জমি বিবাদের জেরে মারপিটের ঘটনায় মণিপুরের জিরিবামে বঙ্গভাষীরা ১০ দিন ধরে প্রায় গৃহবন্দি। প্রতিবাদে মুখর হয়েছে অসমের কাছাড় জেলা। চলছে সভাসমিতি।
বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন মণিপুর ও অসমের মুখ্যমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে অনুরোধ জানিয়েছে। সোনাইয়ে বিভিন্ন সংগঠন জোটবদ্ধ হয়ে সড়ক অবরোধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। আজ শিলচরের বিশিষ্ট নাগরিকরা এক সভায় মিলিত হয়ে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। তাঁরা উভয় জনগোষ্ঠীর সম্প্রীতির উপর গুরুত্ব দেন। করিমগঞ্জের সাংসদ রাধেশ্যাম বিশ্বাস এ নিয়ে সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে দেখা করবেন। তিনি জিরিবামের ঘটনায় কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চাইবেন বলে জানিয়েছেন।
৭ এপ্রিল জিরিবামে জমি বিবাদে মারপিটের ঘটনা ঘটে। চার মণিপুরি যুবক জিরিবামের বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় গিয়ে প্রহৃত হন। পর দিনই শুরু হয় বাঙালি নিগ্রহের ঘটনা। লালপানি থেকে যাত্রী নিয়ে দিবং গেলে অটোচালক-সহ যাত্রীদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় সীমানাঘেঁষা কাছাড়ে। চাপে পড়ে মণিপুরি যুবকরা গত বৃহস্পতিবার সাত দিনের জন্য অবরোধ তুলে নেয়। এই সময়ের মধ্যে মারপিটের ঘটনায় জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করা না হলে ফের বাঙালিদের অবরুদ্ধ করে রাখার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
এ দিকে, ৮ এপ্রিল জামালউদ্দিন জমিবিবাদের কথা জানিয়ে থানায় এজাহার দিতে গেলে জিরিবাম পুলিশ তাঁকে আটকে রাখে বলে অভিযোগ। ১০ দিন ধরে তাঁকে আদালতেও তোলা হচ্ছে না, ছাড়াও হচ্ছে না। ফলে ৭ দিনের জন্য অবরোধ তোলা হলেও ভয়ে বাঙালিরা ঘর থেকে বেরতে পারছেন না।
এতে ক্ষুব্ধ কাছাড় জেলার বিভিন্ন সংস্থা-সংগঠন। বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সমিতি মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী ওক্রাম ইবোবি সিংহের ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ দাবি করেছে। পাশাপাশি অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈকেও মণিপুর সরকারের সঙ্গে কথা বলার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। ইবোবি সিংহের উদ্দেশে লেখা স্মারকপত্রে বাঙালি ও মণিপুরি জাতির দীর্ঘকালের সুসম্পর্ক ও নিবিড় যোগাযোগের কথা উল্লেখ করে বরাক বঙ্গ। কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল যুবকের জন্য ওই সম্প্রীতি যে হুমকির মুখে, তাতে তাঁরা আক্ষেপ ব্যক্ত করেন।
একই সুরে এ দিন ক্ষোভ ব্যক্ত করেন শিলচর শহরের একদল সচেতন নাগরিক। হরিদাস দত্ত, দীপক সেনগুপ্ত, নীহাররঞ্জন পাল, সুভাষ বর্মন, কল্যাণ পালরা বলেন, ‘‘এ এক গভীর ষড়যন্ত্র। বাঙালিকে নানা দিক থেকে খণ্ডিত করার চেষ্টা চলছে।’’ এই প্রয়াস তাঁরা রুখবেন বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। তাঁরা বলেন, ‘‘সবাইকে ডেকে এ নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’’ বরাক উপত্যকার মণিপুরি বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গেও তাঁরা কথা বলবেন বলে জানান। আলোচনায় অংশ নেন প্রসেনজিৎ ঘোষ, মুকেশ বাগারিয়াও।
কাছাড় জেলার সোনাইয়ে অনুরূপ সভা হয় গত মঙ্গলবার। সোশ্যাল ইউনাইটেড নেটওয়ার্ক, তরুণ সঙ্ঘ, ইউটোপিয়া, ইউডিএসএফ সংগঠনের কর্মকর্তারা একজোট হয়ে বাঙালি নির্যাতনের প্রতিবাদ জানান। জিরিবামের বাঙালিদের স্বাভাবিক জনজীবনে বাধা দেওয়া হলে মণিপুরগামী সড়কে অবরোধ গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা। পরে সভা থেকে মিছিল করে মণিপুর সরকারের নীরবতার প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রী ইবোবি সিংহ ও জিরিবামের বিধায়ক দেবেন্দ্র সিংহের কুশপুতুল পোড়ানো হয়।