চন্দন মিশ্রের খুনের নেপথ্যে শেরু সিংহ? আর কে? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
গ্যাংস্টার চন্দন মিশ্রকে পটনার হাসপাতালে ভর্তি করানোই ছিল ফাঁদ! একসময়ের বন্ধু শেরু সিংহই চন্দন খুনে অন্যতম চক্রী। শুধু তা-ই নয়, তলে তলে চন্দনের এক সহযোগীর মাধ্যমে খুনের ছক কষেছিলেন পুরুলিয়ার জেলে বন্দি থাকা গ্যাংস্টার শেরু। বিহারের পটনার আইসিইউয়ে গুলিকাণ্ডে এমনই তথ্য পেল পুলিশ।
শেরু এবং চন্দন মিলিত ভাবে বক্সারে নানা দুষ্কর্ম করেছেন। তার পর নানা কারণে দুই বন্ধুর শত্রুতা শুরু হয়। হালে গ্যাংস্টার শেরুর ঠিকানা হয় পুরুলিয়ার জেল। চন্দন ছিলেন বিহারের বেউর জেলে। তবে দুই বন্দি দুই রাজ্যের জেলে থেকেও একে অপরের খবরাখবর রাখতেন। পুলিশ সূত্রে খবর, ‘দুশমনের’ গতিবিধি ও কার্যকলাপের উপর নজরদারি করতে শেরু কাজে লাগিয়েছিলেন চন্দনেরই এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে। খুনের ষড়যন্ত্রেও রয়েছেন সেই সহযোগী। খুনের তদন্তে নেমে ওই সহযোগীকেই ‘মিসিং লিঙ্ক’ বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশের ধারণা, বেউর জেলে চন্দন যখন বন্দি, তখনই তাঁর এক সহযোগীকে নিজের দলে টানেন শেরু। চন্দন ১৫ দিনের জন্য প্যারোলে ছাড়া পাচ্ছেন, এই খবর পেয়েই ঝটপট খুনের নীল নকশা তৈরি করে ফেলেন শেরু। বিহার পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) জানতে পেরেছে, প্যারোল মঞ্জুর হওয়ার পর চন্দন তাঁর এক বিশ্বস্ত সহযোগীর কাছে চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ নেন। তার পরেই পটনার নেহরুপাথ এলাকায় পারস হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু চন্দনকে ওই হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর পরামর্শের নেপথ্যেও শেরুর ষড়যন্ত্র ছিল। এবং খুনের জন্য সুপারি দেওয়া হয় তৌসিফ রাজা ওরফে বাদশাকে।
জানা যাচ্ছে, প্রথমে বাদশার কাছে শেরু জানতে চেয়েছিলেন, কোন হাসপাতালে ‘অপারেশন’ চালানো তাঁদের পক্ষে সুবিধাজনক হবে। বাদশা পটনার পারস হাসপাতালের কথা বলেন। সেই কথা চন্দনের আস্থাভাজন সহযোগীকে জানান শেরু। ওই সহযোগী চন্দনকে পারস হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে বলেন।
কিন্তু তৌসিফ ওরফে বাদশা কেন ‘অপারেশন’-এর জন্য পারস বেছে নিয়েছিলেন? আদতে ভাড়াটে খুনি বাদশার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা পটনার ফুলওয়ারি শরিফ এলাকায়। পারস হাসপাতাল সেখান থেকে বেশি দূরে নয়। হাতের তালুর মতো ওই এলাকা চিনতেন তিনি। পুলিশ সূত্রে খবর, তা ছাড়া সম্প্রতি ওই হাসপাতালে বাদশার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত কয়েক দিনে বেশ কয়েক বার তাঁকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন বাদশা। মনে করা হচ্ছে, খুনের ‘নকশা’ তখনই তৈরি করে ফেলেছিলেন ওই দক্ষ বন্দুকবাজ। তাই সঙ্গীদের নিয়ে হাসপাতালে ঢুকে গ্যাংস্টার চন্দনের উপর গুলিবর্ষণ করে গা-ঢাকা দিতে হাসপাতাল চত্বরই প্রথমে বেছে নিয়েছিলেন তাঁরা। শুধু তা-ই নয়, গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালের ২০৯ নম্বর ঘরে (আইসিইউ) গুলি চালিয়ে শেরুর পরামর্শমতোই, বিহার ছেড়ে বাংলায় ঢুকে পড়ে বন্দুকবাজ দলটি।
এখন চন্দনের সেই সহযোগীর খোঁজে বিহার এসটিএফ। তাঁর সম্পর্কে তথ্য পেতে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি ধৃত তৌসিফ-সহ অন্যদের ফোনকল ও হোয়াট্সঅ্যাপ চ্যাট পরীক্ষা করা হচ্ছে।