(বাঁদিকে) তেজস্বী যাদব এবং চিরাগ পাসোয়ান (ডানদিকে)। —ফাইল চিত্র।
বিধানসভা ভোটের দিন ঘোষণা হয়ে গিয়েছে সোমবার। কিন্তু এখন বিরোধীদের ‘মহাগঠবন্ধনে’ গেরো কাটছে না বিহারে! আসন-রফার পাশাপাশি মহাজোটের দুই শরিক আরজেডি এবং কংগ্রেসের টানাপড়েন চলছে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা নিয়েও। অন্য দিকে, ক্ষোভ রয়েছে এনডিএ শিবিরেও। লোক জনশক্তি পার্টি (রামবিলাস) প্রধান তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চিরাগ পাসোয়ান দাবির তুলনায় অনেক কম আসন পেয়ে ক্ষুব্ধ বলে ক্ষমতাসীন জোট সূত্রের খবর। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার চিরাগের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিহার ভোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান-সহ বিজেপি নেতারা।
গত মাসে লোকসভার বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের রাহুল গান্ধীর সঙ্গে ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’য় ধারাবাহিক ভাবে যোগ দিয়েছিলেন তেজস্বী। সে সময় আরজেডি নেতৃত্বের তরফে লালুর কনিষ্ঠ পুত্রকে ‘মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী’ ঘোষণার দাবি উঠেছিল। কিন্তু তা পূরণ হয়নি। মঙ্গলবার প্রাক্তন সাংসদ তথা কংগ্রেসের দলিত নেতা উদিত রাজ সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেন, ‘‘তেজস্বী মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী তাঁর দলের পছন্দ হলেও তিনি এখনও ‘ইন্ডিয়া’ (বিজেপি বিরোধী জোট)-র মনোনীত নন। বিষয়টি নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে।’’
বুধবার দিল্লিতে কংগ্রেসের জাতীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠক আছে। তার আগে উদিতের এই মন্তব্য কংগ্রেসের ‘চাপ বাড়ানোর কৌশল’ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে। কারণ, এখনও অন্তত আট-ন’টি আসন নিয়ে দু’দলের ‘স্নায়ুযুদ্ধ’ চলছে। এ ছাড়া গত বার ১৯টি আসনে লড়ে ১২টিতে জেতা সিপিআই এমএল লিবারেশন অন্তত ২৫টি আসনের দাবিতে অনড় থাকায় চাপ বেড়েছে আরজেডির উপর। অন্য দুই বাম দল সিপিএম এবং সিপিআই তাদের ‘ভাগ’ ছাড়তে রাজি নয়।
অন্য দিকে, এনডিএ-র সমস্যা চিরাগকে নিয়ে। ২০২০ সালের বিধানসভা ভোটে নিজের ‘নাক কেটে’ মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের জেডিইউ-র ‘যাত্রাভঙ্গ’ করেছিলেন রামবিলাস-পুত্র। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সে বার বিজেপির বিরুদ্ধে প্রার্থী দেননি তিনি। নিশানা করেছিলেন নীতীশের জেডিইউকে। মোট ১৩৪ আসনে লড়ে মাত্র একটিতে জিতলেও সাড়ে পাঁচ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল তাঁর দল। সূত্রের খবর, এ বার বিহারের ২৪৩টি আসনের মধ্যে নীতীশ কুমারের জেডিইউ এবং বিজেপি ১০০টিতে লড়ে বাকি আসনগুলিতে চিরাগের এলজেপি (এস), প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঝিঁর হিন্দুস্থান আওয়াম মোর্চা (হাম) এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উপেন্দ্র কুশওয়াহার রাষ্ট্রীয় লোক মোর্চার মধ্যে ভাগ করে দিতে চাইছে। যা মানতে রাজি নন চিরাগ। অন্তত ৪০টি আসন চান তিনি। তাই তাঁর মানভঞ্জনে সক্রিয় হয়েছে বিজেপি।
নির্বাচন কমিশন সোমবার জানিয়েছে, এ বার বিহারে দু’দফায় ভোট হবে। প্রথম দফার নির্বাচন হবে ৬ নভেম্বর। ওই দফায় ১২১টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। ১০ অক্টোবর সেই সংক্রান্ত গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে। ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত মনোনয়ন জমা করা যাবে। তা যাচাইয়ের জন্য ১৮ তারিখ অবধি সময় পাওয়া যাবে। প্রার্থীরা নাম প্রত্যাহার করতে পারবেন ২০ অক্টোবর পর্যন্ত। দ্বিতীয় দফার নির্বাচন হবে ১১ নভেম্বর। দ্বিতীয় দফায় মোট ১২২টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে। ওই দফার গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে ১৩ অক্টোবর। ২০ অক্টোবর পর্যন্ত মনোনয়ন জমা করা যাবে। ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত প্রার্থীরা চাইলে নাম তুলে নিতে পারবেন। ফলে আগামী এক-দেড় সপ্তাহের মধ্যে সমঝোতা চূড়ান্ত করতে হবে। শেষ বেলায় তাই তৎপরতা যুযুধান দুই জোটেই।