রবীন্দ্রনাথকে ভুলতে বসেছে বাঙালি, উদ্বেগ

যাঁর হাত ধরে বাংলা সাহিত্যের বিশ্ব পরিচয় ঘটেছিল সেই রবীন্দ্রনাথকেই ভুলতে বসেছেন বাঙালি। রবীন্দ্র পক্ষে এমন আক্ষেপের কথা শোনা গেল বরাকের বিশিষ্ঠ নাগরিকদের গলায়। একই সঙ্গে রয়েছে তাঁদের আশঙ্কাও, আগামী প্রজন্মের বাঙালি কী রবীন্দ্রনাথকে ভুলে যাবে! রবীন্দ্রনাথকে হারানোর ভয় রীতিমতো তাড়া করছে প্রধান আলোচক তথা লেখক-সমালোচক শিবতপন বসুকে।

Advertisement

অমিত দাশ

হাইলাকান্দি শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৫ ০৩:৩৭
Share:

যাঁর হাত ধরে বাংলা সাহিত্যের বিশ্ব পরিচয় ঘটেছিল সেই রবীন্দ্রনাথকেই ভুলতে বসেছেন বাঙালি। রবীন্দ্র পক্ষে এমন আক্ষেপের কথা শোনা গেল বরাকের বিশিষ্ঠ নাগরিকদের গলায়। একই সঙ্গে রয়েছে তাঁদের আশঙ্কাও, আগামী প্রজন্মের বাঙালি কী রবীন্দ্রনাথকে ভুলে যাবে!

Advertisement

রবীন্দ্রনাথকে হারানোর ভয় রীতিমতো তাড়া করছে প্রধান আলোচক তথা লেখক-সমালোচক শিবতপন বসুকে। তাঁর কথায়: যুব সমাজের একটা বড় অংশই কবিগুরুকে ভুলতে বসেছে। দেশ-বিদেশের সঙ্গে অসমের বাংলাভাষী এই এলাকাতেও গত কাল, রবীন্দ্র জন্মদিবস সাড়ম্বরে পালিত হয়েছে। হাইলাকান্দি জেলায় যৌথভাবে কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান পালন করে বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন এবং রবীন্দ্র ভবন কর্তৃপক্ষ। এতে অন্যান্য কার্যসূচির মধ্যে ছিল রবীন্দ্র আলোচনা। মুক্ত মনের এই আলোচনায় বিভিন্ন বক্তার কণ্ঠে শোনা যায় রবীন্দ্রনাথ থেকে বিচ্যুতির আশঙ্কার কথা। শিবতপনবাবু তীব্র দুশ্চিন্তা ব্যক্ত করে জানান, এক ব্যাক্তিগত সমীক্ষায় তিনি দেখেছেন প্রায় সত্তর শতাংশ তরুণ-তরুণীই রবীন্দ্রনাথ থেকে ক্রমশই দূরে সরে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘এই তরুণ-তরুণীরা বিশ্বকবিকে জানতে মোটেই আগ্রহী নন। তাঁরা ইন্টারনেট আর কম্পিউটারই তাঁদের জীবনের সব।’’

যুব মানসের এই মনোভাবকে গভীর উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ থেকে ধীরে ধীরে যুব সমাজের দূরে চলে যাওয়ার জন্য শিবতপনবাবু আজকের দিনের বাঙালি অভিভাবকদেরই বেশি করে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘রবীন্দ্র সাহিত্য তথা রবীন্দ্র ভাবধারাকে যথাযথ ভাবে তুলে না ধরার জন্যই এমনটা হচ্ছে। দেশ, জাতি, সমাজ, সংসার আর বাংলা ভাষার স্বার্থে রবীন্দ্রনাথকে আমাদের জীবনসঙ্গী করতেই হবে। উনি বাঙালির সব থেকে বড় আশ্রয়।’’ অসমে বাঙালিদের এই ‘বিপন্ন’ সময়ে একমাত্র রবীন্দ্রনাথই বাঙালির সমস্ত আন্দোলনের প্রেরণা হতে পারেন বলে তিনি মনে করেন। শিবতপনবাবুর মতে, যান্ত্রিক জীবনে, যেখানে রবীন্দ্রনাথ নেই, সেখানে কল্পনা নেই। আর যেখানে কল্পনা নেই, সেখানে বিজ্ঞান চিন্তাও থাকতে পারে না। আলোচনায় অংশ নিয়ে হাইলাকান্দি এস এস কলেজের শিক্ষিকা, মমতাজ বেগম বড়ভুইয়া বলেন, ‘‘আজকের দিনে তরুণ-তরুণীদের কাছে রবীন্দ্রনাথকে পৌঁছে দেওয়া একান্ত দরকার। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন নারী স্বাধীনতার বার্তাবাহক। তিনি নারীকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।’’ এখন চার দিকে যখন নারী নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে তখন তার মোকাবিলায় রবি ঠাকুরই হতে পারেন বাঙালি সমাজের হাতিয়ার। আলোচনায় অংশ নিয়ে রবীন্দ্রনাথকে আরও কাছে টানার ডাক দেন পিণাকপাণি ভট্টাচার্য, সুশান্ত মোহন চট্টোপাধ্যায়, হরনাথ চক্রবর্তী, অনিন্দ্য কুমার নাথ, প্রীতিকণা পাল প্রমুখ।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন