ডিএসপি সাহেবের বাড়ি বললেই এলাকায় যে কেউ চিনিয়ে দেবেন। নওহাট্টার জামিয়া মসজিদ থেকে তাঁর বাড়ির দূরত্ব তিন কিলোমিটারের বেশি নয়। ভেবেছিলেন ভিড়টা একটু কমলেই বাড়ি ফিরবেন। বাংলাদেশে ডাক্তারি পড়তে যাওয়া মেয়েটা ইদের ছুটিতে সদ্য দেশে ফিরেছে। ঠিক করে রেখেছিলেন, পরিবারের সঙ্গেই রোজা ভাঙবেন। হলো না। মসজিদের ঠিক বাইরে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের নিরাপত্তা শাখার ডিএসপি মহম্মদ আয়ুব পণ্ডিতকে নগ্ন করে, পাথর দিয়ে থেঁতলে মেরে ফেলল শ’তিনেক উন্মত্ত জনতা।
পুলিশের দাবি, ঘাতকদের মধ্যে অন্তত দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে আজ সকালে। ঘটনাটিকে ‘চরম লজ্জাজনক’ বলে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। ঘটনার সময়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা মিরওয়াইজ উমর ফারুক ওই মসজিদে ছিলেন বলে দাবি স্থানীয়দের একাংশের।
আরও পড়ুন:রাষ্ট্রীয় ‘বর্বরতা’-কে দুষছেন মিরওয়াইজ
গত কাল রাতের ঘটনা। মসজিদে তখন সদ্য নমাজ পড়া শেষ হয়েছে। ভিড়ে থিকথিক করছে গোটা চত্বর। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সেই ভিড়েরই ভিডিও তুলছিলেন মসজিদ এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ডিএসপি মহম্মদ আয়ুব। উর্দিতে নয়, সাদা পোশাকে ছিলেন তিনি। কেন ছবি তুলছেন— এই প্রশ্ন তুলেই তাঁর সঙ্গে বচসা জুড়ে দেয় এক দল তরুণ। এক পুলিশকর্মী আজ আবার আনন্দবাজারকে জানান, ভিড় থেকে হঠাৎ হুরিয়ত নেতা মিরওয়াইজের নামে স্লোগান ওঠে। বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা মসজিদে আসছেন কি না, খোঁজ নিতে গিয়েই বিপদে পড়েন ডিএসপি।
নওহাট্টায় আজ শেষকৃত্যের আগে শ্রীনগরের জেলা পুলিশ লাইনে নিহত ডিএসপি-কে শ্রদ্ধা জানান তাঁর সহকর্মীরা। সেখানে উপস্থিত থেকে মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি বলেন, ‘‘এটা বিশ্বাসের হত্যা। এক জন কর্তব্যরত পুলিশকে এ ভাবে খুন করার চেয়ে লজ্জার কিছু হয় না। নিজেদের লোক বলেই চরম উত্তেজনার মধ্যেও যথাসম্ভব সংযম দেখিয়েছিলেন ডিএসপি।’’ রাজ্যেরই মানুষকে নিরাপত্তা দিতে গিয়ে এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে বিচলিত আয়ুবের সহকর্মীরা। কেন এমনটা ঘটল— চোখের জলেই তার উত্তর খুঁজছেন তাঁরা।