সাফল্যের স্বাদ, বাংলা সমেত সর্বত্রই এ বার ‘একলা চলো’

শিবসেনার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর মহারাষ্ট্রে একক ভাবে সরকার গড়ার ম্যাজিক নম্বর ছুঁতে পারল না বিজেপি। কিন্তু এর পরেও নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ মনে করছেন ভোটের আগে এই বিচ্ছেদের রণকৌশল ভুল ছিল না। বরং ওই কৌশলে মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে বিজেপির লাভ ষোলো আনার উপরে আঠারো আনা। এবং এই কারণেই মোদী-অমিত পরবর্তী স্তরে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, বিহার এমনকী জম্মু-কাশ্মীরের নির্বাচনেও ‘একলা চলো’র রণকৌশল থেকে সরে আসছেন না।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:০৯
Share:

শিবসেনার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর মহারাষ্ট্রে একক ভাবে সরকার গড়ার ম্যাজিক নম্বর ছুঁতে পারল না বিজেপি। কিন্তু এর পরেও নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ মনে করছেন ভোটের আগে এই বিচ্ছেদের রণকৌশল ভুল ছিল না। বরং ওই কৌশলে মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে বিজেপির লাভ ষোলো আনার উপরে আঠারো আনা।

Advertisement

এবং এই কারণেই মোদী-অমিত পরবর্তী স্তরে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, বিহার এমনকী জম্মু-কাশ্মীরের নির্বাচনেও ‘একলা চলো’র রণকৌশল থেকে সরে আসছেন না। বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধার্থনারায়ণ সিংহ বলেন, “২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে আমরা ‘একলা চলো’ নীতিতে অবিচল থাকব।”

বিজেপি সূত্র বলছে, কাশ্মীরে ওমর আবদুল্লাকে সরানোর জন্য বিজেপির সঙ্গে পরোক্ষ সমঝোতায় যেতে রাজি পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি। কিন্তু বিজেপির নজর জম্মুতে নিজেদের আসন সংখ্যা বাড়ানোর দিকে এবং সেই লক্ষ্যে তারা সেখানেও ‘একলা চলো’ নীতিতেই চলার ব্যাপারে অনড়। আসলে শিবসেনা-সঙ্গ ছেড়েও এ বারে মরাঠা-ভূমিতে যে ভাবে বিজেপির বিজয়রথ ছুটেছে, তাতে আগামী দিনে সর্বত্রই একা লড়ে ভাল ফল করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী বিজেপি নেতৃত্ব। মহারাষ্ট্রে গত বার বিজেপির আসন সংখ্যা ছিল ৪৬। সেটি এ বারে এক লাফে বেড়ে হয়েছে ১২২। মহারাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা রাজীবপ্রতাপ রুডির বক্তব্য, আগে জোট-ধর্ম পালনের জন্য মহারাষ্ট্রের ২৮৮ আসনের মধ্যে শ’খানেক আসনে লড়ত বিজেপি। এ বারে একক ভাবে দু’শোর কাছাকাছি আসনে লড়ে ১২২টি আসনে জয় তাই বিশেষ ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। বিজেপির সূত্র বলছে, দলের ভোট ২৪ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ২৯ শতাংশ।

Advertisement

মোদী-অমিত শাহ কী চাইছেন?

চাইছেন, স্বাধীনতার পরবর্তী দশকে দেশ জুড়ে কংগ্রেস যে রকম আধিপত্য বিস্তার করেছিল, বিজেপিরও তেমন আধিপত্য কায়েম হোক। নেহরুর মৃত্যুর পর ’৬৭ সালের নির্বাচনে প্রথম ধাক্কা খায় কংগ্রেস। প্রায় দশটি রাজ্যে ক্ষমতাচ্যুত হয় তারা। এর পর ’৭৭ ও ’৮৯ সালেও কংগ্রেস ধরাশায়ী হয়েছে। কংগ্রেসের এই অবক্ষয়ে কিন্তু বিকাশ হয়েছে বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের। যা মেনে নিয়ে লালকৃষ্ণ আডবাণী বলেন, “কংগ্রেসের অধোগতির অনুপাতে বিজেপির বৃদ্ধি হয়নি। ফলে বাজপেয়ী জমানায় শরিক দলের সাহায্য নিয়ে সরকার গড়তে হয়েছিল।” সেই পরিস্থিতি আর চান না বিজেপি নেতৃত্ব। বিষয়টি স্পষ্ট করে অমিত শাহ বলছেন, “বিজেপির ইতিহাসে এই প্রথম লোকসভায় ২৮২টি আসন পেয়েছে দল। তা হলে দলের সভাপতি হিসেবে রাজ্যগুলিতে একক ভাবে বিজেপির শক্তিবৃদ্ধি করাই কি আমার দায়িত্ব নয়?”

মহারাষ্ট্রে নির্বাচনের ফলাফল দেখে বিজেপির কিছু নেতা বলছেন, শিবসেনার সঙ্গে জোট না ভাঙলে আরও ভাল ফল হতো। পঁচিশ বছরের ওই সম্পর্ক ভেঙে দেওয়া ঠিক হয়নি। লালকৃষ্ণ আডবাণীও প্রকাশ্যে ওই মত ব্যক্ত করেছেন। শিবসেনার মনোহর জোশী-র মতো নেতারাও একই মতে বিশ্বাসী।

কিন্তু বিজেপির বক্তব্য হল, পঁচিশ বছর আগে যখন বোঝাপড়া হয়, তখন মহারাষ্ট্রে এক নম্বর দল ছিল শিবসেনা। তখন তার দোসর ছিল বিজেপি। সে সময় মরাঠি ভোটব্যাঙ্কের নিয়ন্ত্রণ ছিল শিবসেনার হাতে। কিন্তু এ বারের নির্বাচনে শিবসেনার সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে মহারাষ্ট্রের এক নম্বর দলে পরিণত হয়েছে বিজেপি। আর শিবসেনা পরিণত হয়েছে ছোট দলে! যা থেকে স্পষ্ট, মহরাষ্ট্রের ‘মরাঠি অস্মিতা’র দখল নিতে সফল বিজেপি। দলের নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, “মহারাষ্ট্রে সরকার গড়াটাই একমাত্র লক্ষ্য নয়। সেখানে বিজেপির রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা পাওয়াটাও দলের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যে বিজেপি অনেক বেশি লাভবান হয়েছে। এই কারণে বিজেপি তার একলা চলো রণকৌশলে কোনও পরিবর্তন আনতে চায় না।”

নির্বাচনের আগে বিজেপি ও শিবসেনার জোট গড়া নিয়ে যখন টানাপড়েন চলছে, ঠিক তখনই একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল কংগ্রেস ও এনসিপি জোটেও। দু’টি ঘটনাই ছিল পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত। আরএসএস নেতারা মনে করছেন, বিজেপি শিবসেনার সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ না করলে কংগ্রেস ও এনসিপি-র জোটে কোনও ভাবেই ভাঙন হতো না। বিজেপি নেতারাও মনে করছেন, এনসিপি ও কংগ্রেসের মধ্যে জোট ভেঙে যাওয়ায় খারাপ ফল করেছে দু’দলই। দু’পক্ষের কেবল আসনই কমেনি, ভোট শতাংশও কমেছে। পরিবর্তে বিজেপির মতোই লোকসভার তুলনায় ভোট শতাংশ বেড়েছে শিবসেনারও।

বিজেপি নেতৃত্ব নীতিগত ভাবে ‘একলা চলো’ নীতি নিলেও নির্বাচনের সময়েও বিজেপি ও শিবসেনা দু’দলের নেতারাই একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত বিরূপ মন্তব্য সে ভাবে করেননি। শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে মোদীকে চা-ওয়ালা বললেও পরে পিছিয়ে যান। মোদীও নির্বাচনী সভায় গিয়ে বলেন, বাল ঠাকরকে তিনি শ্রদ্ধা করেন। তাই শিবসেনার বিরুদ্ধে কিছু বলবেন না। ফলে সব মিলিয়ে জোট ভাঙলেও কোথাও একটি ‘ট্র্যাক টু’ খোলা রেখেছিল দু’পক্ষই। আগামী দিনে সরকার গড়ার প্রশ্নে সেই ‘ট্র্যাক টু’ কাজে লাগে কিনা, সেটাই এখন দেখার। তবে সে ভাবে সেনার সমর্থনে সরকার গঠন হলেও একলা চলার নীতি থেকে সরবে না বিজেপি। দলেরই একাধিক নেতা বলছেন, “ভোটের আগে জোট হলে আলাদা কথা। কিন্তু ভোটের পরে এই জোট তো সমঝোতার সহাবস্থান। আমরা পৃথকই থাকব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন