অমিতাভ ঠাকুর
পুলিশ অফিসারের অভিযোগ মুলায়ম সিংহের বিরুদ্ধে। আর তার পরেই নাকি ‘রিটার্ন গিফট’ এসেছে ধর্ষণের অভিযোগে। উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে এই নাটকীয় ঘটনায় এখন হাতে নতুন অস্ত্র পেয়ে গেল বিজেপি। সংসদের অধিবেশনে বিভিন্ন বিল পাশের ক্ষেত্রে মুলায়ম সিংহের সমর্থন পেতে চাপ বজায় রাখার জন্য এই অস্ত্র ব্যবহার করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ঘটনার সূত্রপাত উত্তরপ্রদেশের আইপিএস অফিসার অমিতাভ ঠাকুরের ফাঁস করা এক টেলি-কথোপকথনের অডিও ক্লিপিং নিয়ে। ঠাকুরের অভিযোগ, ‘নেতাজি’ মুলায়ম সিংহ তাঁকে হুমকি দিয়েছেন ফোনে। অমিতাভ ঠাকুরের স্ত্রী নূতন রাজ্যের খনিমন্ত্রী গায়ত্রী প্রসাদ প্রজাপতির বিরুদ্ধে এফআইআর করেছেন। তার পরেই নাকি মুলায়ম ফোনে একটু সমঝে চলার পরামর্শ দেন আইপিএস অফিসারকে। স্মরণ করিয়ে দেন, সমাজবাদী পার্টির বিধায়ক রামবীর কী ভাবে হামলা করেছিলেন অমিতাভের উপরে। টেলিফোনে এই কথোপকথন ফাঁস করে থানায় সটান মুলায়মের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন আইপিএস অফিসারটি। আর তার চব্বিশ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই অমিতাভের বিরুদ্ধে পাল্টা এফআইআর হয়েছে এক ধর্ষণের মামলায়। মুলায়মের বিরুদ্ধে এখনও এফআইআর হয়নি। কিন্তু অমিতাভের বিরুদ্ধে পুরনো ধর্ষণের অভিযোগে এফআইআর হয়ে গেল চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই।
খোদ অমিতাভ ঠাকুরই বলছেন, ‘‘আমি কাল নেতাজির হুমকি দেওয়ার অডিও ফাঁস করে দিয়েছি। আজ নেতাজির থেকে রিটার্ন গিফট এল।’’ তাঁর দাবি, গোটা ঘটনার সিবিআই তদন্ত করা হোক। তাতেই প্রমাণ হয়ে যাবে, টেলিফোনে মুলায়মের হুমকি সত্যি কিনা। আর ধর্ষণের অভিযোগেও কতটা সত্যতা রয়েছে। এখনও পর্যন্ত মুলায়মের পক্ষ থেকে গোটা ঘটনার কোনও প্রতিক্রিয়া আসেনি। কিন্তু সমাজবাদী পার্টির পক্ষ থেকে সি পি রাই জানিয়েছেন, ‘‘নেতাজি ফোন করে আদৌ হুমকি দেননি। আর আইপিএস অফিসারের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগও কোনও বদলার রাজনীতি নয়। গত ডিসেম্বরেই এই অভিযোগ উঠেছিল। গোটা বিষয়টি তদন্ত করে পুলিশ আজ এফআইআর করেছে। যদি দুটি ঘটনার মধ্যে সামঞ্জস্য আপাত ভাবে দেখা যায়, সেটি নিছকই কাকতলীয়।’’
কিন্তু সমাজবাদী পার্টি যতই ব্যাখ্যা দিক, সংসদের অধিবেশনের আগে এই ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে বিজেপি। ক’দিন আগে উত্তরপ্রদেশে পুলিশের হাতে এক সাংবাদিকের মৃত্যুর ঘটনায় বড়সড় করে প্রতিবাদ করতে চেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু সুষমা-বসুন্ধরা থেকে ব্যপম কাণ্ডে নিজেরাই এমন হিমশিম খাচ্ছিল, যে পাল্টা অভিযোগ করার সুযোগ পায়নি দল। বিজেপি নেতৃত্ব চান, তাঁদের বিরুদ্ধে যে ভাবে বিরোধী দলের একটি জোট তৈরি হয়েছে, সেটিকে ছত্রভঙ্গ করতে। অমিতাভ ঠাকুরের মামলাটি সেই সুযোগটি করে দিল বলে মনে করা হচ্ছে। আইপিএস অফিসারদের লবি যথেষ্টই শক্তিশালী। যে ভাবে উত্তরপ্রদেশে থেকে অমিতাভ ঠাকুর সরাসরি শাসক দলের সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে সম্মুখ সমরে নেমেছেন, তাতেও দিল্লির মদত থাকতে পারে বলেই মনে করছেন অনেকে। তাঁদের মতে, দিল্লির মদতের কারণেই মামলার তদন্তের ভার সরাসরি সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন অমিতাভ।
প্রকাশ্যে অবশ্য বিজেপি এই মনোভাব দেখাতে চাইছে না। দলের মুখপাত্র নলিন কোহলি বলেন, ‘‘মুলায়ম সিংহ বড় মাপের নেতা। তাঁর বিরুদ্ধে এই ধরনের কোনও অভিযোগ আসুক, তা কাঙ্ক্ষিত নয়। কিন্তু মুলায়ম সিংহ এক অফিসারকে ফোন করবেন, আর সেটি রেকর্ড করার কথা সেই অফিসার ভাববেন, তার মানে তো স্পষ্ট যে আগে থেকেই অফিসারের মনে শঙ্কা ছিল।’’ কোহলির কথায়, ‘‘কল রেকর্ড দেখে অনায়াসেই তো বলা যায়, মুলায়মের কাছ থেকেই ফোন এসেছিল কি না। এটি তো এমন কোনও জটিল বিষয়ও নয়।’’