ঠাকরে ভাইদের দ্বন্দ্বে লাভ খুঁজছে বিজেপি

রাজ ঠাকরের কাছে আত্মসমর্পণ করে কর্ণ জোহর তাঁর মুশকিল আসান করেছেন। বলিউডও আপন প্রাণ বাঁচাতে মুচলেকা দিয়েছে। কিন্তু মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার নায়ক বলতেই পারেন, ছবি এখনও বাকি!

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:০৫
Share:

রাজ ঠাকরে ও উদ্ধব ঠাকরে

রাজ ঠাকরের কাছে আত্মসমর্পণ করে কর্ণ জোহর তাঁর মুশকিল আসান করেছেন। বলিউডও আপন প্রাণ বাঁচাতে মুচলেকা দিয়েছে। কিন্তু মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার নায়ক বলতেই পারেন, ছবি এখনও বাকি!

Advertisement

ঘটনা হল, মহারাষ্ট্রে রাজ বনাম উদ্ধব ঠাকরের সংঘাত জমে উঠেছে এবং বিজেপি সেটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। শিবসেনার প্রধান উদ্ধব ঠাকরে গত কালই পানজিমে গিয়ে বিজেপি-র দাদাগিরির তীব্র সমালোচনা করেন। আর গত কালই রাজ ঠাকরের সঙ্গে কর্ণ জোহরের বৈঠক করে আপস করিয়েছেন মহারাষ্ট্রের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবীশ। যার ফলে সহজ হয়েছে ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’ ছবির মুক্তি। ঠিক এমন একটা পরিস্থিতিতে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের রণকৌশল হল, রাজ ঠাকরের নেতৃত্বকে উস্কে গিয়ে উদ্ধবের শিবসেনাকে দুর্বল করা, এমনকী ভাঙারও চেষ্টা। সে ক্ষেত্রে উদ্ধবকে ছেড়ে বিজেপি রাজের সঙ্গে বোঝাপড়ায় যেতে পারে।

উদ্ধব বিজেপি-র এই পরিকল্পনা ক্রমশ টের পাচ্ছেন। তিনি বিজেপি-র শীর্ষ নেতাদের কাছে এমন অভিযোগও করেছেন যে, রাজ্য বিজেপি-র কিছু নেতা অর্থবল প্রয়োগ করেও শিবসেনার বিধায়কদের ভাঙানোর চেষ্টা করছেন। বিজেপি সূত্র বলছে, নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা আছে রাজের। কিন্তু বিধায়ক নেই। আর উদ্ধবের হাতে বিধায়ক আছে, কিন্তু নেতৃত্বের সঙ্কট চরমে। মরাঠি মানুষের উপর তাঁর নিয়ন্ত্রণও কমছে।

Advertisement

আগামী নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মহারাষ্ট্রে দুশোর বেশি পুরসভায় নির্বাচন। রাজ্যের রাজনীতিতে পুরভোট একটা বিরাট তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। বিশেষ করে মুম্বই পুরভোট। এই পুরসভার বাজেট কেরলের রাজ্য বাজেটের চেয়ে বেশি অঙ্কের। মুম্বই পুরসভায় রাজ ঠাকরের বেশ কিছু কাউন্সিলর রয়েছে। আপাতত তাঁকে কাজে লাগিয়ে পুরভোটে শিবসেনাকে কোণঠাসা করতে চাইছে বিজেপি। এ নিয়ে উদ্ধব তাঁর ক্ষোভ খোলাখুলি জানাচ্ছেন। এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে এ বার পুরভোটে শিবসেনা-বিজেপি-র বোঝাপড়া হওয়ার সম্ভাবনাও বেশ কঠিন।

২০১৪ সালের শেষে বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপি-শিবসেনার দীর্ঘদিনের জোট ভেঙে যায়। ভোটে কোনও দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত দুই দলের শরিকি সরকার তৈরি হয় ঠিকই, কিন্তু গত দু’বছরে ক্রমাগত ঠান্ডা লড়াই চলেছে। সেনা-বিজেপি টানাপড়েন অবশ্য নতুন নয়। অতীতে বাজপেয়ী-আডবাণীরা শিবসেনা প্রধান বাল ঠাকরের সঙ্গে আপস করে মহারাষ্ট্রে তাঁকে রাজনৈতিক জমিটা ছেড়ে দিতেন। এখন মোদী-অমিত শাহ জমানায় কেন্দ্রে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরে বিজেপি গোটা দেশে তার নিজের ক্ষমতা এবং সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে মরিয়া। এ কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণাও করেছেন অমিত শাহ। বিজেপি-র মরাঠি নেতা প্রকাশ জাভড়েকরও বলেছেন, বিজেপি যখন কাশ্মীরেও দলীয় সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে তৎপর, তখন মহারাষ্ট্রে দলের নিজের সাংগঠনিক শক্তি আমরা বাড়াতে চাইব— সেটাই তো স্বাভাবিক।

অতীতে যখন শিবসেনার নেতৃত্ব নিয়ে উদ্ধব আর রাজের মধ্যে লড়াই শুরু হয়, তখন বাজপেয়ী-আডবাণীকে প্রমোদ মহাজন পরামর্শ দিয়েছিলেন, বিজেপির যাওয়া উচিত রাজের সঙ্গেই। কেননা মরাঠি স্বার্থের রক্ষাকর্তা হিসেবে বাল ঠাকরের জঙ্গি রাজনৈতিক লাইনটির উত্তরাধিকার ছেলের থেকে ভাইপোর বেশি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য শিবসেনার নিয়ন্ত্রণ থাকে ছেলের হাতেই। পৃথক দল গড়েন রাজ।

এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিজেপি তাঁর হাত ধরতে চাওয়া অসম্ভব কিছু নয়। বরং তার একাধিক কারণ আছে। প্রথমত উদ্ধব নানা ভাবে মোদী এবং মহারাষ্ট্র সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছেন। তাঁর চাহিদার শেষ নেই। বাজপেয়ী-আডবাণী সে সব সহ্য করলেও মোদী-অমিত শাহ সহ্য করতে রাজি নন। শিবসেনাও এনডিএ-র তোয়াক্কা না করে বিজেপি-বিরোধী অবস্থান নিচ্ছে অনেক ব্যাপারে। দ্বিতীয়ত, চিরকাল শিবসেনার প্রধান ভোট ব্যাঙ্ক ছিল মরাঠি মানুষ। বিজেপি হয়ে উঠেছিল গুজরাতি, মারোয়াড়ি ইত্যাদি অ-মরাঠি নানা জনগোষ্ঠীর দল। এর ফলে ভোট ব্যাঙ্কের সমন্বয় নিয়ে কোনও সমস্যা হয়নি। এখন উদ্ধবের দুর্বলতায় মরাঠা ভোট শিবসেনা থেকে সরে গেলে বিপদ বিজেপি-রও হবে। কেননা বিজেপি পুরো মরাঠি ভোট করায়ত্ত করার অবস্থায় নেই। বরং শরদ পওয়ার শিবসেনার ভোট ব্যাঙ্কে ভাঙনের সুবিধে পেতে পারেন। সেখানে রাজকে দিয়ে সেই রাজনৈতিক পরিসর দখল করানো গেলে বিজেপি-র সুবিধা। তবে এ ব্যাপারে পাল্টা যুক্তি বিজেপি-র মধ্যেও রয়েছে। সেটা হল, বিজেপি মরাঠা ভোটের জন্য উদ্ধবের জায়গায় রাজের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লে দলের পক্ষে ভাল হবে কি?

নাগপুরে আরএসএস সদর দফতর কিন্তু শিবসেনা ও এমএনএসের দুই প্রধান নেতার উপরেই ক্ষুব্ধ। নাগপুরের এক সঙ্ঘ নেতার বক্তব্য, ওদের দু’জনেরই জীবনযাত্রা বদলে গিয়েছে। সকাল এগারোটার আগে ঘুম থেকে ওঠে না। প্রচণ্ড অলস। অমিত শাহ বা গড়কড়ী যে পরিশ্রম করেন, তার ধারেকাছেও নেই ওঁরা। তবে মোহন ভাগবত বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছেন, এ ব্যাপারে তাঁরা নাক গলাবেন না। বিজেপি যা ভাল মনে করে করুক।

বল তাই এখন রাজের কোর্টে। তিনি নিজের প্রভাব প্রতিপত্তি খাটিয়ে শিবসেনাকে ভাঙতে পারেন কি না, সেটাই দেখার। অখিলেশের সমাজবাদী পার্টির ভাঙনের দিকে যেমন রাহুল গাঁধী তাকিয়ে রয়েছেন, তেমনই মোদী-অমিত শাহ তাকিয়ে রয়েছেন রাজ ঠাকরের দিকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন