পাশে থাকার বিনিময়ে তিস্তায় গতি চায় ঢাকা

পাকিস্তানকে একঘরে করার কুটনৈতিক লড়াইয়ে ভারতের পাশে থাকার বিনিময়ে তিস্তা চুক্তি রূপায়ণে আরও একটু গতি চাইছে ঢাকা। বাংলাদেশ সরকারের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ঘরোয়া রাজনীতিতে ভারতের সঙ্গে তিস্তা জলবণ্টনের বোঝাপড়া চূড়ান্ত করার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এমনকী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুকুটে তিস্তা চুক্তি রূপায়ণ সাফল্যের অন্যতম সেরা পালক হতে পারে।

Advertisement

অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:২৩
Share:

—ফাইল চিত্র।

পাকিস্তানকে একঘরে করার কুটনৈতিক লড়াইয়ে ভারতের পাশে থাকার বিনিময়ে তিস্তা চুক্তি রূপায়ণে আরও একটু গতি চাইছে ঢাকা।

Advertisement

বাংলাদেশ সরকারের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ঘরোয়া রাজনীতিতে ভারতের সঙ্গে তিস্তা জলবণ্টনের বোঝাপড়া চূড়ান্ত করার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এমনকী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুকুটে তিস্তা চুক্তি রূপায়ণ সাফল্যের অন্যতম সেরা পালক হতে পারে। কারণ, তিস্তার বাড়তি জল পেলে উত্তর বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বাৎসরিক দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির অবসান হয়ে জনজীবনই বদলে যাবে। অক্টোবরে গোয়ায় বিমস্টেক সম্মেলনের যোগ দিতে এসে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তাই তিস্তা চুক্তির বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাইছেন শেখ হাসিনা।

দিল্লির কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দু’দিন আগেই নভেম্বরে পাকিস্তানের সার্ক শীর্ষবৈঠক বয়কটের ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকার। বুধবার গভীর রাতে ভারতীয় কম্যান্ডোরা পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংসের পরেও তাকে সমর্থন জানাল ঢাকা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী এ দিন বলেন, ‘‘আক্রান্ত হওয়ার পর প্রত্যাঘাতের অধিকার সকলের রয়েছে। নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করে ভারত কোনও অন্যায় করেনি।’’

Advertisement

শেখ হাসিনার উপদেষ্টা জানান, বিষয়টা এমন নয় যে দিল্লির চাপে সার্ক বয়কটের ঘোষণা করেছে ঢাকা। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তি দেওয়ার বিরুদ্ধে পাকিস্তান যে ভূমিকা নিয়েছে, তার পরে হাসিনা ইসলামাবাদে গেলে দেশের মানুষ প্রশ্ন তুলতে পারতেন। প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রের খবর, সার্কে না-যাওয়ার সিদ্ধান্তটি এক রকম হয়েই ছিল। কিন্তু সার্ক ভেস্তে যাওয়ার দায় কাঁধে চেপে যেতে পারে বিবেচনা করে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এর পরে মঙ্গলবার দিল্লি থেকে হাইকমিশনার সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলি যখনই জানান— নরেন্দ্র মোদী ইসলামাবাদ যাচ্ছেন না, বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকও সার্কের সদর দফতরে সম্মেলন বয়কটের কথা জানিয়ে দেয়।

বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘‘শুধু ভারত তো নয়, বাংলাদেশের জঙ্গিদেরও সরাসরি মদত দেয় পাক গুপ্তচর সংগঠন আইএসআই। ঢাকায় দূতাবাসে বসে পাকিস্তানি কূটনীতিকরা জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে— এ বিষয়ে বার বার ইসলামাবাদকে তথ্য-প্রমাণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার পরেও সেটা চলেছে।’’ তিনি জানান, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক লড়াইয়ে বাংলাদেশ তাই ভারতের পাশেই রয়েছে।

ঢাকার এক শীর্ষ কূটনীতিকের কথায়, তবে যে কোনও সম্পর্কই বিকশিত হয় দেওয়া-নেওয়ার ভিত্তিতে। বাংলাদেশও তাই দিল্লির পাশে দাঁড়ানোর বিনিময়ে তিস্তা চুক্তির দ্রুত রূপায়ণ চায়। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ঢাকা সফরে গিয়ে এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছিলেন। মোদীও বারে বারে জানিয়েছেন, এটা তাঁর বাধ্যবাধকতা, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে সহমত তৈরি করে এই চুক্তি রূপায়ণে তিনি সর্বতো ভাবে চেষ্টা করবেন। এর পরে বেসরকারি ভাবে কিছু কথাবার্তা দু’দেশের মধ্যে হলেও তার গতি খুবই স্লথ।

বিমস্টেক সম্মেলনে যোগ দিতে আগামী মাসে গোয়ায় আসছেন শেখ হাসিনা। ১৬ অক্টোবর সেখানে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর একান্ত বৈঠকের দিনক্ষণ স্থির হয়েছে। হাসিনার দফতর সূত্রের খবর, এই বৈঠকে আঞ্চলিক ও দ্বিপাক্ষিক নানা বিষয়েই তাঁদের কথা হবে। কিন্তু তিস্তা চুক্তির বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে উত্থাপন করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন