বিমানে শ্রোতা রাহুল, আবদার মেটালেন নিজস্বীর

ছত্তীসগ়ঢ়ে ক্ষমতায় এলে ১০ দিনের মধ্যেই ঋণ মকুব, আশ্বাস রাহুলের

ছত্তীসগঢ় সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির অভিযোগ এবং রমন সিংহের ছেলে অভিষেকের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়েও আজ সরব হয়েছেন রাহুল।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

রায়পুর শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৮ ০৫:২৮
Share:

পখাঞ্জুরে জনসভায় রাহুল গাঁধী

দিল্লি থেকে সকাল সাড়ে আটটার রায়পুরগামী বিমানের চাকা সবে গড়াতে শুরু করেছে। সিট বেল্ট বাঁধা, মোবাইল ফোন বন্ধ করে ফেলার নির্দেশ ঘোষণা হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

জানলার ধারের ১৬-এফ আসনের যাত্রীটি তখনও মোবাইলে জরুরি আলোচনায় ব্যস্ত।

এয়ার হোস্টেস এ বার একটু ধমকের সুরেই বললেন, ‘স্যর, প্লিজ সুইচ অফ ইওর মোবাইল।’ বাধ্য ছেলের মতো তাড়াতাড়ি মোবাইল বন্ধ করে জ্যাকেটের পকেটে ঢুকিয়ে ফেললেন রাহুল গাঁধী।

Advertisement

তখন তাঁর কাঁচুমাচু মুখ দেখে কে বলবে, ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে সেই তিনিই ছত্তীসগঢ়ের মাটিতে পা রেখে নরেন্দ্র মোদী, রমন সিংহের বিরুদ্ধে হুঙ্কার ছাড়বেন! প্রথমে কাঙ্কেরের বাঙালি অধ্যুষিত পখাঞ্জুর, তার পরে খোদ ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের দুর্গ রাজনন্দগাঁওয়ে একের পর এক জনসভায় ঝড় তুলবেন।

বিমানের ইকনমি ক্লাসের যাত্রীকে দেখে এটাই বা কে বলবে, যে তিনি কংগ্রেস সভাপতি। আগামী বছরের লোকসভা ভোটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রধান চ্যালেঞ্জার। বিমানে উঠে নিজেই সবাইকে হাসি মুখে হ্যালো বললেন। বিমান আকাশে ওড়ার পরে ভেবেচিন্তে ঠিক করলেন, কফির সঙ্গে ওটমিল কুকিজ খাওয়া যাক।

কফি শেষ হতেই বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে পাশের সারির যাত্রীদের কাছ থেকে অনুরোধ এল, তাঁরা রাহুলের সঙ্গে কথা বলতে চান। সবাইকে আরও অবাক করে, রাহুল হাসি মুখে উঠে গিয়ে তাঁদের মাঝখানে ফাঁকা আসনে বসে পড়লেন। এখানে তিনি বক্তা নন, মনোযোগী শ্রোতা। তার মধ্যেই আর এক তরুণ যাত্রী উঠে এসে বললেন, তাঁর কিছু বলার রয়েছে। রাহুল তাঁর কথাও শুনলেন মন দিয়ে।

রায়পুরে বিমান নামতেই একের পর এক নিজস্বীর অনুরোধ। টারম্যাকে নামার পর বিমানের সামনে দাঁড়িয়েও অকাতরে সেই অনুরোধ মেটালেন রাহুল। তার পর পাড়ি দিলেন কাঙ্কেরের পথে।

প্রথম সভা পখাঞ্জুরে। দেশভাগের পর উদ্বাস্তু বাঙালিদের নিয়ে এসে রাখা হয়েছিল এই পখাঞ্জুরে। সেখানে এখন তাঁদের উত্তরসূরিদের বাস। ইন্দিরা গাঁধী অনেকবার এসেছেন দেশহারা মানুষগুলোর কাছে। সেই স্মৃতি উস্কে দিলেন রাহুল। বললেন, “ইন্দিরা গাঁধীজি এখানকার আদিবাসী আর বস্তারে বাস করা বাঙালিদের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন”।

ঠাকুমার থেকে তিনি কী শিখেছেন, তা-ও আজ জানিয়েছেন ভোটপ্রচারে আসা কংগ্রেস সভাপতি। রাহুলের কথায়, “উনি অনেক কিছু শিখিয়েছিলেন আমাকে। তার মধ্যে এটাও ছিল যে, রাজনীতি সমাজের দুর্বল ও গরিব মানুষের জন্য। আমি দুর্বল, নিপীড়িতদের পাশেই দাঁড়াব। তাঁদের অধিকারের জন্য লড়ব।”

আর এখানেই নিজের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী-রমন সিংহের ফারাক তুলে ধরেছেন রাহুল। কাঙ্কের থেকে রাজনন্দগাঁও— সর্বত্র রাফাল প্রসঙ্গ তুলেছেন। সেই সঙ্গে অভিযোগ করেছেন, “দিল্লিতে মোদীজির ১০ থেকে ১৫ জন শিল্পপতি বন্ধু রয়েছেন। একই ভাবে ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রীরও ১০ থেকে ১৫ জন বড় শিল্পপতি বন্ধু রয়েছেন। মোদীজি আর রমন সিংহ ওই বন্ধুদের অনুমতি ছাড়া কোনও কাজ করেন না।’’

ছত্তীসগঢ় সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির অভিযোগ এবং রমন সিংহের ছেলে অভিষেকের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়েও আজ সরব হয়েছেন রাহুল। বলেছেন, ‘‘পাকিস্তান (পানামা পেপারে নাম থাকায়) নওয়াজ শরিফকে জেলে ভরেছে। পানামায় তো অভিষেকেরও নাম রয়েছে!’’ কংগ্রেস সভাপতির আশ্বাস, ‘‘দিল্লি হোক বা ছত্তীসগঢ়, কংগ্রেস যখন ক্ষমতায় আসবে, তখন যে-ই দুর্নীতি করে থাক, তাকেই জেলে পাঠাবে।’’

দুর্নীতি মোকাবিলার পাশাপাশি ছত্তীসগঢ়ের গরিব চাষিদের জন্যও প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেন রাহুল। ঘোষণা করলেন, রাজ্যে কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে ১০ দিনের মধ্যেই তাঁদের ঋণ মকুব করে দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন