বিজয়া সম্মিলনীতে মিশল দেশ-বন্দনা

Advertisement

মিতালি দাস

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৫৯
Share:

সকালবেলায় ফোন করলেন এক দাদা— ‘‘তৈরি থেকো, বিকেল সাড়ে ৫টায় একটা অনুষ্ঠানে যাব। আর্য সংস্কৃতি বোধনী সমিতির বিজয়া সম্মিলনী।’’ সম্মতি জানাতেই বললেন, ‘‘ঠিক সাড়ে ৫টায় পৌঁছতে হবে। খেয়াল রেখো।’’

Advertisement

আজকাল সাড়ে ৫টার অনুষ্ঠান ৬টাতেও শুরু হয় না, এই অভিজ্ঞতা কমবেশি সবার রয়েছে। কিন্তু সময়ের ব্যাপারে জোর দিয়ে বলায় আগেভাগে তৈরি হয়ে যাই। তবু পৌঁছতে ১০ মিনিট দেরি হয়ে গেল। ভাবছিলাম— ‘ভালই হল, বেশি সময় বসতে হবে না।’ কিন্তু গিয়ে দেখি, অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গিয়েছে। একটু ধাক্কা খেলাম। এমন তো কোথাও দেখিনি!

সামনে ভারতমাতার সুদৃশ্য ছবি। তাতে লেখা— ‘আর্যের ইতিহাস ভারতের ইতিহাস। কৃন্বন্তো বিশ্বমার্যম।’ পাশে ৪০-তম জন্মদিনের (সমিতির প্রতিষ্ঠা দিবস) ৪০টি প্রদীপ। যিনি আসছেন, একটি করে জ্বালাচ্ছেন। এ-ও এক ব্যতিক্রম।

Advertisement

একে জন্মদিন, তার ওপর বিজয়া সম্মিলনী। তাই সামান্য মিষ্টি নিয়ে গিয়েছিলাম। কোথায় রাখব, কাকে দেব— এমন ভাবনার মধ্যেই এক জন ইশারা করলেন। সামনে গিয়ে দেখি অনেক খাবারের প্যাকেট। জানলাম, আর্য সংস্কৃতি বোধনী সমিতির বিজয়া সম্মিলনীতে সদস্যদের অনেকে নিজের হাতে নানা রকমের খাবার তৈরি করে নিয়ে আসেন। কেউ কেউ দোকান থেকেও কিনে আনেন। ঝাল, মিষ্টি, টক, নোনতা— অনেক কিছু। বাদ যায়নি নাড়ু, মোয়া, জিলিপি, বোঁদে, ঘুগনি। এক জন বড় পাত্রে প্রচুর চকোলেট নিয়ে এলেন। বিষয়টি ভাল লাগার ব্যাপারই বটে।

সমিতির মুখ্য সংযোজক গৌতম ভট্টাচার্য চার দশকের সুখ-দুঃখের কথা তুলে ধরলেন। দেশাত্মবোধ, সংযমী জীবন, মনন-স্মরণের কত কথা প্রতি দিন শুনি। কিন্তু ক-জন আর তা পালন করেন! কিন্তু গৌতমবাবু প্রথম দর্শনেই আমার আস্থা অর্জন করে নেন। তাঁর কথা যত শুনছিলাম, মনে হচ্ছিল, সত্যিই তো দেশমাতার জন্য আমাদের অনেক কিছু করণীয় রয়েছে। সঙ্ঘবদ্ধ না হয়েও সে কাজ করা যায়। নতুন প্রজন্মকে দেশাত্মবোধে আকৃষ্ট করে তোলাও কম কী! নিজের বাড়ির শিশু-কিশোরদের সঙ্গে নিয়মিত দেশের কথা, মহাপুরুষদের কথা বলে এই কাজ সহজে করা যায়।

গৌতম ভট্টাচার্য ছাড়াও বক্তব্য রাখেন জয়ন্ত দত্ত, নবমিতা চক্রবর্তী, অজয় পুরকায়স্থ, পুজা গুপ্ত, অনুরূপা দাস, নীলকণ্ঠ চক্রবর্তী ও অরিন্দম চক্রবর্তী। প্রত্যেকে দেশাত্মবোধে সকলকে জাগ্রত করার আহ্বান জানান। ঘড়ির কাঁটা ধরেই এগিয়ে চলছিল অনুষ্ঠান।

সমবেত ‘বন্দেমাতরম’ গানে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। বলাই বাহুল্য, পৌঁছতে ১০ মিনিট দেরি হওয়ায় তা শুনতে পারিনি। পরে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন হল। একই সঙ্গে চলতে থাকে সমিতি সঙ্গীত। শ্রাবণী দত্ত ও রূপক ভট্টাচার্য একক সঙ্গীত গাইলেন। সমবেত সঙ্গীত হল ‘প্রণমি তোমায় ভারতমাতা’।

শুনেছিলাম দু’ঘণ্টার অনুষ্ঠান। শেষ প্রান্তে জাতীয় সঙ্গীতের ঘোষণা যখন হল, ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি, রাত ৭টা বেজে ২০ মিনিট। আশ্চর্যই হতে হল, এত সময় মেনে! সবশেষে মিষ্টিমুখ। আগেই উল্লেখ করেছি, সবাই মিলে প্রচুর খাদ্যসামগ্রী এনেছেন। বিভিন্ন রকমের খাবার খেতে গিয়ে দেখি, পেটে সামাল দেওয়া মুশকিল হচ্ছিল।

সত্যি বললে, এমন খাওয়ার কথা না বললে নয়। তবে বাড়ি ফিরলাম এর চেয়ে অনেক অনেক মূল্যবান অভিজ্ঞতা নিয়ে। দেখলাম বিভিন্ন বয়সের এক দল পুরুষ-মহিলার সময়ানুবর্তিতা, দেশাত্মবোধ, নিষ্ঠা। পরিচয় হল প্রকৃত অর্থে সংস্কৃতিমনস্ক কিছু মানুষের সঙ্গে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন