National News

কভার ফায়ারের সুযোগ নিয়েই ঢুকেছিল ব্যাট, জবাব দেবই: বলল দিল্লি

হামলা পরিকল্পিত ভাবেই হয়েছে। ভারতীয় বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি ঘটানোই এক মাত্র লক্ষ্য ছিল। যৌথ ভাবে হামলার নকশা তৈরি করেছিল পাক সেনা এবং বর্ডার অ্যাকশন টিম (ব্যাট)। পুঞ্চের কৃষ্ণা ঘাটি সেক্টরে হামলার পরের দিন এই তথ্যই সামনে আনল ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ মে ২০১৭ ২০:৩৯
Share:

বর্বর পাক হামলার পরের দিন পুঞ্চে ভারতের সামরিক তৎপরতা। ছবি: পিটিআই।

হামলা পরিকল্পিত ভাবেই হয়েছে। ভারতীয় বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি ঘটানোই এক মাত্র লক্ষ্য ছিল। যৌথ ভাবে হামলার নকশা তৈরি করেছিল পাক সেনা এবং বর্ডার অ্যাকশন টিম (ব্যাট)। পুঞ্চের কৃষ্ণা ঘাটি সেক্টরে হামলার পরের দিন এই তথ্যই সামনে আনল ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। মঙ্গলবার বিএসএফ-এর তরফে জানানো হয়েছে, পাক সেনার কভার ফায়ারের সুযোগ নিয়ে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে প্রায় ২৫০ মিটার ভিতরে ঢুকে এসেছিল ব্যাট। ভারতের টহলদারি দলকে সামনে পেয়েই তারা হামলা চলায় এবং এক সেনাকর্মী এবং বিএসএফ কর্মীর মাথা কেটে নিয়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ফিরে যায়।

Advertisement

মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন বিএসএফ-এর ওয়েস্টার্ন কম্যান্ডের এডিজি কেএন চৌবে। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘পাকিস্তানের দিক থেকে গোলাগুলির সুযোগ নিয়ে ব্যাট আমাদের জওয়ানদের উপর হামলা চালিয়েছে এবং তাঁদের দেহ ক্ষতবিক্ষত করেছে।’’ বিএসএফ সূত্রের খবর, নিয়ন্ত্রণ রেখা সংলগ্ন অঞ্চলে পাকিস্তান ল্যান্ডমাইন বসাচ্ছে বলে গোপন সূত্রে খবর মিলেছিল। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে টহলদারি দল পাঠানো হয়েছিল। সেই দলটি যখন কৃষ্ণা ঘাটি সেক্টরের দু’টি সীমান্ত চৌকির মধ্যবর্তী এলাকায় টহল দিচ্ছিল, তখনই পাক অধিকৃত কাশ্মীরের দিক থেকে হামলা শুরু হয়। একাধিক সীমান্ত চৌকি লক্ষ্য করে রকেট এবং মর্টার হানা চালাচ্ছিল পাকিস্তান, জানিয়েছে বিএসএফ। দুই চৌকির মধ্যবর্তী অঞ্চলে থাকা টহলদারি দলকে লক্ষ্য করেও গুলিবৃষ্টি শুরু হয়েছিল।

শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা ভারতীয় বাহিনীর। ছবি: এএফপি।

Advertisement

ভারতীয় সীমান্ত চৌকিগুলি এর পর পাকিস্তানকে পাল্টা জবাব দিতে শুরু করে। আর নিয়ন্ত্রণরেখার খুব কাছে অবস্থানরত ব্যাট সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকার বেশ কিছুটা ভিতরে ঢুকে পড়ে। ব্যাটকে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরতে সাহায্য করার জন্যই পাক অধিকৃত কাশ্মীরের দিক থেকে গোলাবর্ষণ শুরু হয়েছিল বলে বিএসএফ-এর দাবি।

বিএসএফ কর্তারা আরও জানিয়েছেন, নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে এসে প্রথমে লুকিয়ে ছিল ব্যাট বাহিনী। গোলাগুলিতে ভারতের টহলদার বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার পরই তারা আত্মপ্রকাশ করে। বিএসএফ-এর ২০০ ব্যাটালিয়নের হেড কনস্টেবল প্রেম সাগর এবং ভারতীয় সেনার ২২ শিখ রেজিমেন্টের নাইব সুবেদার পরমজিৎ সিংহের দেহ তারা ক্ষতবিক্ষত করে। দু’জনেরই মাথা কেটে নিয়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ফিরে যায়।

পাকিস্তানের সেনা, রেঞ্জার্স এবং ব্যাট সুপরিকল্পিত ভাবেই এই হামলা চালিয়েছে বলে বিএসএফ কর্তারা জোর দিয়ে বলছেন। প্রথমে ব্যাট বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছাকাছি পাঠানো, তার পর ভারতীয় চৌকি লক্ষ করে ভারী গোলাবর্ষণ এবং সেই সুযোগ নিয়ে ব্যাটের অনুপ্রবেশ, শেষে গুলিতে নিহত সেনাদের মুণ্ডচ্ছেদ করে ফিরে যাওয়া— নকশা আগে থেকেই তৈরি ছিল বলে বিএসএফ মনে করছে।

আরও পড়ুন: কাশ্মীর সমস্যায় মধ্যস্থতা করতে চান এরদোগান, প্রস্তাবে না দিল্লির

ভারতীয় সেনাও কিন্তু বিএসএফ-এর মতকেই সমর্থন করছে। নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে এসে ব্যাট যাতে হিংসাত্মক কার্যকলাপ চালাতে পারে, তার জন্যই পাকিস্তানের দিক থেকে কভার ফায়ার দেওয়া হচ্ছিল বলে সেনাও মনে করছে। ভারতীয় সেনার ডিজিএমও লেফ্টেন্যান্ট জেনারেল এ কে ভট্ট মঙ্গলবার পাকিস্তানের ডিজিএমও-র সঙ্গে হটলাইনে কথা বলেছেন। পাকিস্তানের এই বর্বর হামলার তিনি তীব্র নিন্দা করেছেন। ভট্ট পাক ডিজিএমও-কে বলেছেন, ‘‘এই রকম কাপুরুষোচিত, অমানবিক কাজ সভ্যতার সমস্ত রীতিনীতির বাইরে এবং এর দ্ব্যর্থহীন নিন্দা ও জবাব দেওয়া জরুরি।’’

পাকিস্তান যথারীতি মঙ্গলবারও হামলার কথা অস্বীকার করেছে। পাক সেনা, রেঞ্জার্স বা ব্যাট নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করে কোনও হামলা চালায়নি বলে পাকিস্তানের তরফে এ দিনও দাবি করা হয়েছে। এই হামলার ‘উপযুক্ত জবাব’ দেওয়া হবে বলে ভারত সোমবারই জানিয়েছিল। সেনা সূত্রের খবর, মঙ্গলবার ভারতীয় সেনার ডিজিএমও নিজেই পাক ডিজিএমও-কে জানিয়েছেন, এই হামলার জবাব ভারত দেবে। পাকিস্তান তাতে যথেষ্টই বিচলিত। কোনও ‘হঠকারী’ পদক্ষেপ করলে ভারত ভুল করবে, প্রতিক্রিয়া ইসলামাবাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন