প্রতিভা স্মরণ নন্দিনীদের

জন্মশতবর্ষে প্রতিভা বসুকে স্মরণ করলেন বরাকের নন্দিনীরা। তাঁকে কেন্দ্র করেই ছিল পঞ্চদশ কৃষ্ণচূড়া উৎসবের সাহিত্য বাসর। তিনি যে এক স্বতন্ত্র মানবী ছিলেন, তা-ই নানা ভাবে তুলে ধরা হয়। অনেকে আক্ষেপ ব্যক্ত করে জানান, বুদ্ধদেব বসুর স্ত্রী বলেই তাঁর লেখালেখি নিয়ে আজও পূর্ণ মাত্রার আলোচনা হয় না। বুদ্ধদেব চর্চায় চাপা পড়ে যান তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলচর শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৫ ০৪:০২
Share:

কৃষ্ণচূড়া উৎসবের উদ্বোধনে।— নিজস্ব চিত্র।

জন্মশতবর্ষে প্রতিভা বসুকে স্মরণ করলেন বরাকের নন্দিনীরা। তাঁকে কেন্দ্র করেই ছিল পঞ্চদশ কৃষ্ণচূড়া উৎসবের সাহিত্য বাসর। তিনি যে এক স্বতন্ত্র মানবী ছিলেন, তা-ই নানা ভাবে তুলে ধরা হয়। অনেকে আক্ষেপ ব্যক্ত করে জানান, বুদ্ধদেব বসুর স্ত্রী বলেই তাঁর লেখালেখি নিয়ে আজও পূর্ণ মাত্রার আলোচনা হয় না। বুদ্ধদেব চর্চায় চাপা পড়ে যান তিনি।

Advertisement

বরাক নন্দিনী সাহিত্যচর্চা কেন্দ্র প্রতি বছর মে মাসে কৃষ্ণচূড়া উৎসব পালন করে। এ বার তার উদ্বোধন করেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা সুমিতা চক্রবর্তী। তিনিই ছিলেন মুখ্য বক্তা। প্রতিভা বসুর জীবন ও সাহিত্য নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক বিশ্বতোষ চৌধুরী এবং গুরুচরণ কলেজের শিক্ষিকা অনামিকা চক্রবর্তী। প্রতিভা বসুর লেখালেখি পড়ে তাঁকে নারীবাদী বলতে চান না সুমিতা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিভা বসু তাঁর লেখায় প্রভুত্ববাদীর সঙ্কট তুলে ধরেছেন। তবে কোথাও নিজের স্বামী সম্পর্কে কোনও অভিযোগ নেই। বরং তাঁকে বুদ্ধদেব বসু হতে সাহায্য করেছেন।’’ সুমিতাদেবী স্বামী-স্ত্রীর লেখালেখির তুলনা টেনে বলেন, ‘‘প্রতিভা বসুর লেখায় স্বাতন্ত্র্য ছিল। লেখালেখির জগতে বুদ্ধদেবের মত-ই তাঁর মত— তা হতে দেননি। বুদ্ধদেব লিখেছেন শিক্ষাবিদের মত, প্রতিভা বসু ছিলেন বাস্তবের লেখিকা। তিনি লিখতেন নিত্য দিনের কথা। নারী-পুরুষের সম্পর্কের নির্ভরতা নিয়ে যেমন লিখেছেন, তেমনি এর মধ্যে যে কুৎসিত, কদর্য রয়েছে— তাও তুলে ধরেছেন।’’ ‘মহাভারতের মহারণ্যে’ বইয়ের প্রসঙ্গ টেনে সুমিতাদেবী শোনান, প্রতিভাদেবীকে আজও মননপ্রধান লেখিকার স্বীকৃতি দেওয়া হয় না। তাই তাঁর এই বইটি নিয়ে আলোচনা হয়নি। আসলে সেটি নিয়ে গবেষণা হওয়া উচিত। বিশ্বতোষ চৌধুরীর কথায়, ‘‘উনিশ শতকের শেষ পর্ব এবং বিশ শতকের প্রথম পর্বের যে সব নারীব্যক্তিত্ব অবরোধবাসিনী নারীর দুর্গ ভেদ করতে চেয়েছিলেন, প্রতিভা বসু সেই পংক্তিতে পড়েন না। তার কারণ তিনি উদার-মুক্ত পরিবেশে বড় হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর গল্প-উপন্যাসে নারীকে তিনি জিতিয়ে দিয়েছেন বটে, কিন্তু এটিই তাঁর প্রধান লক্ষ্য ছিল না। বরং নারীর স্বাভাবিক জীবনই বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।’’ প্রসঙ্গক্রমে টেনে আনেন ‘জীবনের জলছবি’ নামে তাঁর আত্মজীবনীর কথা। বিশ্বতোষবাবু বলেন, ‘‘উদারনৈতিক ও মুক্ত দৃষ্টিভঙ্গিতে বড় হওয়ায় তাঁর লেখালেখি অন্য মহিলাদের চেয়ে আলাদা। প্রজ্ঞা, মেধা, মনন, সুর, কণ্ঠ— সবই ছিল তাঁর, কিন্তু পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটেনি।’’

অনামিকা চক্রবর্তী ‘সমৃদ্ধ হৃদয়’, ‘মনোলীনা’ প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করে প্রতিভা বসু যে স্বতন্ত্র ছিলেন তা তুলে ধরেন।

Advertisement

সাহিত্যবাসর ছাড়াও কৃষ্ণচূড়া উৎসবে সংস্থার সদস্যারা স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। সন্ধ্যায় হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রয়াত কবি অনুরূপা বিশ্বাসের ডায়েরি ও অন্যান্য লেখালেখি নিয়ে তাঁর পুত্রবধূ অনূপা বিশ্বাসের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘আলোর পিপাসা’। দ্বিতীয় বইটি ‘কুড়িয়ে বাড়িয়ে’। লিখেছেন বরাক নন্দিনীর সভাপতি সুমিত্রা দত্ত। লোকগবেষক অমলেন্দু ভট্টাচার্য এবং বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কাছাড় জেলা সভাপতি তৈমুর রাজা চৌধুরীকে সেই দিন সংবর্ধনা জানানো হয়। বক্তৃতা করেন হাইলাকান্দি এস এস কলেজের শিক্ষিকা মমতাজ বেগম, আইনজীবী অসমঞ্জ বিশ্বাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন