত 

গজওয়েল (তেলঙ্গানা) শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:২৩
Share:

কে চন্দ্রশেখর রাও।

বিদ্যুৎ? এসেছে।

Advertisement

সড়ক? হয়েছে।

চাষের খেতে জল? ঢালাও। স্কুল, বাজার, হাসপাতাল? হ্যাঁ, সব!

Advertisement

ঝাঁ-চকচকে মসৃণ সড়কের কুয়াশা মোড়া দু’পাশ যেন হলুদ-সাদা জার্সি পড়ে শীতের সকালের নরম ওমটুক চেটেপুটে নিচ্ছে। এক দিকে সর্ষে। অন্য দিকে তুলো। আর ক’দিন পরেই যা চলে যাবে গজওয়েলের ইন্টিগ্রেটেড বাজার হয়ে হায়দরাবাদে।

বিধায়ক খোদ মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও। যদিও চার বছরে চার বারও আসেননি। তবু গজওয়েলের উন্নয়নের সর্বভূতে বিরাজমান তিনি। অদর্শনেও তাই ক্ষোভ নেই গজওয়েলবাসীর। মামার হয়ে কাজ দেখেন ভাগ্নে তথা পাশের সিদ্দিপেট কেন্দ্রের বিধায়ক, জলসেচমন্ত্রী টি হরিশ রাও।

মুখ্যমন্ত্রীর গোটা বিধানসভা এলাকা যখন উন্নয়নের ধ্বনিতে মশগুল, সুর কাটল তখনই। রামেশ্বরম গ্রামে ফিসফিস করে স্থানীয় এক জন বলেছিলেন, ‘‘ফেরার পথে পারলে ডান দিকটা ঘুরে যাবেন।’’ হায়দরাবাদ থেকে সিদ্দিপেট হয়ে করিমনগর পর্যন্ত যে জাতীয় সড়ক চলে গিয়েছে, তার বাঁ পাশে গজওয়েল। অন্য পাশে ভেমুলা গাঁঠ। উন্নয়ন দূর অস্ত, তোকাথা পঞ্চায়েতের গ্রাম নেমেছে ভিটে-মাটি বাঁচানোর মরণপণ লড়াইয়ে। জলাধার তৈরির জন্য ১৪টি গ্রামের জমি চিহ্নিত করেছিল সরকার। ১৩টি গ্রাম মেনে নিয়েছে। একা কুম্ভ ভেমুলা। বক্তব্য একটাই, তিন ফসলা জমি দিলে খাব কি? রুখা-শুখা লালচে জমিতে হঠাৎই সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম!

অভিযোগের আঙুল কালেশ্বরম প্রকল্পের দিকে। এক লক্ষ কোটি টাকার জলসেচ প্রকল্প ঘিরে স্বজনপোষণের অভিযোগ কম নেই। সেই প্রকল্পের আওতায় আসে গজওয়েল ও ডুবক্কা বিধানসভার ১৪টি গ্রামের জমি। কিন্তু বাদ সাধে ভেমুলা। এক-দু’দিন নয়, ৯১০ দিন ধরে আন্দোলন চালাচ্ছেন গ্রামবাসীরা। আন্দোলন চলাকালীন একাধিক বার মার খেয়েছেন, প্রায়ই পুলিশ এসে তুলে নিয়ে গিয়েছে, বৈঠক হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে—তাতেও চিঁড়ে ভেজেনি। ভেমুলা গ্রাম জানিয়ে দিয়েছে, হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে জমি অধিগ্রহণ আইনের ধারায় ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন দিতে হবে। যাতে জমির দাম প্রতি একর ছয় লক্ষের পরিবর্তে হবে কুড়ি লক্ষ টাকা। যা দিতে রাজি নয় সরকার। ভয়, অন্য গ্রাম যদি চেয়ে বসে।

গ্রামের পঞ্চায়েত ভবনে শুরুর দিন থেকে ধর্নায় বসেছেন কোণ্ডারি মলয়। তাঁর কথায়, ‘‘বেচলে ৬ লক্ষ, কিন্তু কিনতে গেলে দাম পড়ছে কুড়ি লক্ষ। জমি কিনব কী করে? চাষ না করলে খাব কী?’’ তিন বছরের আন্দোলনে ভেঙেছে ভেমুলাও। বছর চল্লিশের কে আনজায়া বললেন, ‘‘দু’হাজার ঘরের মধ্যে এক হাজার ঘর জমির বিনিময়ে টাকা নিয়ে নিয়েছে। গোটা গ্রামের ২২৫০ একরের মধ্যে ১২০০ একর সরকারের দখলে।’’ বাকিরা এখনও হারতে রাজি নন। যদিও ভবিষ্যৎ অজানা। শাসক দল গ্রামের পথ মাড়ায় না। কংগ্রেস, টিডিপি কিংবা বাম নেতারা পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। ডুবক্কার কংগ্রেস প্রার্থী এম নাগেশ্বর রেড্ডি বলেন, ‘‘জিতলে অন্তত ভেমুলাকে প্রকল্পের আওতা থেকে বার করে নিয়ে আসা যায়, সেই চেষ্টাই করব।’’

তবে এর মধ্যে বিরোধিতার মূল্যও দিতে হয়েছে। বন্ধ সমস্ত সরকারি সাহায্য। কৃষকদের রাওয়াত-বন্ধু, বয়স্কদের পেনশন, মেয়ের বিয়ের যৌতুক— বন্ধ সব কিছুই। রেশন দোকান বন্ধ থাকে মাসের কুড়ি দিনই। সরকার হাতে না মেরে ভাতে মারার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ জানালেন স্থানীয় সমবায় সমিতির প্রাক্তন প্রধান এ রঙ্গা রেড্ডি। ভাতা বন্ধের প্রতিবাদে দ্বারস্থ হয়েছেন হাইকোর্টেরও।

বারুদ জমেছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন