BJP

BJP: ‘উত্তর-পূর্বের মন বোঝেনি বিজেপি’

বছর ঘুরলেই মণিপুরে নির্বাচন। ওই রাজ্যে দলের জয় সম্পর্কে এত দিন নিশ্চিত ছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:০৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

ঘটনা এক: অসম-মিজোরাম সীমানায় গুলিচালনা।

Advertisement

ঘটনা দুই: মণিপুরে সেনা কনভয়ে হামলা।

ঘটনা তিন: ব্রু জনজাতির পুনর্বাসন নিয়ে ত্রিপুরা-মিজেরামের মধ্যে সমস্যা।

Advertisement

ঘটনা চার: অরুণাচলে ক্রমাগত চিনের অনুপ্রবেশ।

ঘটনা পাঁচ: নাগাল্যান্ডে জঙ্গি ভেবে নিরীহ গ্রামবাসীদের হত্যা। যার ফলে বিশ বাঁও জলে নাগা শান্তি চুক্তি।

উত্তর-পূর্বের আটটি রাজ্যে, হয় সরাসরি, না হলে শরিক দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকারে রয়েছে বিজেপি। কিন্তু উত্তর-পূর্বে ক্রমশ তারা জমি হারাচ্ছে বলেই মনে করছেন রাজনীতির অনেকে। এই রাজ্যগুলিতে গত কয়েক বছরের নানা ঘটনা থেকেই সেটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বিশেষ করে নাগাল্যান্ডের ঘটনার পরে বিজেপি শিবির একটি বিষয়ে নিশ্চিত যে, আপাতত অনিশ্চিত হয়ে পড়ল নাগা শান্তি চুক্তি।

গত সপ্তাহেই নাগা শান্তি চুক্তি নিয়ে বৈঠক করতে দিল্লি এসেছিলেন নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেফিও রিও এবং এনএসসিএন নেতা মুইভা। কিন্তু মন জেলার ঘটনায় সেই শান্তি চুক্তি আপাতত অনির্দিষ্ট কালের জন্য শিকেয় উঠল বলে মনে করছেন বিজেপি নেতারা। রাজ্যে জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি চালু থাকা সত্ত্বেও সেনাবাহিনী কেন সেখানে এ ভাবে গুলি চালাল, এই অস্বস্তিকর প্রশ্ন সামলাতে কেন্দ্রকে বেগ পেতে হবে বলেই মনে করছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা। নাগা জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি এবং রাজ্য সরকার, উভয়ের সঙ্গেই সম্পর্ক জটিল হয়ে ওঠায়, কিছু দিন আগেই যাঁকে শান্তি আলোচনার মধ্যস্থতাকারীর দায়িত্ব থেকে সরাতে হয়েছিল কেন্দ্রকে, পরিস্থিতি সামলাতে এখন ফের সেই আর এন রবিকেই তড়িঘড়ি ডেকে পাঠিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।

পরিস্থিতি যে দিকে গড়িয়েছে, তাতে মিজোরাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ডের মতো যে রাজ্যগুলিতে বিজেপি শরিক দল হিসাবে সরকারে রয়েছে, তারা এখন একযোগে আফস্পা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে। গোটা উত্তর-পূর্ব থেকে আফস্পা প্রত্যাহারের দাবি নতুন নয়। তবে নাগাল্যান্ডের ঘটনার পরে এই দাবি আরও জোরদার হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রের আশঙ্কা, জঙ্গি দমন অভিযানেও যার প্রভাব পড়তে পারে।

সম্প্রতি মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা অভিযোগ করেছিলেন, বিজেপি উত্তর-পূর্বে শাসন করলেও, এখানকার মানুষের মন এখনও পড়তে পারেনি। কথাটি যে সত্যি, নাগাল্যান্ডের ঘটনার পরে তা ঘনিষ্ঠ মহলে স্বীকার করতে দ্বিধা করছেন না বিজেপি নেতারা। দলের এক নেতার কথায়, “মিজেরামের মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তি সত্ত্বেও দিল্লি সম্প্রতি এমন এক আমলাকে সে রাজ্যের মুখ্যসচিব করে পাঠিয়েছে, যিনি মিজোদের ভাষাই জানেন না। কেন্দ্রের এই চাপিয়ে দেওয়ার মনোভাবে ক্ষুব্ধ এনডিএ তথা উত্তর-পূর্বের জোট নেডার শরিকরা। যা নিয়ে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ জানিয়েছেন মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী।’’ ওই নেতার মতে, মিজোদের সিংহভাগই যেখানে হিন্দি বা ইংরেজিতে স্বচ্ছন্দ নন, সেই ক্ষেত্রে গোড়াতেই স্থানীয় মতকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত ছিল কেন্দ্রের। কিন্তু তা করা হয়নি।

বিজেপির একাংশ নেতা মনে করছেন, উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি সামলাতে নেডা প্রধান তথা অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার উপরে অতিরিক্ত নির্ভরতাও গোটা এলাকায় জমি হারানোর আর একটি কারণ। বিজেপি রাজনীতিতে অমিত শাহের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত হিমন্ত। দলের ব্যাখ্যা, হিমন্ত যত দিন মুখ্যমন্ত্রী হননি, তত দিন তিনি যোগ্যতার সঙ্গে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি সামলাচ্ছিলেন। অরুণাচল প্রদেশ বা মণিপুরে সরকার গঠনের সময়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। কিন্তু অসমের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে তাঁর পক্ষে অন্য রাজ্যগুলিকে সমান ভাবে নজরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ত্রুটি থেকে যাচ্ছে পর্যবেক্ষণে। তা ছাড়া অসম-মিজোরাম সীমানায় গুলি চলায় যে ভাবে গ্রামবাসীদের মৃত্যু হয়েছিল, তা থেকে স্পষ্ট নিজের রাজ্যেও খুব একটা স্বস্তিতে নেই হিমন্ত।

বছর ঘুরলেই মণিপুরে নির্বাচন। ওই রাজ্যে দলের জয় সম্পর্কে এত দিন নিশ্চিত ছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু নাগাল্যান্ডে সেনার গুলি চালানোর ঘটনা মণিপুরেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে পূর্ণ মাত্রায়। বিশেষ করে আফস্পা প্রত্যাহারের প্রশ্নে মন জেলার ঘটনা ওই রাজ্যে বিরোধীদের হাত শক্ত করবে বলেই আশঙ্কা করছে দল। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘নাগাল্যান্ডের ঘটনা গোটা উত্তর-পূর্বে বিজেপির বিরুদ্ধে নেতিবাচক বার্তা গিয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে উত্তর-পূর্বকে দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে জোড়ার যে প্রয়াস কেন্দ্র করে আসছিল, তা অনেকটাই ধাক্কা খেয়েছে শনিবারের ঘটনায়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন