জ্যোতিরাদিত্য, কমলনাথকে নিয়ে একসঙ্গে চলার বার্তা রাহুলের। ছবি: পিটিআই।
কংগ্রেস সভাপতি হয়েই বলেছিলেন, অভিজ্ঞতা আর যৌবনের মিশেলে দল চালাবেন। জীবনে প্রথম বার মুখ্যমন্ত্রী বাছাই করতে বসে সেই মুনশিয়ানাই দেখালেন রাহুল গাঁধী।
মধ্যপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রীর দাবিদার ছিলেন দু’জন। প্রবীণ কমল নাথ এবং নবীন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। দিনভর আলোচনায় দুই নেতার বিবাদ মিটিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি। ছবি তুলেছেন একসঙ্গে। রাতে ভোপাল থেকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কমল নাথের নাম ঘোষণা হয়েছে। তার আগে লিও টলস্টয়কে উদ্ধৃত করে রাহুল টুইট করেছেন, ‘‘সব থেকে শক্তিশালী দুই যোদ্ধা হল, ধৈর্য ও সময়।’’ কংগ্রেস সূত্রের মতে, রাহুল বুঝিয়ে দিলেন, নবীনরা ধৈর্য রাখলে উপযুক্ত সময়ে যথাযথ মর্যাদা পাবেন। এ দিন রাহুলের সঙ্গে বৈঠক সেরে ভোপাল রওনা হওয়ার আগে জ্যোতিরাদিত্যও বলে যান, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর পদ কোনও দৌড় নয়। মানুষের সেবাই মূল লক্ষ্য।’’
রাজস্থানেও লড়াই নবীন-প্রবীণে। সচিন পাইলট বনাম অশোক গহলৌত। সেই লড়াই তিক্ত চেহারা নিয়েছে তাঁদের সমর্থকেরা খণ্ডযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায়। তাঁদের থামাতে পুলিশ নেমেছে, ছোড়া হয়েছে জলকামান।
আজ সকালেই সচিন এবং গহলৌতকে দিল্লিতে নিজের বাড়িতে ডেকে পাঠিয়েছিলেন রাহুল। সেখানে আসেন সনিয়া গাঁধী এবং প্রিয়ঙ্কা বঢরাও। কিন্তু আলোচনায় সমাধান সূত্র মেলেনি। কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, রাহুলের ভোট সচিনের দিকে আর সনিয়া চাইছেন অভিজ্ঞ গহলৌতকে। তবে ২০১৯ সালে রাজ্যে কে দলকে বেশি আসন দিতে পারবেন, সেই অঙ্কই গুরুত্ব পাচ্ছে সব চেয়ে বেশি।
আরও পড়ুন: যেন কিছুই হয়নি, দেখাচ্ছে বিজেপি
সকালের বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পরে জয়পুরের পথে রওনা হন সচিন এবং গহলৌত। রাহুলের নির্দেশে মাঝপথ থেকে ফিরে আসতে হয় তাঁদের। যুযুধান সমর্থকদের শান্ত থাকার আর্জি জানিয়ে বার্তা দিতে হয়। রাতে ফের বৈঠকে বসেন রাহুল। কিন্তু তাতেও জট খোলেনি। রাজস্থানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেস নেতা কে সি বেণুগোপাল রাহুলের বাড়ি থেকে বেরিয়ে বলেন, ‘‘সমাধানসূত্র এখনও অধরা। কাল ফের আলোচনা হবে।’’
ছত্তীসগঢ় নিয়েও রাহুল আজ এক দফা আলোচনা সেরেছেন। মুখ্যমন্ত্রী পদের তিন দাবিদার টি এস সিংহদেও, ভূপেশ বাঘেল এবং চরণদাস মহন্তকে আগামিকাল বৈঠকে ডেকেছেন তিনি।
সভাপতি হিসেবে এটাই রাহুলের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী বাছাই। পঞ্জাবে ভোটের আগেই ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহ মুখ্যমন্ত্রীর মুখ ছিলেন। এ বার তিন রাজ্যে পর্যবেক্ষক পাঠিয়ে বিধায়কদের মত জেনেছেন রাহুল। ‘শক্তি অ্যাপ’-এ মতামত নিয়েছেন লক্ষ লক্ষ কংগ্রেস কর্মীর। আজ সনিয়া বলেন, ‘‘কর্মীদের থেকে মতামত নিয়ে এক অভিনব পথে হেঁটেছেন রাহুল।
কিন্তু বিজেপির কটাক্ষ, যদি সনিয়া গাঁধী, প্রিয়ঙ্কাকেও মুখ্যমন্ত্রী বাছাইয়ে সামিল হতে হয়, তা হলে রাহুলের মুন্সিয়ানা কোথায়? কংগ্রেসের পাল্টা জবাব, নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের মতো মুখ্যমন্ত্রী চাপিয়ে দেওয়ার পথে হাঁটছেন না রাহুল। তিনি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সহমত তৈরির পথে হাঁটছেন। তাই সবার সঙ্গে কথা বলছেন। তাতে সময়ও লাগছে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, তাঁর রাশ আলগা হল। বিজেপি কি ভুলে গিয়েছে, উত্তরপ্রদেশে ফল ঘোষণার সাত দিন পর যোগীর নাম স্থির হয়েছিল?