রাজনাথ সিংহ।
তিনি উৎকন্ঠায় রেখেছেন দু’পক্ষকেই। তাঁর গজ শেষ পর্যন্ত কোনও শিবিরে আশ্রয় নেবে তা এখনও স্পষ্ট করেননি বিএসপি নেত্রী মায়াবতী। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে যদি মায়াবতী, কংগ্রেস ও অখিলেশ— তিন দলের জোট হয়, সে ক্ষেত্রে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির লড়াইটা যে কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠবে তা মেনে নিচ্ছেন রাজনাথ সিংহ। তাঁর হিসেব বলছে, এমন ক্ষেত্রে উত্তরপ্রদেশে ১২-১৫টি আসন কমবে বিজেপির। দলের অনেকের আশঙ্কা, বিরোধীরা একজোট হলে যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে ২৫-এর নীচেও নেমে আসতে বিজেপির আসন।
আশি আসনের উত্তরপ্রদেশ বরাবরই লোকসভা নির্বাচনে নির্ণায়ক ভূমিকা নিয়ে থাকে। গত লোকসভা বিজেপি ও তার শরিক আপনা দল সব মিলিয়ে পেয়েছিল ৭৫টি আসন। কিন্তু এ বারে পরিস্থিতি আলাদা। গত সাড়ে বছরের দলিত অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে ওই রাজ্য নিজের ঘর গোছাতে তৎপর রয়েছেন মায়াবতী। তাঁকে পাশে পেতে উৎসাহী কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টি। অখিলেশ যাদবের মতো নেতারা মনে করছেন, বিরোধী তিন শক্তি জোট বাঁধলে বিজেপিকে যে হারানো সম্ভব তা উত্তরপ্রদেশের উপনির্বাচনে তা আগেই প্রমাণিত। কংগ্রেসও মনে করছে, সব বিরোধী শক্তিকে একজোট করা গেলে তবেই উত্তরপ্রদেশে বিজেপির বিজয়রথ থামানো সম্ভব। বিরোধী জোটকে এক সুতোয় বাঁধার কাজে নেমেছেন চন্দ্রবাবু নায়ডু। মায়াবতীকে বিজেপি বিরোধী শিবিরে পাওয়ার জন্য তৎপর রয়েছেন তিনি। যদিও মায়াবতী এখনও নিজের তাস দেখাচ্ছেন না। উল্টে রাজস্থান-মধ্যপ্রদেশে একা লড়ে সুবিধে করে দিয়েছেন বিজেপিকে। লোকসভা নির্বাচনে মায়াবতী শেষ পর্যন্ত কোন দিকে ঝোঁকেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তাতেই রয়েছে কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টি।
রাজনীতির অনেকেই মনে করছেন, মায়াবতী সম্ভত পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফলাফল দেখেই সিদ্ধান্ত নিতে চান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যদি রাহুল-মায়া-অখিলেশ জোট বাঁধেন তা হলে বিজেপির লড়াই যে কঠিন হতে চলেছে তা স্বীকার করে নিয়েছেন রাজনাথ। সে ক্ষেত্রে বেশ কিছু আসন যে দল হারাবে তা-ও স্বীকার করে নিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। রায়পুরে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে সাংবাদমাধ্যমের কাছে রাজনাথের স্বীকারোক্তি, ‘‘উত্তরপ্রদেশে মহাজোট হলে বিজেপির কাছে বড় পরীক্ষা হতে চলেছে। সে ক্ষেত্রে দল ১২-১৫টি আসন হারাবে।’’
ঘনিষ্ঠ মহলে বিজেপি মনে করছে, মহাজোট হলে পঁচিশের নীচে নেমে আসতে পারে দলের আসন সংখ্যা। বিশেষ করে ওই রাজ্যে উপনির্বাচনের ফলাফল চিন্তায় রেখেছে বিজেপি নেতৃত্বকে। সরাসরি তা স্বীকার না করলেও, উত্তরপ্রদেশের জন্য বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের রণকৌশল হল প্রতিটি আসনে পঞ্চাশ শতাংশের বেশি ভোট পাওয়া। সেই মতো বুথকর্মীদের প্রস্তুত হতে নির্দেশ দিয়েছেন অমিত। একই সঙ্গে বিরোধী জোটে ফাটল ধরাতেও সক্রিয় হয়েছে বিজেপি। নরমে-গরমে দলিত নেত্রীকে বিরোধী জোট থেকে দূরে রাখতে চাইছে বিজেপি। এক দিকে যেমন পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছে, আবার মায়াবতী ও তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত নতুন করে চালু করে পুরনো দুর্নীতির মামলা খুঁচিয়ে তুলেছে মোদী সরকার।