Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

মোদী চুপ, অন্তরালে ‘চাণক্য’ও, সংসদে চুপসে বিজেপি

তিনি বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ। গত কাল সকালে সংসদে এসেছিলেন। পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফল তখনও স্পষ্ট হয়নি।

থমথমে মুখ নিয়ে বসে নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

থমথমে মুখ নিয়ে বসে নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:১০
Share: Save:

পঞ্চাশ বছর ধরে পঞ্চায়েত থেকে সংসদে ক্ষমতায় থাকার কথা যিনি বলেছিলেন, দু’দিন ধরে দেখা যাচ্ছে না তাঁকে।

তিনি বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ। গত কাল সকালে সংসদে এসেছিলেন। পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফল তখনও স্পষ্ট হয়নি। দুপুর থেকেই বিজেপির ‘চাণক্য’ উধাও। ঘরের বাইরে পা রাখতে কেউ দেখেননি। বিজেপি অফিসেও আসেননি।

অথচ কালই বিজেপির সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক ডাকা হয়েছিল। তাতে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। পাঁচ রাজ্যের ফলের উৎসব হবে। এমনটাই ভাবা হয়েছিল। সকাল থেকেই এসপিজি, গন্ধ শোঁকা কুকুর, পুলিশ ঘিরে ফেলেছিল বিজেপির ঝাঁ চকচকে নতুন দফতর। কিন্তু ঝুলি শূন্য দেখে সেই বৈঠকটিও বাতিল হয়।

প্রধানমন্ত্রীকে আজ অবশ্য সকালে দেখা গিয়েছে বিজ্ঞান ভবনের এক অনুষ্ঠানে। বিজেপি থেকেও জানানো হচ্ছিল, দলের হতাশা কাটানোর কোনও মন্ত্র দিতে পারেন নরেন্দ্র মোদী। নজর রাখুন। কিন্তু কোথায় কী? থমথমে মুখ নিয়ে কোনও রকমে বক্তৃতা শেষ করে ছুটলেন সংসদে।

সংসদে তখন গাঁধী মূর্তির পাদদেশে বিরাট হল্লা। এক দিকে তেলুগু দেশম, জগন্মোহনের দল অন্ধ্রপ্রদেশকে বিশেষ মর্যাদার দাবিতে স্লোগান তুলছে। দক্ষিণের ডিএমকে, এডিএমকে কাবেরী নিয়ে। আর শরিক শিবসেনা বলছে, রামমন্দির না করলে সংসদও চলবে না। সকালেই নিজেদের মুখপত্রে শিবসেনা রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বের তারিফ করে ‘বিজেপি-মুক্ত’ ভারতের কথা বলে মোদী-শাহেরই তুলোধোনা করেছে।

সংসদ চত্বরে হাসিমুখ সব বিরোধী দলের নেতার। জিতে খুশি কংগ্রেস। ততধিক খুশি আরজেডি, সমাজবাদী পার্টি, এনসিপি, এমনকি অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দলও। দু’আঙুল তুলে বিজয় চিহ্ন দেখিয়ে সকলে ঢুকছেন সংসদে। যেন নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে প্রথম যুদ্ধটি জিতে ফেলেছেন। এ বারে শুধু ফাইনালের অপেক্ষা। চুপসে গিয়েছেন বিজেপি নেতারা। মুখভার তাঁদের। শশী তারুর বললেন, ‘‘বিজেপিকে জনতা তিন তালাক দিয়েছে।’’ তিন তালাক? হিন্দি-বলয়ের তিন রাজ্য— মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তীসগঢ়।

আরও পড়ুন: কল্পতরু হয়ে ওঠার ফাঁদে পা দিলে কিন্তু চলবে না

সংসদ শুরু হতেও একই দৃশ্য। হুড়মুড়িয়ে ওয়েলে চলে এলেন বিরোধীদের কয়েকটি দলের সাংসদ। যাঁরা এত ক্ষণ বাইরে হল্লা করছিলেন। কংগ্রেসও রাফাল নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির দাবি তুলল। প্রধানমন্ত্রী এলেন লোকসভায়। কিন্তু হাঙ্গামা দেখে কিছু ক্ষণেই বুঝে গেলেন, হাওয়া গোলমেলে। উঠে সংসদ ভবনে নিজের কক্ষে চলে গেলেন। হট্টগোলের জেরে প্রথম দিনেই দফায় দফায় মুলতুবি করতে হল সভা, শেষে সারা দিনের মতো। রাজ্যসভাতেও একই হাল। ওয়েলে ডিএমকে, এডিএমকে চেঁচাচ্ছে, ‘‘উই ওয়ান্ট।’’ আর বসে বসেই কংগ্রেস ও বাকি বিরোধী দল বলতে শুরু করল, ‘‘আরবিআই, সিবিআই, রাফাল।’’ রাজ্যসভার নেতা অরুণ জেটলিও কিছু ক্ষণ থেকে বেরিয়ে গেলেন। হট্টগোলের মধ্যে একটি বিল পাশ হল। কিন্তু সরকার বুঝছে, পাঁচ রাজ্যের ফলে বাড়তি অক্সিজেন পেয়ে গিয়েছে বিরোধীরা। কংগ্রেসের জয় দেখে মায়াবতী-অখিলেশও কংগ্রেসের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। মোড় ঘোরাতে মোদী-শাহকেই কিছু একটা করতে হবে। কারণ, নেতৃত্বের উপর আস্থা হারাচ্ছেন বিজেপি নেতারাও।

আরও পড়ুন: লোকসভায় ভোট আসবে কোথা থেকে? উনিশের বিপদই ভাবনা বিজেপির

অপেক্ষা আগামিকালের। দুপুরে দলের পদাধিকারীদের নিয়ে বসছেন অমিত। হারের সমীক্ষা আর লোকসভার কৌশল নিয়ে বৈঠক। সকালে আছে বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠকও। এই প্রথম ভোটের পর ‘মোদী-মাহাত্ম্য’ বর্ণনা করে কোনও প্রস্তাব আসবে না। মোদী বুথ স্তরের কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক ফের শুরু করবেন শুক্রবার থেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE