গুয়াহাটিতে দলাই লামাকে অভ্যর্থনা অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের। ছবি: রাজীবাক্ষ রক্ষিত।
“এক বাঙালি আমাদের বৌদ্ধ ধর্ম শেখালেন। ভারত জোটাল ছয় দশকের খাওয়া-পরা। এর পরেও কি নিজেকে ভারতের সন্তান বলব না?” গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়, এলবিএস ও কৃষ্ণকান্ত সন্দিকৈ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে হওয়া আলোচনাচক্রে অংশ নিয়ে এই মন্তব্য করলেন বৌদ্ধ ধর্মগুরু দলাই লামা। গত কালই তিনি বলেছেন, তাঁর সফর নিয়ে চিনা হুমকি অনর্থক ও সাধারণ ব্যাপার। তিব্বত থেকে পালিয়ে ভারতে আসার পরে লেখা প্রথম আত্মজীবনীর অসমিয়া অনুবাদ ‘মোর দেশ, মোর মানুহ’-র প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ দিন তিনি বলেন, “চিনা সাংবাদিকদেরও বলেছি ভারত আমায় আশ্রয় দিয়েছে। ৫৮ বছর ধরে এখানকার চাল, ডাল, রুটি খাচ্ছি। নালন্দার শিক্ষাই আমাদের আদর্শ। অধুনা বাংলাদেশের মানুষ শান্ত রক্ষিত প্রথম তিব্বতে গিয়ে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার করেন। আমার মগজে ভরা ভারতীয় নালন্দা দর্শন। এর পরেও নিজেকে ভারতীয় ভাবতে বাধা কোথায়? আমি গর্বিত ভারতীয়। ভারত আমদের যে সাহায্য করে চলেছে, তার ঋণ শোধ করতেই গোটা বিশ্বে আমি ভারতীয় দর্শন ও ঐতিহ্যের দূত হয়ে যাই।” তাঁর মতে, ভারত ও তিব্বতের সম্পর্ক সেই অতীশ দীপঙ্করের সময় থেকেই গুরু ও শিষ্যের। এ দিন ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে ইয়ারলুং সাংপোর উপাসনা করে তিনি বলেন, “ভুলবেন না, এই মহান নদী আমাদের দেশ, তিব্বত থেকে আসছে।”
এ দিন দু’টি অনুষ্ঠানে অংশ নেন নোবেলজয়ী ধর্মগুরু। এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনার বিষয় ছিল ‘আধুনিক যুগে প্রাচীন ভারতীয় দর্শনের গুরুত্ব’। দলাই লামা বলেন, “পশ্চিম আজ যে আধ্যাত্মবাদ শিখতে চাইছে, ভারত তা সহস্রাধিক বছর ধরে পালন করে আসছে। কিন্তু বর্তমান ভারতে বর্ণভেদ, জাতিভেদ, ধর্মভেদ ও ধনী-গরিব বিভাজন এত বেশি যে তা সমাজকে পিছনে টানছে। শিক্ষা ও সচেতনতা দিয়ে সেই মানসিকতা থেকে মুক্ত হতে হবে। এখনও বিশ্বের অস্থির সময়ে ভারতের দর্শনই পারে পথ দেখাতে।”
গুয়াহাটির বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দলাই লামার। বর্তমানে চিনের দখলে থাকা তিব্বতের সঙ্গে আসলে ভারতের সম্পর্ক সুপ্রাচীন— অনেকটা এমনই বলেছেন দলাই লামা। ছবি: পিটিআই।
তাঁর মতে, “মানুষ নিজের তৈরি সমস্যার নিজে সমাধান না করলে বুদ্ধ, যিশু, গাঁধী একসঙ্গে এলেও সমাজ বদল করতে পারবেন না। তিব্বতিরাও কত পুজো করেছিল, কিন্তু স্বভূমি রাখতে পারেনি। আল্লা ও খ্রিস্টের উপাসনা করেও হিংসা থামছে না। সব ধর্মে এত শাখা যে ভগবানও ঘাবড়ে যাচ্ছেন, তিনি কোন পক্ষকে বেশি আশীর্বাদ করবেন। ধর্ম নয়, এখন যুক্তি ও বোধের আশ্রয় নেওয়ার সময় এসেছে। মনে রাখতে হবে, ভারত বা চিন কেউ একা উন্নতি করতে পারবে না। সব দেশ আজ অন্যান্য দেশ তথা গোটা বিশ্বের উপরে নির্ভরশীল।” প্রলোভন দেখিয়ে ধর্মান্তরণেরও বিরোধিতা করেন দলাই লামা। বলেন, আমি নিজে কখনও বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার করি না। মানুষই বেছে নেবেন তাঁর ধর্ম। ধর্ম এক ব্যক্তি স্বাধীনতা।
আরও পড়ুন: ভারতে তাঁর প্রথম দেহরক্ষীকে দেখে আবেগাপ্লুত দলাই লামা
অনুষ্ঠানের শেষে মেয়েরা প্রশ্ন ছোঁড়েন, এই বয়সেও এমন চকচকে ত্বকের রহস্য কী?
সহাস্য জবাব, “আপনারাও তো আপনাদের রূপের রহস্য ফাঁস করেন না। এটা আমার সিক্রেট।” তার পর বলেন, “মনের শান্তিই আসল কথা। রাগ, পরশ্রীকাতরতা থেকে দূরে থাকুন, দেহ সুস্থ থাকবে। রূপও খুলবে।”