জয়জয়কার: রায়পুরে কংগ্রেস প্রার্থীর বিজয়ের পরে উল্লাস। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।
কড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রাহুল গাঁধী। অজিত জোগী ছত্তীসগঢ়ে কংগ্রেস নেতাদের সবথেকে পরিচিত মুখ হতে পারেন। গাঁধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ, পুরনো নেতা হতে পারেন। কিন্তু তাই বলে তাঁকে দলে থেকে দল-বিরোধী কাজ করতে দেবেন না।
তাড়ানোর আগেই জোগী অবশ্য কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে নতুন দল গড়েন। মায়াবতীর সঙ্গে জোট করে তিনি কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্কে কতটা ধাক্কা দেবেন, তা নিয়েই জল্পনা ছিল। ফল ঘোষণা হতে দেখা গেল, জোগীর জনতা কংগ্রেস তাঁর পারিবারিক গড়ের বাইরে বিশেষ আসন জিততে পারেনি। তাঁর দল কংগ্রেসের ভোটের সঙ্গে বিজেপির ভোটও কেটেছে।
ফল? পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণার দিনে ছত্তীসগঢ়ই রাহুলের মুখে প্রথম হাসি ফোটাল। বিজেপিকে কার্যত ধরাশায়ী করে ছত্তীসগঢ়ে ক্ষমতায় ফিরল কংগ্রেস।
২০১৩-য় দরভা ভ্যালিতে মাওবাদী হামলায় বিদ্যাচরণ শুক্ল, মহেন্দ্র কর্মা, নন্দকুমার পটেলের মৃত্যুতে ছত্তীসগঢ়ে কংগ্রেসের প্রথম সারি কার্যত মুছে গিয়েছিল। জোগী বেরিয়ে যাওয়ার পর প্রদেশ সভাপতি ওবিসি নেতা ভূপেশ বাঘেল, টি এস সিংহদেও, চরণদাস মহন্ত, তমরধ্বজ সাহুর মতো নেতারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। সেটারই সুফল পেল কংগ্রেস। সঙ্গে যোগ হল ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা রমন সিংহ সরকারের বিরুদ্ধে জমে ওঠা ক্ষোভ। বাঘেল, মহন্তদের মধ্যেই এ বার মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য লড়াই।
আরও পড়ুন: প্রথম দফায় ফেল চন্দ্রের ‘মহাকুটুমি’
রাহুল বলেই রেখেছেন, ২০১৯-এর ভোটে দু’টো প্রধান বিষয় হবে, চাকরির অভাব এবং চাষির সমস্যা। ছত্তীসগঢ়ের ৯০ আসনের বিধানসভায় দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে কংগ্রেসের জয়ের পিছনেও এই কারণ জোড়াই। ছত্তীসগঢ়ের যে কোনও গ্রাম বা আধা-শহরের চেনা ছবি হল, বাড়ির পুরুষরা রুটিরুজির টানে কেউ অন্ধ্র বা অন্য রাজ্যে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছিল ধানের উচিত দাম না মেলা নিয়ে কৃষকদের ক্ষোভ।
রমন গ্রাম-গরিবের মন জয়ে ২ টাকা কেজি দরে ৩৫ কিলোগ্রাম করে চাল বিলি করে ‘চাউলওয়ালে বাবা’ হয়ে উঠেছিলেন ঠিকই। মুফতে স্মার্টফোন বিলি করেছিলেন। কিন্তু চাষির ঋণ মকুব করতে পারেননি। সেখানে নির্বাচনী ইস্তাহারে চাষির ঋণ মকুব ও বেকারভাতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাজি মাত করেছে কংগ্রেস। হারের নৈতিক দায় রমন নিজের ঘাড়েই নিয়েছেন। রমনের ভাবমূর্তি যতই স্বচ্ছ হোক, তাঁর মন্ত্রীদের নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ গদি টলিয়ে দিয়েছে। রাতেই পদত্যাগ করেছেন তিনি।
ছত্তীসগঢ়ের ভোটে সাধারণত জনজাতিদের একটা বড় ভূমিকা থাকে। জনজাতি এলাকায় কংগ্রেসের ভোট বরাবরই বেশি। পাঁচ বছর আগে রমন তৃতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী হলেও সিংহভাগ জনজাতি আসন কংগ্রেসের দখলে ছিল। কিন্তু কংগ্রেস তার বাইরে আর সে ভাবে দাঁত ফোটাতে পারছিল না। এ বার কংগ্রেস জনজাতি ভোট ধরে রেখেই পরিধি বাড়াতে পেরেছে। বরং জনজাতি এলাকায় বিজেপি এ বার পূর্ণ শক্তি দিয়ে মাঠে নেমেছিল। লাভ হয়নি। বরং মাওবাদী দমনে অক্ষমতার প্রশ্নটি রমনের বিরুদ্ধে গিয়েছে। বস্তার-দন্তেওয়াড়া-সুকমায় মাওবাদীরা ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছিল। ভোটের সময় হামলাও চালিয়েছিল। তা সত্ত্বেও বিপুল ভোট পড়ে। ফল বলছে, দলে দলে জনজাতিরা রমন সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। ওবিসি নেতাদের সামনে রাখায় কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠ ওবিসি ভোটও পেয়েছে।
%CLICK_URL_UNESC%%'});