বর্ষায় আগ্রাসী বরাক, নদীর পারে আতঙ্ক

বরাক নদী গিলে খেয়েছে গোটা গ্রাম। শিমুলতলার খেলার মাঠ, ধান খেত, গোচারণ ভুমি—সব নিশ্চিহ্ন। এবার চোখ পড়েছে সোনাবাড়িঘাট পানীয় জল প্রকল্প-সহ আরও বেশ কয়েকটা ভবনের উপর। ৬৪৫ নং তছদ্দর আলি নিম্ন প্রাথমিক স্কুলের অর্ধেক আগেই চলে গিয়েছে বরাকের পেটে।

Advertisement

পাপলু দাস

শিলচর শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৬ ০৩:২২
Share:

ভাঙনের গ্রাসে বাড়ি। সোনাবাড়িঘাট।— নিজস্ব চিত্র

বরাক নদী গিলে খেয়েছে গোটা গ্রাম। শিমুলতলার খেলার মাঠ, ধান খেত, গোচারণ ভুমি—সব নিশ্চিহ্ন। এবার চোখ পড়েছে সোনাবাড়িঘাট পানীয় জল প্রকল্প-সহ আরও বেশ কয়েকটা ভবনের উপর। ৬৪৫ নং তছদ্দর আলি নিম্ন প্রাথমিক স্কুলের অর্ধেক আগেই চলে গিয়েছে বরাকের পেটে। কবে টেনে নেয় বাকিটাও, তারই অপেক্ষা। জল ছুঁইছুঁই শিলচর সোনাই রোডও।

Advertisement

মোট কথায়, নদীভাঙনে ত্রস্ত গোটা সোনাবাড়িঘাট অঞ্চল। প্রায় পনেরো বছর ধরে চলছে নদীর এই আগ্রাসন। নদী ছিলো দেড় কিলোমিটার উত্তরে। কয়েক বছর আগেও শিমুলতলা মাঠে ফুটবল, ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হত। পাশেই ছিল চাষের জমি। মণ মণ ধান ঘরে তুলেছেন ফয়জুল হক লস্কর, কামালউদ্দিন লস্কর, কাজু মজুমদার, বাবলু মজুমদার, বক্তারউদ্দিন মজুমদাররা।

বরাকের ভাঙনে প্রথমে যায় ধানের জমি, খেলার মাঠ, বাড়ি-ঘর। এ ভাবে বরাকে তলিয়ে গিয়েছে দেড়শটি পরিবারের যাবতীয় সহায়-সম্বল। বাপ-ঠাকুরর্দার জমি হারিয়ে তারা গ্রাম ছেড়েই চলে গিয়েছেন। এখন, একই অবস্থায় আতঙ্কের প্রহর গুনছে আরও ২০ পরিবার। অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে একমাত্র পানীয় জল প্রকল্পটিও। কয়েক হাজার পরিবার এই প্রকল্প থেকে উপকৃত হচ্ছেন। সেটি নদীর গর্ভে চলে গেলে কী হবে, ভেবেই পাচ্ছেন না গ্রামের মানুষ।

Advertisement

তাঁদের উদ্বেগ এলাকার একমাত্র পাঠশালাটিকে ঘিরেও। প্রধানশিক্ষক কুতুবউদ্দিন লস্কর জানিয়েছেন, স্কুলে পড়াশোনা করে দুশোরও বেশি শিশু। শিক্ষক সাতজন। হাফ-ইয়ারলি পরীক্ষা চলছে। আর ঠিক সেই সময়েই, গত দু’দিন ধরে ভাঙন তীব্র হয়েছে। এই অবস্থায় কখন কী অঘটন ঘটে যায়, দুশ্চিন্তায় সবাই। তাই স্কুলটিকে আপাতত অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রধানশিক্ষক সে কাজে বিশেষ সহায়তার জন্য এলাকার বিধায়ক আমিনুল হক লস্করকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘বিধায়ক নিজে আপাতত অন্য কোথাও, ভাড়াঘরে স্কুল স্থানান্তরের কথা বলেন। ঘরভাড়া এবং স্থানান্তরের খরচের দায়িত্বও তিনিই নিয়েছেন।’’

এলাকার বাসিন্দা সইদুল হক ও ফয়জুল হক লস্করের কথায়, ‘‘দক্ষিণ দিকে বরাক যে ভাবে ছুটে আসছে, তাতে আগামী এক বছরে সোনাইমুখী সড়কটি না বরাকের পেটে চলে যায়! তাহলে বাইরের সঙ্গে যোগাযোগই আমাদের ছিন্ন হয়ে যাবে। প্লাবিত হবে গোটা অঞ্চল।’’ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বিভাগের কাছে বার বার অনুরোধ করেও কোনও সাড়া মেলেনি। শুধুই কয়েক বস্তা মাটি আর গাছের কয়েকটি টুকরো পুঁতে দিয়েছিল তারা। কবেই সেগুলি খড়কুটোর মতো ভেসে গিয়েছে।

বিধায়ক আমিনুল হক লস্কর বলেন, ‘‘গত পনেরো বছরে কোনও কাজ হয়নি বলেই এই সমস্যা জটিল হয়েছে। সরকার সময় মতো সঠিক পদক্ষেপ নিলে আজ এই পরিস্থিতি হতো না।’’ তিনি জানান, ৯ কোটি টাকার বরাদ্দ রয়েছে এই অঞ্চলের নদীভাঙন ঠেকানোর জন্য। শীঘ্র সে কাজ শুরু হবে বলে আশ্বস্তও করেছেন আমিনুল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন