প্রস্তুতি: আজ থেকেই শুরু বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক। তৈরি ভুবনেশ্বর। —নিজস্ব চিত্র।
মেরেকেটে পাঁচশো মিটার। রাস্তা ধরে হেঁটে গেলে বড়জোর মিনিট দশেক।
রোজ ভ্যালি মামলায় গ্রেফতারের পরে আদালতের নির্দেশে তৃণমূলের দুই সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাপস পাল ভর্তি ভুবনেশ্বরের অ্যাপোলো হাসপাতালে। আর তার পিছনের মাঠেই শনিবার থেকে বসছে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক। সদ্য গতকালই দক্ষিণ কাঁথিতে দ্বিতীয় স্থানে উঠে ফুটছে বিজেপি। ভুবনেশ্বরের বৈঠকে স্থির হবে, মমতা-রাজ্যে কী করে বিকল্প হয়ে উঠতে পারে দল।
এই ময়দানে দাঁড়িয়েই বিজেপির এক নেতা বললেন, “হতে পারে রাজ্যটা ওড়িশা। কিন্তু দেখুন এখানের হাসপাতালই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কুকীর্তির সাক্ষ্য বহন করছে!” হাসপাতালে দুই সাংসদ নিয়ে কড়াকড়ি বিস্তর। সুদীপের স্ত্রী নয়না ও তাপসের স্ত্রী নন্দিনী ফিরে গিয়েছেন কলকাতায়। তবে পরিবারের অন্য কয়েক জন আছেন। পারিবারিক সূত্রের মতে, কেউই ভালো নেই। দু’দিন আগেই সংক্রমণ হয়েছে সুদীপের। তাপসের জামাইবাবু আছেন। তাপসের স্নায়ু শুকিয়ে যাচ্ছে, সমস্যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গেরও। বেলভিউ থেকে চিকিৎসক নিয়ে আসার চেষ্টাও সফল হচ্ছে না।
কিন্তু এরা আসল নয়। আসলে দুর্নীতির অভিযোগের এই প্রতীকদের সামনে রেখেই পশ্চিমবঙ্গে মমতার বিরুদ্ধে বড় ছক কষছে বিজেপি। বৈঠকের আগে পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে যে নোট তৈরি হয়েছে, তাতে লেখা হয়েছে, “গরিব পরিবারে জন্ম নেওয়া মমতা নিজের জীবনের বড় অংশ রাজনীতিতে দিয়েছেন। কিন্তু সেটিকেই মুখোশ বানিয়ে মমতা এখন গরিবদের ধোঁকা দিয়ে দুর্নীতি করছেন। সঙ্গে তোষণের রাজনীতি।” সেটিকেই পুঁজি করে এখন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ও সঙ্ঘের আস্ফালন শুরু হয়েছে। মমতা সরকার হিন্দুদের উপর অত্যাচার করছে, এই অভিযোগ তুলে শনিবার, বাংলা নববর্ষের দিনেই দিল্লির যন্তরমন্তর থেকে বজরঙ্গ দলের জাতীয় প্রধান মনোজ বর্মার নেতৃত্ব বঙ্গভবন পর্যন্ত মিছিল করবে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরঙ্গ দল।
আরও পড়ুন: কালো টাকার খোঁজে উদ্বেগ কর সন্ত্রাসেরও
পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির সংগঠনের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় নেতা শিবপ্রকাশ আজ বলেন, “কাঁথি দক্ষিণ কেন্দ্রের ফল দেখিয়ে দিয়েছে, বিজেপিই মমতার বিকল্প হতে পারে। সংগঠনকে মজবুত করার কৌশলই এ বারে রচনা হবে।” পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে থাকা উত্তরপ্রদেশে যোগী সরকারের মন্ত্রী সিদ্ধার্থনাথ সিংহও গত কালের ফলের পর উজ্জীবিত। বললেন, “এক সময় ‘ভাগ-মমতা-ভাগ’ স্লোগান দিয়েছিলাম। এ বারে বিজেপির জন্য বাংলা প্রস্তুত।” আজই অমিত শাহ ভুবনেশ্বরে রোড-শো করেছেন। কাল প্রধানমন্ত্রীও করবেন রোড-শো। মোদী সরকারের মন্ত্রী ও ওড়িশার নেতা ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেন, ‘‘গোড়া থেকেই প্রধানমন্ত্রী পূর্ব ভারতে জোর দেওয়ার কথা বলে আসছেন। ওড়িশার পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির ভাল ফল দেখিয়ে দিয়েছে, পূর্ব ভারতেও বিজেপি বিকল্প হতে পারে। ওড়িশার পাশাপাশি লক্ষ্য বাংলাও।’’
ওড়িশায় বসে বাংলা-জয়েরও ছক কষা। ভুবনেশ্বরের বৈঠক আসলে মমতাকেও বার্তা।