জাপানি তত্ত্ব কানসো কী ভাবে জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে? ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।
জীবনে প্রবল চাপ! সেই চাপের সুরাহা রয়েছে জাপানি ‘কানসো’-র তত্ত্বে। এ এক জাপানি নান্দনিক তত্ত্ব, যা নিত্য যাপনে খুশির হদিস দেয়। ফোন, ই-মেল , কর্পোরেট জগতের কাজের চাপে ধুঁকতে থাকা জীবনে এনে দেয় এক ঝলক টাটকা বাতাস।
তবে খুঁজলে জাপানি ‘কানসো’র সঙ্গে ভারতীয় দর্শনেরও মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এর অর্থই হল সারল্য। জীবনে যা কিছু বাড়তি, সেই সব কিছুকে সরিয়ে বাঁচার কথা বলে এই তত্ত্ব। যা চাহিদার বাড়াবাড়ি, চাওয়া-পাওয়ার হিসাবের ক্লান্তি ভুলিয়ে এক সুন্দর, অনাড়ম্বর জীবনের হদিস দেয়।
একটু ভাবলেই দেখা যাবে, জীবনে অনেক কিছুই বাড়তি। সেই অপ্রয়োজনীয় জিনিস বাদ দিতে পারলেই জীবন ক্রমশ নির্ভার হয়ে উঠতে পারে। বাড়তি জিনিস, ঘরে ঠাসা আসবাব— তা থেকে যেমন মুক্তি মিলতে পারে, তেমনই অতিরিক্ত চাওয়া-পাওয়া থেকেও নিজেকে সরিয়ে আনা যেতে পারে।
এর মূল কথাই হল, আনুষঙ্গিক বিষয় এড়িয়ে মূল বস্তুতে আলোকপাত করা। তা নিয়ে গভীর ভাবে ভাবা। কানসোর উদ্দেশ্য মানসিক বিশৃঙ্খলা বা মানসিক চাপের নেপথ্যের কারণগুলিকে সরিয়ে দেওয়া। জাপানি নন্দনতত্ত্বে খুব গুরুত্বপূর্ণ হল খালি থাকা স্থান। তা যেমন চোখের পক্ষে আরামদায়ক, জীবনকেও নির্ভার করতে সাহায্য করে। তবে কানসো কিন্তু কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলে না, বরং এই জাপানি তত্ত্ব বলে অতিরিক্ত, অপ্রয়োজনীয় সব কিছু ঝেড়ে ফেলে সরল জীবনযাপনের কথা। প্রাচুর্যের বদলে অপরিহার্যতাকে ইঙ্গিত করে এই তত্ত্ব।
কী ভাবে দৈনন্দিন জীবনে এর প্রয়োগ সম্ভব?
· অন্দরসজ্জাতেও এই নীতি প্রয়োগ করা যায়। বাড়িতে অপ্রয়োজনীয় জিনিস যদি সরিয়ে ফেলা যায়, তা হলে ঘর যেমন খালি লাগে, বড় দেখায়, তেমনই চলাফেরায় সুবিধা হয়। চোখের পক্ষেও তা আরামদায়ক আবার জিনিসপত্র গোছানোর বাড়তি ঝক্কিও কমে। ফলে ঘরের সাজ হোক ছিমছাম। বাড়তি জিনিস কমিয়ে ফেলার মতোই জীবনেও বাড়তি ঝক্কি সরানোর চেষ্টা করা দরকার। ঘরে এমন জিনিস রাখুন, যা মনকে প্রশান্ত করে, আনন্দ দেয়।
· একসঙ্গে একগাদা কাজ নয়, বরং কানসোর লক্ষ্য একটি কাজ ভাল ভাবে করা। মাথায় হাজার চাপ থাকলে কোনও কাজই ভাল ভাবে হয় না। তার চেয়ে বরং একটি বিশেষ সময়ে কোনও একটি কাজ মনোযোগ দিয়ে করলে তার ফল ভাল হতে পারে। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ বাছাই জরুরি।
· মোবাইল বা কম্পিউটারে অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশনগুলি বন্ধ করুন। সেই অ্যাপগুলি রাখুন, যা নিয়মিত ব্যবহার করেন। কাজের সময় সমজমাধ্যম এড়িয়ে চলুন।
· কেনাকাটার ক্ষেত্রেও অপ্রয়োজনীয় জিনিস এড়িয়ে চলুন। এমন অনেক কিছু কেনা হয়, যা অপরিহার্য নয়। সেই সব জিনিস যত ঘর-বোঝাই হয়, ততই সেগুলি তোলা, গোছানোর ঝামেলাও বাড়তে থাকে। পোশাকের ক্ষেত্রেও বেশি কেনার বদলে গুণগত মানের প্রতি নজর দেওয়া যায়।
· জীবনের চাহিদাটুকু কমলেও বৈভব, অর্থ, অতিরিক্ত সঞ্চয়ের জন্য বা চাওয়া-পাওয়ার চাপটুকুও কমে যায়। যা আসলে জীবনকে সরল করে তোলে। মানসিক অশান্তিও কমে এতে।