ভোপালের মসনদ পুনরুদ্ধার করতে চলেছে কংগ্রেস? উত্তরের অপেক্ষায় গোটা ভারত।
ভোট মিটে গিয়েছিল ২৮ নভেম্বর। ভোটযন্ত্রে বন্দি হয়ে গিয়েছিল মধ্যপ্রদেশের তাবড় রাজনীতিকদের ভাগ্য। স্নায়ু টানটান রেখে প্রায় দু’সপ্তাহ অপেক্ষার পরে আজ প্রকাশ পাচ্ছে ফল। লাগাতার চতুর্থ বারের জন্য সরকার গঠন করতে চলেছে বিজেপি? নাকি ১৫ বছর পর গেরুয়া গড় তছনছ করে ভোপালের মসনদ পুনরুদ্ধার করতে চলেছে কংগ্রেস? উত্তরের অপেক্ষায় গোটা ভারত।
যে পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হল, তার মধ্যে মধ্যপ্রদেশই সবচেয়ে বড়। ২৩০ আসনের মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় গত বার বিজেপির দখলে ছিল ১৬৫টি। কংগ্রেস পেয়েছিল ৫৮টি। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি অনেকটাই আলাদা। গত ১৫ বছরে মধ্যপ্রদেশের মাটিতে এত কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি বিজেপি-কে যে হতে হয়নি, সে বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একমত।
তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের নেতৃত্বে মধ্যপ্রদেশের উন্নয়ন কতটা হয়েছে— নির্বাচনী প্রচারে মূলত তার উপরেই জোর দিয়েছিল বিজেপি। তবে প্রচারের শেষ পর্বে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের চেষ্টার অভিযোগও বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে এনেছিল বিরোধীরা।
অন্য দিকে কংগ্রেসের হাতিয়ার ছিল ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা একটা সরকারের বিরুদ্ধে জমে ওঠা অসন্তোষ, গোটা মধ্যপ্রদেশে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ এবং জিএসটি-নোটবন্দির মতো ইস্যুকে ঘিরে মাঝারি ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ।
গত ১৫ বছর ধরে মধ্যপ্রদেশে হওয়া প্রায় সব নির্বাচনেই কংগ্রেস প্রবল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ভুগেছিল। জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, কমল নাথ এবং দিগ্বিজয় সিংহের আলাদা আলাদা শিবির এবং একের সঙ্গে অপরের প্রবল টানাপড়েন— এর জেরেই কংগ্রেসকে বার বার শোচনীয় হারের মুখ দেখতে হচ্ছিল বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত। এ বার কিন্তু কংগ্রেসের মধ্যে সেই গোলমাল দেখা যায়নি। এ বারের নির্বাচনী প্রচারে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয়কে মোটামুটি পিছনের সারিতেই পাঠিয়ে দিয়েছিলেন রাহুল গাঁধী। কমল নাথকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এবং জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান পদে বসিয়ে ভোটে গিয়েছিল কংগ্রেস। ঐক্যবদ্ধ চেহারার এই কংগ্রেসে প্রার্থীতালিকা নিয়ে ক্ষোভও অন্যান্য বারের চেয়ে অনেক কম ছিল এই নির্বাচনে।
আরও পড়ুন: গণনা-পর্বে কংগ্রেসকে নিয়ে চিন্তা অমিতের
বিজেপি-তে কিন্তু প্রার্থী তালিকা নিয়ে ক্ষোভ ছিল অনেক বেশি। কংগ্রেস যেমন মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে কাউকে তুলে ধরতে পারেনি, বিজেপির ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। শিবরাজ সিংহ চৌহানকেই ফের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরে ভোটে গিয়েছে বিজেপি। কিন্তু প্রার্থী বাছাইয়ে শিবরাজের প্রায় একচ্ছত্র দাপটে বিজেপির মধ্যে ক্ষোভ ছিল অন্যান্য বারের চেয়ে অনেক বেশি। অন্তত ৫৩টি আসনে বিদ্রোহী বিজেপি নেতারা দলের অস্বস্তির কারণ হয়েছেন।
শেষ পর্যন্ত কার দিকে ভারী হল পাল্লা, স্পষ্ট হয়ে যাবে আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই।