সাইবার জালিয়াতদের নজরে এ বার অ্যামাজনের ক্রেতারা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আন্তর্জাতিক অনলাইন বিপণি অ্যামাজনের ভুয়ো সাইট তৈরি করে দেশ জুড়ে প্রতারণার জাল ছড়াল সাইবার জালিয়াতরা। রবিবার সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে স্মার্ট ফোন ব্যবহারকারীদের কাছে একটি হোয়াটস্ অ্যাপ মেসেজ আসতে শুরু করে। মেসেজে লেখা—‘ভাই শুন, জলদি সে অর্ডার কর... অ্যামাজন পর সব কুছ ৯৯ পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট পর মিল রহা হ্যায়।’ এই লেখার সঙ্গে ‘অ্যামাজন বিগেস্ট সেল লাইভ’ নামে একটি ওয়েবসাইটের লিঙ্ক দেওয়াও হচ্ছে।
সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই সেই লিঙ্কে ক্লিক করেছেন। খুলে গিয়েছে অ্যামাজন ওয়েবসাইটের মতো দেখতে একটি পাতা। আর সেই পেজ-এ চোখ রেখে চমকে গিয়েছেন সবাই। অবিশ্বাস্য কম দামে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন জিনিস। ক্যাননের একটি এসএলআর ক্যামেরা যার বাজারদর অন্তত ৬৯ হাজার টাকা, তা ওই সাইটে বিকোচ্ছে মাত্র ১৯৯ টাকায়! ঠিক একই রকম ভাবে পাওয়া যাচ্ছে এলজি-র ৩২ ইঞ্চি এলইডি টিভি মাত্র ১০৯৯ টাকায়!
অবিশ্বাস্য কম দামে জিনিস পত্র দেখে ইতিমধ্যেই দেশ জুড়ে কয়েক হাজার মানুষ সেই সাইটে ঢুকে জিনিসপত্র কেনার জন্য অনলাইনে টাকাও দিয়ে দিয়েছেন। আর সেখান থেকেই ছড়াচ্ছে এই লিঙ্ক। কারণ ওই সাইটের গঠন এমন ভাবে করা হয়েছে, যাতে কেউ কোনও কিছু করার চেষ্টা করলেই তাঁকে দশ দফায় অন্তত পঞ্চাশ জনকে লিঙ্ক ফরোয়ার্ড করতে হবে অর্থাৎ আরও অনেক মানুষকে প্রতারণা শিকার বানানোর কৌশল।
আরও পড়ুন: আপ নেত্রী, বিশিষ্ট ব্যাঙ্কার মীরা সান্যাল প্রয়াত
ত্রিপুরার বাসিন্দা সুপ্রতিম বিশ্বাস। পেশায় উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী। তিনিও প্রতারণার শিকার। শনিবার তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে দেখেই মনে হয়েছিল গোটা বিষয়টা ভুয়ো। কিন্তু তারপরেও লোভ সামলাতে পারলাম না। ভাবলাম মাত্র ২০০ টাকার ব্যপার। আমি একটি ফোন বুক করেছিলাম। পরে জানলাম গোটাটাই জালিয়াতি।”
(আজকের তারিখে গুরুত্বপূর্ণ কী কী ঘটেছিল অতীতে, তারই কয়েক ঝলক দেখতে ক্লিক করুন— ফিরে দেখা এই দিন।)
ঠিক এ রকম ভাবেই প্রতারিত হয়েছেন গুয়াহাটির প্রবীন বরদলই বাকলকাতার অয়ন চক্রবর্তী, খোকন শিকদার। সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা এক ধরনের ফিশিং। অর্থাৎ আসল সাইটের অনুকরণে তৈরি একটি সাইট। সেখানে একজন গ্রাহক যখন অনলাইনে টাকা দিচ্ছেন, সেই টাকা অ্যামাজনের বদলে পৌঁছে যাচ্ছে জালিয়াতদের কাছে। ওই লিঙ্ক খুললেই দেখা যাচ্ছে লাইভ সেল এবং সেই অবিশ্বাস্য কম দামে বিক্রির মেয়াদ ২০ মিনিট বা আধ ঘণ্টা দেখানো হচ্ছে। তাই বিচার বিবেচনা না করেই অনেকে অনলাইন পেমেন্ট করে দিচ্ছেন। গুগল ইতিমধ্যেই সাইটটিকে ভুয়ো হিসাবে চিহ্নিত করেছে। তবে এখনও লিঙ্ক থেকে সাইটটি খোলা যাচ্ছে, যদিও গুগলের সতর্কবার্তা-সমেত।
আরও পড়ুন: বিজেপির রক্তচাপ বাড়িয়ে জোট ঘোষণা মায়াবতী, অখিলেশের
শুক্রবারই অ্যামাজন ঘোষণা করেছিল যে, তারা ভারতের বাজারে অনেক জিনিসে তারা প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেবে। সেই ছাড় নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে বিজ্ঞাপনী প্রচারও চালাচ্ছে তারা। সাইবার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সেই প্রচারকে কাজে লাগিয়েই রাতারাতি তৈরি করা হয়েছে এই জাল সাইট। পুরো বিষয়টি জানানো হয়েছে হোয়াটস্অ্যাপের ভারতীয় কার্যালয়কেও। তবে, এখনও অ্যামাজন কর্তৃপক্ষের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
(দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরাবাংলা খবরপেতে পড়ুন আমাদেরদেশবিভাগ।)