প্রতীকী ছবি।
লোকসভায় কাল পা-রাখার আগেই প্রধানমন্ত্রী চেয়েছিলেন বিরোধী শিবিরে ফাটল ধরিয়ে সংসদের অচলাবস্থার জট কাটাতে। কিন্তু গোড়াতেই হোঁচট খেতে হল তাঁকে।
গত দু’দিন ধরে মোদী চেষ্টা করে যাচ্ছেন, চন্দ্রবাবু নায়ডুর নেতৃত্বে মুখ্যমন্ত্রীদের একটি কমিটি গড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরীবালদের মতো নোট-বিতর্কের ঘোর বিরোধীদের চাপে রাখতে। এই কমিটিতে সামিল করার জন্য জেডি(ইউ)-এর নীতীশ কুমার, বিজেডির নবীন পট্টনায়ক, সিপিএমের মানিক সরকারকেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ফোন করেছিলেন অরুণ জেটলি। কিন্তু আজ সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন ত্রিপুরা মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। আজ সকালে সংসদ চত্বরে বিরোধী দলের বৈঠকে তৃণমূল বাকি দলগুলিকে জানিয়ে দেয়, মোদীর এই ধরনের কমিটি গঠনের প্রস্তাবেরই তারা বিরোধী। বিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরানো ছাড়া আর কোনও লক্ষ্য নেই সরকারের।
বিজেপির শীর্ষ সূত্রের মতে, নীতীশ কুমারকে অরুণ জেটলি ফোন করলেও তিনি এখনও চূড়ান্ত সম্মতি দেননি। নোট-বাতিলের সিদ্ধান্ত সমর্থন করেছেন নীতীশ। কিন্তু আজ বিরোধী দলের বৈঠকে তাঁর দলেরই সাংসদ শরদ যাদব বলেন, এখনও এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। কংগ্রেস অবশ্য পুদুচেরির মুখ্যমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামীর নাম চূড়ান্ত করে রেখেছে। কিন্তু বাকি বিরোধী দলের মতিগতি দেখে এখন তারাও একটু ধীরে –চলতে চাইছে। দলের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা প্রকাশ্যে বলেছেন, ‘‘এই কমিটি গড়ে কী লাভ? কমিটি যদি সুপারিশ করে মোদীর সিদ্ধান্ত ভুল, তা হলে কি প্রধানমন্ত্রী তা মেনে নেবেন?’’
কিন্তু অন্য বিরোধী দল যখন পরিস্থিতির উপর নজর রেখে চলতে চাইছে, সেই সময় ত্রিপুরার মানিক সরকার আজ খোলাখুলি তাঁর অসম্মতির কথা জানিয়ে দিলেন। জেটলি তাঁকে ফোন করে ‘ডিজিটাল’ লেনদেন খতিয়ে দেখার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীদের কমিটিতে থাকার অনুরোধ করেছিলেন। মানিক সরকার আজ বলেন, ক্যাশলেস লেনেদেনের ব্যাপারে তাঁর ধারণা পরিষ্কার নয়। তা ছাড়া, এই মুহূর্তে দেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিও ক্যাশলেস লেনেদেনে জোর দেওয়ার মতো বলে তিনি মনে করেন না। বরং নোট বাতিলের পর দেশে যে ‘আর্থিক বিশৃঙ্খলা’ তৈরি হয়েছে, সে’টি সামাল দেওয়াই আশু প্রয়োজন বলে তিনি মানেন।
মানিক খোলাখুলি মোদীর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় কিছুটা ধাক্কাই খেয়েছে বিজেপি। মোদী সরকারের এক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী সন্ধ্যায় বলেন, ‘‘আসলে কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম ও এনসিপি— এই চার দলই গোঁ ধরে বসে আছে। তারা আলোচনার পরে ভোটাভুটি চায়। বাকি বিরোধী দলগুলি সংসদে যে কোনও পন্থায় আলোচনায় রাজি। সরকারও কালো টাকার বিরুদ্ধে পদক্ষেপে কোনও ভোটাভুটি চায় না।’’ সংসদীয় মন্ত্রী অনন্ত কুমার বলেন, সব দলের কাছেই আমরা আবেদন করেছি। প্রধানমন্ত্রী কাল সংসদে থাকবেন। বিতর্কেও অংশ নেবেন। কিন্তু পুরো বিতর্ক চলাকালীন তিনি সংসদে বসে থাকবেন, এটা হয় না। আজ আয়কর সংক্রান্ত বিল পাশের পর বিরোধীদের কাছে আবেদন, এ বার আলোচনা শুরু করুন।
কিন্তু তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, আলোচনা শুরুর জন্য সরকারের পক্ষে কোনও আবেদনই আসেনি। কাল সকালে বিরোধী দলগুলি আবার বৈঠক করবে। রাষ্ট্রপতির কাছে কবে যাওয়া হবে, তা নিয়েও কথা হবে। বিরোধীদের একাংশের আশঙ্কা, নবীন পট্টনায়কের দল বিজেডিকে দিয়ে আসলে বিরোধীদের ঐক্য ভাঙার চেষ্টা করছে সরকার পক্ষ। তবে সেটি হবে না। আজই স্থির হয়েছে, বিরোধীরা একযোগে আন্দোলন তীব্র করবে। সব দলের মুখপাত্ররা প্রচার করবেন। সোশ্যাল মিডিয়াতেও সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা হবে।
তবে কংগ্রেস নেতৃত্ব চাইছেন, এক বার সরকার আলোচনা শুরু করে দিলে রাহুল গাঁধী বক্তৃতা করুন। অন্য দলের প্রধান বক্তারাও তাঁদের কথা বলে নিন। তার পর ফের কোনও অছিলায় হল্লা করে লোকসভা স্তব্ধ করে দেওয়া যাবে। রাজ্যসভা এখনও সচল করার কোনও পরিকল্পনা নেই। প্রধানমন্ত্রী সব বিরোধী নেতাদের কালো টাকার ধারক বলায় তাঁকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি লাগাতার তুলে যাওয়া হবে। সরকারের কাছে পাল্টা আশঙ্কার বিষয়টি হল, ডিসেম্বরে পণ্য ও পরিষেবা বিল পাশ করাতে হবে। তার আগে সংসদ সচল না-হলে খুবই সমস্যা।