পাঁচ রাজ্যে ভোটের ধাক্কা সামলাতে শেষমেশ ভরসা খয়রাতি!

অনেকেরই বক্তব্য, হাত গুটিয়ে বসে থাকার মানুষ মোদী নন। ঝুলি থেকে স্বপ্নের জাদুকরের মতো নতুন কোনও প্রতিশ্রুতি ঠিকই বার করে আনবেন তিনি।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:৪৫
Share:

কোন পথে যে... নয়াদিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবার। ছবি: পিটিআই।

মঙ্গলবার পাঁচ রাজ্যে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে বিজেপির। ছ’মাসের মধ্যেই লোকসভা ভোট। সেই ভোটে জেতার লক্ষ্যে এ বার কী স্বপ্ন দেখাবেন নরেন্দ্র মোদী?

Advertisement

২০১৪-র লোকসভা ভোটের আগে মোদীর প্রতিশ্রুতি ছিল, কালো টাকা ফিরিয়ে সবার অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেবেন। কথা রাখতে পারেননি। সেই ক্ষতে মলম দিতে এ বার কি তবে মাসপয়লায় সবার অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেবেন তিনি? হিন্দি বলয়ে বিজেপির বিজয়রথের চাকা বসে যাওয়ার পরের দিন এটাই মূল জল্পনা রাজধানী শহরে।

অনেকেরই বক্তব্য, হাত গুটিয়ে বসে থাকার মানুষ মোদী নন। ঝুলি থেকে স্বপ্নের জাদুকরের মতো নতুন কোনও প্রতিশ্রুতি ঠিকই বার করে আনবেন তিনি। সেই জাদুকাঠি হতে পারে ‘সকলের জন্য ন্যূনতম আয়’ বা ‘ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম’। দু’বছর আগে যে ভাবনার কথা এ দেশে প্রথম বলেছিলেন তৎকালীন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন। এই প্রকল্পে নীতিগত ভাবে প্রত্যেককে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেওয়ার কথা বলা হলেও দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী এবং বেকারদের জন্য তা চালু করা যায় কি না, সে ব্যাপারে চর্চা হয়েছিল। অনেকের ধারণা, লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে আগামী ১ ফেব্রুয়ারির বাজেটে এই ঘোষণা করে দিতে পারেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। সুব্রহ্মণ্যন তো আজ বলেই দিয়েছেন, ‘‘এই ভোটের ফল, তার সঙ্গে গত দু’বছরে কৃষিতে সঙ্কট মাথায় রেখে আমার দৃঢ় ধারণা, লোকসভা ভোটের আগে সব দলের ইস্তাহারেই কোনও না কোনও ভাবে এই প্রতিশ্রুতি থাকবে।’’

Advertisement

নতুন স্বপ্ন
• সকলের জন্য ন্যূনতম আয়
• কৃষিঋণ মকুব
• আয়ুষ্মান ভারত ‘স্বাস্থ্য বিমা’য় আরও লগ্নি

এর সঙ্গে চাষিদের অসন্তোষ রুখতে কৃষিঋণ মকুব করা যায় কি না, সেই হিসেব-নিকেশও শুরু হয়েছে। পাশাপাশি ‘আয়ুষ্মান ভারত’-এর মতো স্বাস্থ্য বিমায় আরও বেশি অর্থ ঢালার ইঙ্গিত দিয়ে মোদী ঘোষণা করেছেন, ২০২৫-এর মধ্যে জনস্বাস্থ্যে সরকারি খরচ জিডিপি-র ২.৫%-এ পৌঁছবে। যা এখন ১.১৫%।

মুশকিল একটাই। ‘গৌরী সেন’ হয়ে টাকা জোগাবেন কে?

আরও পড়ুন: কল্পতরু হয়ে ওঠার ফাঁদে পা দিলে কিন্তু চলবে না

সুব্রহ্মণ্যনের হিসেবে গরিবদের দারিদ্রসীমার উপরে আনার জন্য ৭,৬২০ টাকা করে দিতে গেলে খরচ জিডিপি-র ৫%। অর্থাৎ প্রায় ৬ থেকে ৭ লক্ষ কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদ প্রণব বর্ধনের হিসেবে, ১০ হাজার টাকা করে দিতে গেলে জিডিপি-র ১০% খরচ হবে। অর্থাৎ ১২ থেকে ১৪ লক্ষ কোটি টাকা।

আর গোটা দেশে কৃষকদের ঋণ মকুব করতে গেলে অন্তত ৪ লক্ষ কোটি টাকার দায় নিতে হবে। এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা কি বোকা যে কংগ্রেস কৃষিঋণ মকুবের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে দেখেও চুপ করে বসেছিলাম! টাকা আসবে কোথা থেকে, সেই প্রশ্নেই আটকে গিয়েছি।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘এ বার দেখি, কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রীরা কোথা থেকে টাকা জোগাড় করেন!’’

দুই নেতার দিন

নরেন্দ্র মোদী
• বুধবার সকালে বিজ্ঞান ভবনের অনুষ্ঠানে
• সংসদ ভবনে দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক
• অল্পক্ষণের জন্য লোকসভায়
• সংসদ ভবনে অজিত ডোভালের সঙ্গে বৈঠক
• বিকেলে গেলেন সাউথ ব্লকে

অমিত শাহ
• সারা দিন ঘরবন্দি
• তিন রাজ্যে হারের সমীক্ষা
• নেতাদের সঙ্গে বৈঠক
• বৃহস্পতিবার পদাধিকারীদের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি

কিন্তু টাকা জোগাড়ের দায় মোদী সরকারের কিছু কম নয়, বরং বেশিই। বিরোধীদের অভিযোগ, খয়রাতির জন্যই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভাঁড়ার থেকে ৩.৬ লক্ষ কোটি টাকা চাইছে কেন্দ্র।

আরও পড়ুন: মোদী চুপ, অন্তরালে ‘চাণক্য’ও, সংসদে চুপসে বিজেপি

তবে সেই টাকা পেলেও সবটুকু সুরাহা হবে না। সরকারি কর্তাদের মত, সে ক্ষেত্রে হয় অন্য সব ভর্তুকি বন্ধ করে দিতে হবে। না হলে হতদরিদ্রদের জন্য সামান্য ভাতা দিতে হবে। অর্থাৎ, ২০১৯-এর ফাইনালে ঘুরে দাঁড়াতে হলে মোদীর সামনে বিকল্পও কম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন