babri masjid

বিনয়ের কথায় রাজনীতির কাপে আবার তুফান

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মামলার রায় সম্পর্কে মুখ খুলে এমন পরস্পর বিরোধী কথায় ফের রাজনীতির কাপে তুফান তুললেন বরাবরের বিতর্কিত বিজেপি নেতা বিনয় কাটিয়ার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২০ ০৪:৪৩
Share:

উত্তরপ্রদেশে বিজেপির সরকার ফেলতে কংগ্রেসের চক্রান্ত বাবরির ঘটনা, মন্তব্য বিনয় কাটিয়ারের

স্ববিরোধে ঠাসা।

Advertisement

কখনও বললেন, সামান্য ধাক্কাতেই পড়ে গিয়েছিল বাবরি মসজিদের জরাজীর্ণ কাঠামো। আবার কখনও তাঁর অভিযোগ, উত্তরপ্রদেশে বিজেপির সরকার ফেলতে এ আসলে ষড়যন্ত্রী কংগ্রেসেরই কীর্তি। এক বার দাবি করছেন, সমাজে শান্তির স্বার্থে আর কোনও মসজিদে ‘হাত দেওয়ার’ প্রশ্ন নেই। আবার পরমুহূর্তেই দাবি, অযোধ্যার পরে এ বার কাশী, মথুরার সাধু-সন্তদের সঙ্গে কথা বলার পালা! বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মামলার রায় সম্পর্কে মুখ খুলে এমন পরস্পর বিরোধী কথায় ফের রাজনীতির কাপে তুফান তুললেন বরাবরের বিতর্কিত বিজেপি নেতা বিনয় কাটিয়ার।

রাজনৈতিক মহলের অবশ্য বক্তব্য, রামমন্দির আন্দোলনের ভরপুর সুফল ঘরে তুললেও, এ বিষয়ে অধিকাংশ শীর্ষ বিজেপি নেতার অবস্থান বরাবরই স্ববিরোধিতায় ঠাসা। এ নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় আগাগোড়া দোলাচলে ভুগেছে কংগ্রেসও। ১৯৮৯ সালে অযোধ্যায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীর শিলান্যাসের অনুমতি দেওয়া থেকে শুরু করে সেই ‘সিদ্ধান্তহীনতার ছাপ’ স্পষ্ট বুধবার রাহুল গাঁধীর মুখে কুলুপ এঁটে থাকা পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার যদিও কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বলের কটাক্ষ, “বাবরি মসজিদের রায়ে ইতিহাস এবং আইন দেখিয়েছে- অভিযুক্ত: (মোগল সম্রাট বাবরের সেনাপতি) মীর বাঁকি। বাকি সকলে: নির্দোষ!”

Advertisement

এই স্ববিরোধিতার প্রসঙ্গ যাঁর কথার সূত্রে দিনভর ঘুরপাক খেয়েছে, গতকালই সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের রায়ে বেকসুর খালাস পেয়েছেন সেই বিনয় কাটিয়ার। তাঁর নামে অভিযোগ, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর মসজিদ ধ্বংসের সময়ে তিনি ঘটনাস্থলের কাছের মঞ্চে উপস্থিত তো ছিলেনই, উপরন্তু প্ররোচনামূলক বক্তৃতায় উৎসাহ জোগাচ্ছিলেন করসেবকদের। এ দিন এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেওয়ার পুরো দায় বিজেপি এবং সঙ্ঘের উপরে চাপিয়ে আসলে তাদের কলঙ্কিত করতে চেয়েছে কংগ্রেস। আরও এক ধাপ এগিয়ে দাবি, উত্তরপ্রদেশে তৎকালীন বিজেপি সরকারকে ফেলতে হয়তো তা ছিল কংগ্রেসেরই চক্রান্ত! অথচ পরক্ষণেই বলেছেন, অত বছরের পুরনো জরাজীর্ণ পরিকাঠামো পড়ে গিয়েছিল সামান্য ধাক্কাতেই।

আরও পড়ুন: ধর্ষণই হয়নি, বলছে পুলিশ​

একই ভাবে, এক বার বলেছেন যে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে তাঁর দল বরাবরই বদ্ধপরিকর। আবার ‘অযোধ্যা তো ঝাঁকি হ্যায়, মথুরা-কাশী বাকি হ্যায়’ স্লোগানের প্রশ্ন তুলতেই একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে তাঁর বক্তব্য, “কাশী, মথুরার সাধু-সন্তদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলতে হবে। দেখতে হবে, তাঁরা কী চান।” আবার কখনও অম্লান বদনে বলেছেন, “মসজিদ ধ্বংস হয়েছে বলেই তো রাস্তা প্রশস্ত হয়েছে মন্দির নির্মাণের।”

আরও পড়ুন: ভয় দেখিয়ে গ্রাম ঘিরল যোগী-প্রশাসন

অনেকে অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন, রামমন্দির নির্মাণের বিষয়ে বিজেপি প্রথম থেকেই আপসহীন। কিন্তু বাবরি মসজিদ ভাঙার দায় নিজেদের কাঁধে নিতে তার অনেক শীর্ষ নেতারই ‘আপত্তি’। ঘটনার আগের দিন, ৫ ডিসেম্বর লখনউয়ের জনসভায় প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে বলেছিলেন, “আদালত করসেবার অনুমতি দিয়েছে। তাই আগামীকাল তা করা তার নির্দেশের অবমাননা নয়, বরং সম্মান প্রদর্শন।… তারা ভজন-কীর্তনও বন্ধ করতে বলেনি। কিন্তু তার জন্য এবড়ো-খেবড়ো পাথুরে জমিতে তো বসা যায় না। তাই আগে জমি সমান করা জরুরি।”

বিজেপি নেতা আডবাণীর বক্তব্য ছিল, “(মন্দির নির্মাণের) সঙ্কল্পপূর্তির জন্য যে কোনও ত্যাগ করতে রাজি। প্রয়োজনে তৈরি (উত্তরপ্রদেশের) সরকার জলাঞ্জলি দিতেও।” ৬ ডিসেম্বর ঘটনাস্থলের অদূরে বাঁধা মঞ্চ থেকে প্রথমে মৃদু আপত্তি করলেও, পরে ‘এক ধাক্কা অউর দো,

বাবরি মসজিদ তোড় দো’র মতো স্লোগান তুলতে দেখা গিয়েছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বিজেপি নেতাদের।

অথচ এই বাজপেয়ীই পরে ঘটনা প্রসঙ্গে এক বার বলেছেন, “সে দিন যা হয়েছিল, তা ঠিক হয়নি।…আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।” আডবাণীর একাধিক বার দাবি, ৬ ডিসেম্বর তাঁর জীবনে সব থেকে দুঃখের দিন। ওই ঘটনা সঙ্ঘের আদর্শের পরিপন্থী। বাজপেয়ী জমানায় সংসদেও বিজেপির তুলনায় অনেক বেশি বুক বাজিয়ে মসজিদ ধ্বংসের দায় কাঁধে নিতে রাজি থাকত

শিবসেনা। কিন্তু সেখানে আডবাণী, বাজপেয়ী-সহ অনেক বিজেপি নেতারই বক্তব্য, সে দিন যে আবহ তৈরি হয়েছিল, তাতে নেতাদের কথায় কান দিতে রাজি ছিলেন না অনেকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল দ্রুত।

বিরোধীদের কটাক্ষ, গত তিন দশকে মসজিদ ধ্বংস এবং রামমন্দির নির্মাণের রাজনীতির সব থেকে বেশি ফায়দা কুড়িয়েছে বিজেপি। কিন্তু প্রথমটির দায় এখনও তাদের অনেক শীর্ষ নেতার কাছে আজও দুয়োরানি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন