গত ক’দিন ধরে চলছিল ধরি মাছ না ছুঁই পানি। বেঙ্কাইয়া নায়ডুর মতো বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রের মন্ত্রীরা বোঝাতে চাইছিলেন, নরেন্দ্র মোদীর সরকার মোটেই নাক গলাতে চায় না তামিলনাড়ুর প্রাচীন ষাঁড়ের লড়াই নিয়ে গণ্ডগোলে। আজ কিন্তু সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী ও পনীরসেলভমের ব্যর্থতা নিয়েই সরব হল বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকার। জয়ললিতার মৃত্যুর পর শশীকলা নটরাজন এখন দলের দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি এখন মুখ্যমন্ত্রীর পদটি পেতে চাইছেন। তাতে যে বিজেপিরও সায় আছে, তারই বার্তা মিলল পনীরসেলভম সরকার সম্পর্কে মোদী সরকারের মন্ত্রী মুখ খোলায়। এর পাশাপাশি, ষাঁড়ের লড়াই নিয়ে পরিস্থিতি এত ঘোরালো হয়ে ওঠার জন্য আজ ডিএমকে ও কংগ্রেসের দিকেও আঙুল তুলেছেন মোদী সরকারের মন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ।
নির্মলা বলেছেন, ‘‘জাল্লিকাট্টু নিয়ে গত বছরই প্রধানমন্ত্রী মোদী রাজ্যকে সচেতন করেছিলেন। তখন পদক্ষেপ করলে এই পরিস্থিতি তৈরিই হতো না।’’ নির্মলার দাবি, রাজ্য পদক্ষেপ করলে যে কেন্দ্র সাহায্য করতে প্রস্তুত, তা-ও জানানো হয়েছিল গত বছর। তখন জয়ললিতার অসুস্থতা, স্থানীয় নির্বাচনের জন্য রাজ্য নজর দিতে পারেনি। নির্মলা এ-ও মনে করিয়ে দেন, কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারই জাল্লিকাট্টু বন্ধের জন্য প্রথম বড় পদক্ষেপটি করেছিল। ডিএমকে সামিল ছিল তাতে। সেই ডিএমকে ও কংগ্রেসই বিক্ষোভকারীদের তাতাচ্ছে।
বিজেপি সূত্রেও বলা হচ্ছে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার অর্ডিন্যান্স এনেছিল শেষ মুহূর্তে। ফলে বিক্ষুব্ধদের সামাল দিতে পারেনি। তার উপরে স্থানীয় অনগ্রসর সম্প্রদায় থেবর-দের অসন্তোষ ও আবেগকেও সামাল দিতে হচ্ছে। শাসক-বিরোধী কোনও পক্ষকেই তারা রেয়াত করছে না। বিজেপির মতে, এমন পরিস্থিতির জন্য এডিএমকের অভ্যন্তরীণ কোন্দলও অনেকটা দায়ী। চলতি টানাপড়েনে পনীরসেলভমকে পিছন থেকে মদত জোগাচ্ছে কংগ্রেস।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তামিলনাড়ুর পরিস্থিতির উপরে নিরন্তর নজরে রাখছে রাজনাথ সিংহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব কথাও বলেছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যসচিবের সঙ্গে। রাজ্যের মুখ্যসচিব তাঁকে জানিয়েছেন, জাল্লিকাট্টু চালু করতে আইন পাশের পরে বিক্ষোভ ক্রমশ শান্ত হচ্ছে। ভিড় কমছে চেন্নাইয়ের মেরিনা সৈকতে। খুব দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।
এরই মধ্যে বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী কাল একটি বোমা ফাটিয়েছেন। তাঁর দাবি, জাল্লিকাট্টু আন্দোলনের পিছনে রয়েছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। তামিলনাড়ুতে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে হবে। বিক্ষোভকারীদের হটাতে নামাতে হবে আধাসেনা বা সেনা। রাজনাথ, অরুণ জেটলিরা স্বামীর ওই বক্তব্য অবজ্ঞা করারই পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে। তবু প্রশ্ন উঠছে, ঘোলা জলে মাছ ধরতে স্বামীর ওই টুইট-বোমার পিছনে প্রধানমন্ত্রী ও অমিত শাহদেরই ইন্ধন নেই তো?
জাল্লিকাট্টু সংক্রান্ত আইনি লড়াইও আজ নয়া মোড় নিয়েছে কেন্দ্রের এক পদক্ষেপে। সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, তামিলনাড়ুতে জাল্লিকাট্টুর অনুমতি দিয়ে ২০১৬ সালে জারি করা বিজ্ঞপ্তি তারা প্রত্যাহার করে নেবে। কারণ, এ নিয়ে নয়া আইন পাশ করেছে তামিলনাড়ু বিধানসভা। ওই বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বেশ কয়েক জন আবেদনকারী। কেন্দ্রের এই আবেদন গৃহীত হলে সেই আর্জিগুলি খারিজ হয়ে যেতে পারে। বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ জানিয়েছে, কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহারের আর্জি নিয়ে কবে সিদ্ধান্ত হবে, তা সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ স্থির করবে।
সপ্তাহভর ধুন্ধমার চলার পরে তামিলনাড়ুর আজকের ছবিটা ছিল আপাত ভাবে শান্ত। গত কালের হিংসার আগুন নিভতেই চেন্নাইয়ের মেরিনা সৈকত ছাড়ছেন বিক্ষোভকারীরা। হিংসার জেরে গত কাল যে সব স্কুল বন্ধ ছিল, সেগুলি আজ থুলেছে। স্কুল-কলেজ-অফিসে হাজিরাও ছিল স্বাভাবিক। আলাঙ্গানাল্লুরে জাল্লিকাট্টুর উদ্বোধন না করেই ফিরতে হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীকে। স্থির হয়েছে সেখানে জাল্লিকাট্টু হবে ১ ফেব্রুয়ারি। পরের দিন পালামেদুতে ও ৫ তারিখ অবনীয়াপুরমে হবে ষাঁড়ের লড়াই। তবে পুলিশ কাল যে ভাবে বিক্ষোভকারীদের দমন করেছে, তা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে পনীরসেলভমের সরকার। অভিযোগ উঠেছে, শক্তি প্রয়োগে বাড়াবাড়ি করেছে পুলিশ। কিছু ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কের ঝড় তুলেছে। সরব বিরোধী দল ডিএমকে-ও। ডিএমকে-র কার্যনির্বাহী সভাপতি এম কে স্ট্যালিনের দাবি, বদলি করতে হবে চেন্নাইয়ের পুলিশ কমিশনারকে। করাতে হবে বিচারবিভাগীয় তদন্তও। চেন্নাইয়ের পুলিশ কমিশনার এস জর্জ জানিয়েছেন, মেরিনা সৈকতে ভিড়ে মিশে থাকা দুর্বৃত্তদেরই শুধু নিশানা করেছিল পুলিশ।